মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারি থেকে নদী পার হয়ে এলে ডাহাপাড়া গ্রাম, তার ১ কিলোমিটার দূরে কিরীট কোণা।
মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারি থেকে নদী পার হয়ে এলে ডাহাপাড়া গ্রাম, তার ১ কিলোমিটার দূরে কিরীট কোণা। গ্রামের নাম ‘বটনগর’ বা ‘বড়নগর’। পৌরাণিক কাহিনি—মহাদেব যখন সতীর দেহ নিয়ে সৃষ্টি লয় করতে চলেছিলেন, তখন বিষ্ণুর চক্রদ্বারা কর্তিত হয়ে সতীর দেহখণ্ডগুলি সারা ভারতের (প্রধানত উত্তরভারতে) ছড়িয়ে পড়ে। এই স্থানেই পড়েছিল সতীর কিরীট বা মুকুট-সংবলিত কপালের ঊর্ধ্বভাগ। মুকুটের অপভ্রংশ হিসাবে এই গ্রাম ‘মাকোট’ নামেও পরিচিত। দেবীভাগবত-এর অন্তর্গত ‘দেবীগীতা’য় মুকুটেশ্বরী নামটির উল্লেখ আছে। এখানে দেবীর কোনো অঙ্গ না পড়ায় এটিকে উপপীঠ বলেও অভিহিত করেছেন অনেকে। তবে কিরীট (‘temple’) প্রকৃতপক্ষে কপাল ও মস্তকের সংযোগস্থল। এই অংশটিই এখানে শিলারূপে পূজিত হয়। শিবচরিত অনুযায়ী এই দেবীর নাম ‘ভুবনেশী’, ভৈরবের নাম ‘কিরীটী’। মতান্তরে এই মহাপীঠের অধিষ্ঠাত্রী দেবীর নাম ‘বিমলা’ ও ভৈরব হলেন ‘সংবর্ত’। আবার ভৈরব ‘সিদ্ধিরূপ’ বা ‘সিদ্ধরূপ’ বলেও পরিচিত। পীঠনির্ণয় গ্রন্থে বলা হয়েছে— “ভুবনেশী সিদ্ধিরূপা কিরীটস্থা কিরীটতঃ।দেবতা বিমলা নাম্নী সম্বর্তো ভৈরবস্তথা।।” রায়গুণাকর ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল কাব্যগ্রন্থে উল্লেখ আছে— “কিরীটকোণায় পড়ে কিরীট স্বরূপ।ভুবনেশী দেবতা ভৈরব সিদ্ধরূপ।।” এই অতি প্রাচীন গ্রামের মধ্যে নতুন ও পুরানো দুটি মন্দির আছে। পুরানো মন্দিরটি অতি ভগ্নদশাপ্রাপ্ত। কিন্তু তার গঠনশৈলী, ছোট ছোট পাতলা ইটের তৈরি এবং মন্দিরগাত্রে কারুকার্য ছিল—এটা বোঝা যায়। নাটোরের (বর্তমান বাংলাদেশে) রানি ভবানী তাঁর কন্যার স্বামীর মৃত্যুর পর বড়নগর বা বটনগরে বসবাস করতে আসেন। রানি ভবানীর স্থাপিত ১০০টি বিরল টেরাকোটার কারুকার্যময় শিবমন্দিরের কয়েকটি এখনো এখানে বর্তমান। তাঁর স্বামী রমাকান্ত রায়ের মৃত্যুর পর দত্তক পুত্র রামকৃষ্ণ রায়কে রাজ্যের দায়িত্বভার দিয়ে নিজে মুর্শিদাবাদের গঙ্গাতীরে বসবাস করতে আসেন। রামকৃষ্ণ যোগিমনোভাবাপন্ন ছিলেন। তিনি কিরীটেশ্বরী মন্দিরে এসে পঞ্চমুণ্ডির আসন স্থাপন করেন। নিরন্তর সাধনা করেও তিনি মায়ের দেখা পাননি। একদিন অভিমানে উন্মত্ত হয়ে তিনি নিজের মৃত্যুপ্রার্থনা করেন। তখন দেবী তাঁকে দৈববাণী শোনান—“এখনো তোমার স্থান-কাল যথাযথ হয়নি। সময় হলেই তুমি আমার দর্শন পাবে বাবা।” এই ‘বাবা’ সম্বোধন শুনে তিনি শান্ত হলেন। তবে কোথায় মায়ের দর্শন পাবেন, তখনো তা বুঝতে পারেননি। দৈববাণী...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹100/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in
