অবশেষে দিন ফুরিয়ে কালীপুজোর সন্ধে নামত এড়োয়ালীর বুকে। মেলার দোকানগুলোয় জ্বলে উঠত কার্বাইডের গ্যাসের আলো। এড়োলের লোকজন ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের মানুষের ভিড়ে পথ চলা দায়। কোথাও ‘জয় বাবা ধর্মমাল’-এর নামে চাকা ঘোরানো লটারিতে বিস্কুট কিংবা আস্ত নারকেল পাওয়ার ভিড়,
[পূর্বানুবৃত্তি : ফাল্গুন ১৪২৯ সংখ্যার পর] ।।৫।। আট অবশেষে দিন ফুরিয়ে কালীপুজোর সন্ধে নামত এড়োয়ালীর বুকে। মেলার দোকানগুলোয় জ্বলে উঠত কার্বাইডের গ্যাসের আলো। এড়োলের লোকজন ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের মানুষের ভিড়ে পথ চলা দায়। কোথাও ‘জয় বাবা ধর্মমাল’-এর নামে চাকা ঘোরানো লটারিতে বিস্কুট কিংবা আস্ত নারকেল পাওয়ার ভিড়, কোথাও কাঁচের চুড়ির দোকানে মেয়েদের বেলোয়ারি হাসি-রঙ্গরসিকতা, আবার কোথাও ম্যাজিকের জমজমাট আসর। এছাড়া তেলেভাজা-বাদামভাজা, মিষ্টির দোকানের ভিড় তো আছেই। ‘সন্ধ্যাজল’ নামে জাদুকরদের গ্রাম থেকে জাদুকরেরা আসত ম্যাজিক দেখাতে। বললে বড় কথা মনে হবে, তবু না বললে নয়—এড়োলের কালীপুজোর মেলায় হতদরিদ্র জাদুকর হকসেদ শেখের ম্যাজিকের কথা কোনোদিনই ভোলা যাবে না। মঞ্চ, আলো, বাজনা এবং বিভিন্ন যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই সম্পূর্ণ খোলা জায়গায় যে ওরকম ম্যাজিক দেখানো যায় তা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। গ্রামে বিদ্যুৎ নেই। আজকের দিনের জেনারেটারই বা তখন কোথায়? কাজেই গাঁয়ের অলিগলিতে আর পুজোতলাগুলোকে ঘিরে জ্বেলে দেওয়া হতো বড় বড় মশাল (কালীঘরগুলোয় অবশ্য একাধিক হ্যাজাক জ্বলত)। অমাবস্যার অন্ধকারে দাউদাউ করে জ্বলা অসংখ্য মশালের কম্পমান রাঙা আলোর আলো-আঁধারিতে এড়োল গ্রাম জুড়ে এক আদিম রাত নেমে আসতে চাইত, যার আদিমতা বাড়তে থাকত রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। একদিকে কালীঘরগুলোতে প্রতিমার বেদির সামনে সারি দিয়ে সাজানো থাকত ‘কারণবারি’; কারণ এটি ছাড়া তন্ত্রমতে কালীপুজো হয় না। সত্যি বলতে কী, কিছু ব্যতিক্রমী মানুষ ছাড়া যে-পুরুষ নিজের পায়ে খাড়া হতে শিখেছে আর যে এখনো নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে—তারা সবাই সে-রাতে দ্রব্যগুণে রাজীবলোচন! বহু বছর আগে কোনো এক চৈত্রদিনের মাতাল হাওয়ায় মদের ভাটির আগুনের ফুলকি থেকে প্রায় গোটা গাঁ পুড়ে গিয়েছিল। গ্রামের লোক-কবিয়াল দীনতারণ বা ‘দিনতারা হাড়ি’ সেই নিয়ে গানও বেঁধেছিল—“ও তোদের মদের ভাটি কাল হল্যো,/ছেল্যা বুড়ো সব পুড়্যে মল্যো।” সেই থেকে এড়োয়ালীতে মদ চোলাই মোটামুটিভাবে বন্ধই হয়ে যায়। তাই মূল জোগানটা আসত পাশের গ্রাম থেকে। মাঝরাতের কিছু আগে রাজা রামজীবন রায়ের বংশধরদের গায়ে উঠত প্রায় বাতিল হয়ে যাওয়া দামি...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹100/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in