সব লেখাই সমান মাপের আর সব লেখার জন্যই একজন লেখক পাঠকের কাছে স্মরণীয়—এমনটা প্রায় ঘটে না। একজন লেখকের সঙ্গে ওতপ্রোত হয়ে যায় বিশেষ কয়েকটি লেখা।

সব লেখাই সমান মাপের আর সব লেখার জন্যই একজন লেখক পাঠকের কাছে স্মরণীয়—এমনটা প্রায় ঘটে না। একজন লেখকের সঙ্গে ওতপ্রোত হয়ে যায় বিশেষ কয়েকটি লেখা। ‘কেদার রাজা’ কিংবা ‘বিপিনের সংসার’-এর তুলনায় নিশ্চয়ই বিভূতিভূষণ পাঠকপ্রিয় আরণ্যক বা পথের পাঁচালীর জন্য। হাঁসুলী বাঁকের উপকথা বা কবি বাদ দিয়ে খুব বেশি মানুষ কি পড়ে ওঠেন তারাশঙ্করের গন্না বেগম? মধুসূদনের ক্ষেত্রেও তাই-ই ঘটেছে। মেঘনাদবধ, বীরাঙ্গনা বা কৃষ্ণকুমারীর মতো অতি-পরিচিত রচনার আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে ব্রজাঙ্গনা বা মায়া-কানন। তাঁর দ্বিশতজন্মবর্ষে পৌঁছে, নতুন করে তাঁকে পড়তে বসলে এখন ঐ কম-পড়া লেখাগুলোর দিকেই বোধ করি একটু বেশি ঝোঁক দেওয়া দরকার। এই সূত্রে আমাদের পছন্দ এবং প্রয়োজনও বটে—‘চতুর্দশপদী কবিতাবলী’। ‘চতুর্দশপদী কবিতাবলী’র কাব্যত্ব সম্পর্কে মধুসূদনের প্রথম জীবনীকার যোগীন্দ্রনাথ বসু মোটেই অনুকূল মন্তব্য করেননি : “‘চতুর্দ্দশপদী-কবিতাবলী’ সৌন্দর্য্যে মধুসূদনের অন্যান্য কাব্য অপেক্ষা নিকৃষ্ট।”১ সেইসঙ্গে অবশ্য একথাও তিনি লিখেছিলেন : “মধুসূদনকে জানিতে হইলে,… তাঁহার ‘চতুর্দ্দশপদী কবিতাবলী’ পাঠ করিবার প্রয়োজন|”২ ‘মধুসূদনকে জানিতে হইলে’ কথাটা গুরুত্বপূর্ণ। কেন, তার সবিস্তার ব্যাখ্যা মিলবে পরবর্তিকালের জীবনীকারদের কারো কারো রচনায়। মধুসূদনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক জীবনীকার এবং কাব্য-বিশ্লেষক অধ্যাপক সুরেশচন্দ্র মৈত্র ‘চতুর্দশপদী কবিতাবলী’ সম্পর্কে লেখেন : “এতকাল মধু আত্ম-ভাবনাকে আর দশজনের ভাবনার ছায়াতলে রাখতেন। সর্বদা তারা পুরাণের বর্ম এঁটে চলত। এবার একেবারে সোজাসুজি নিজের কথা বলতে লাগলেন। পুরাণ বা ইতিহাসের সহায়তা পরিত্যক্ত হোল।”৩ মধুসূদনের সনেটকে অধ্যাপক মৈত্রর মনে হয়েছিল—‘কবির মনের দর্পণ’।৪ অন্যত্র তাঁর বক্তব্য আরো স্পষ্ট, আরো দিঙ্‌নির্দেশী—“মেঘনাদবধ, ব্রজাঙ্গনা, বীরাঙ্গনা মাইকেল-হৃদয়ের নানা মহলেরই তো দ্বার খুলেছে। যে মন গোপনচারী, ভীরু ও আত্মপরায়ণ, তার দুয়ার এতদিনও অর্গলবদ্ধ ছিল। চতুর্দশপদী কবিতাবলী সেই দ্বারের অর্গল উন্মোচন করেছে।”৫ আর শুধুমাত্র মধুসূদনের সনেট নিয়েই মনোজ্ঞ আলোচনা করলেন যিনি, সেই অধ্যাপক জগদীশ ভট্টাচার্যের মতামত—“আধুনিক বাংলা কাব্যের জন্মলগ্নে কবির আত্মকথার বাহন হিসাবে বাংলা সাহিত্যে সনেটের প্রবর্তন করলেন মহাকবি মধুসূদন। চতুর্দশপদী কবিতাবলীতেই কবি মধুসূদন নিজেকে উন্মীলিত করেছেন। চতুর্দশপদী তাঁর আত্মকথার বাহন। এই কাব্যগ্রন্থেই কবিমানসের মর্মকথা সম্যকভাবে ধরা পড়েছে।”৬ পূর্ববর্তী গুণী...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in