দেবীর সঙ্গে ভয়ংকর যুদ্ধে রক্তবীজ ও নিশুম্ভাসুর নিহত হইয়াছে। সৈন্যবলও বিনষ্টপ্রায়, নিজ প্রাণতুল্য

দেবীর সঙ্গে ভয়ংকর যুদ্ধে রক্তবীজ ও নিশুম্ভাসুর নিহত হইয়াছে। সৈন্যবলও বিনষ্টপ্রায়, নিজ প্রাণতুল্য ভ্রাতাকে নিহত দেখিয়া শুম্ভাসুর ক্রোধান্বিত হইলেন। মহামায়ার সম্মুখে আসিয়া শুম্ভাসুর বলিলেন : “হে বলগর্বে উদ্ধত দুর্গা, তুমি গর্ব করিও না। অতিগরবিনি হইয়া তুমি অন্য দেবীগণের শক্তি আশ্রয় করিয়া যুদ্ধ করিতেছ।” আপাতভাবে আমাদিগের মনে হইতে পারে, শুম্ভের এই শ্লেষের মধ্যে সত্যতা রহিয়াছে। কেননা ব্রহ্মাণী প্রমুখ অষ্ট মাতৃকা রণ‌ক্ষেত্রে দেবীর লীলাসঙ্গিনীরূপে তাঁহার পার্শ্বে উপস্থিত থাকিয়া যুদ্ধ করিতেছিলেন। শুম্ভাসুরের শ্লেষবাক্যের উত্তরে দেবী বলিলেন : “একৈবাহং জগত্যত্র দ্বিতীয়া কা মমাপরা।/ পশ্যৈতা দুষ্ট ময্যেব বিশন্ত্যো মদ্‌বিভূতয়ঃ।।” অর্থাৎ, “এই জগতে আমি একাই আছি; আমি ভিন্ন আর দ্বিতীয় কে আছে? ওরে দুষ্ট, এই দেখ, এইসকল আমারই বিভূতি, আমাতেই এরা বিলীন হইতেছে।” দেবীর এই উত্তরের এক অন্তর্নিহিত তাৎপর্য রহিয়াছে। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত কিছু ব্যাপিয়া যে-সত্তা রহিয়াছে এবং সমস্ত প্রাণীর চেতনারূপেযাহা প্রতিভাত হইয়াছে ও হইতেছে, সেই সমুদয়ের মিলিত রূপের প্রকাশই ‘মহামায়া’। তিনি সর্বব্যাপিনী। সৃষ্টির পূর্বে স্থূলজগৎ যখন অব্যাকৃত অবস্থায় ছিল, তখনো এই মহামায়াই একমাত্র বিদ্যমান ছিলেন। সমগ্র জগৎ তখন মহামায়াতেই লীন হইয়া ছিল, সুপ্ত অবস্থায় ছিল। তাই চণ্ডীতে দেবগণ বলিয়াছেন—‘অব্যাকৃতা হি পরমা প্রকৃতিস্ত্বমাদ্যা’—তুমিই বিকার-রহিতা আদিভূতা পরমা প্রকৃতি। তিনি সমস্ত জগতের মূল কারণ। ‘বিসৃষ্টৌ সৃষ্টিরূপা ত্বং’—তুমিই এই জগৎ সৃষ্টি করিয়াছ। শুধু সৃষ্টি নহে, স্থিতিরূপা হইয়া তিনি এই জগৎকে প্রতিপালন করেন—‘স্থিতিরূপা চ পালনে’। অন্তকালে জগৎস্বরূপা তিনিই সংহাররূপা, এই দৃশ্যমান জগৎকে তিনিই বিনাশ করেন। এই জন্যই মেধস ঋষি বলিয়াছেন : “ব্যাপ্তং তয়ৈতৎ সকলং ব্রহ্মাণ্ডং মনুজেশ্বর।/ মহাকাল্যা মহাকালে মহামারীস্বরূপয়া।।/ সৈব কালে মহামারী সৈব সৃষ্টির্ভবত্যজা।/ স্থিতিং করোতি ভূতানাং সৈব কালে সনাতনী।।” অর্থাৎ “হে রাজন! মহাপ্রলয়কালে সেই মহাকালী মহামারীরূপে এই নিখিল ব্রহ্মাণ্ড ব্যাপ্ত করিয়া থাকেন। তিনিই প্রলয়কালে মহামারী হন, জন্মরহিত হইয়াও তিনিই সৃষ্টিরূপা হন এবং নিত্যা হইয়াও তিনি স্থিতিকালে সর্বভূতের পালন করিয়া থাকেন।” মহামায়া হইতেই এই জগতের উৎপত্তি, তাই তিনি জগজ্জননী। মহামায়া সনাতনী, শক্তিরূপা, গুণময়ী। তিনি এক, শুধু তাঁহার প্রকাশ বিভিন্ন। জগৎকে তিনি ধারণ করিয়া রহিয়াছেন,...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in