ঘাটে ঘাটে অগণিত পুণ্যার্থীর ভিড়। তারা ডুব দিয়ে চলেছে—একটা, তিনটে, পাঁচটা…। কেউ বুক
‘স্নান করে ধন্য মানি’ ঘাটে ঘাটে অগণিত পুণ্যার্থীর ভিড়। তারা ডুব দিয়ে চলেছে—একটা, তিনটে, পাঁচটা…। কেউ বুক অবধি জলে দাঁড়িয়ে জপ করছে। কেউ বা দীপ জ্বেলে অর্ঘ্য ভাসিয়ে দিয়েছে সবুজ পাতার দোনায় করে আর তাকিয়ে দেখছে যতদূর চোখ যায়। আবার কেউ হয়তো আঁজলা ভরে ভরে জল তুলে তর্পণ করছে প্রিয়জনের কথা মনে রেখে। স্থানে স্থানে সন্ন্যাসী, বৈরাগী, মহাত্মাদের ঘিরে বসেছে অনুগামীরা। কত কত অধ্যাত্মপ্রসঙ্গ হয়ে চলেছে! এরকম কি শুধু একদিন? একটানা দেড় মাস দুই মাস; মাইলের পর মাইল জুড়ে, সকাল নেই বিকাল নেই—একনাগাড়ে। ধূপ-গুগগুল-বিভূতির ভরাট গন্ধে চারিদিক জমজম করছে। অনবরত প্রার্থনা কোলাহলের রূপ নিলেও তা প্রাণকে তন্ময় করে রাখছে। সন্ন্যাসীদের শোভাযাত্রায় পথচলা থেমে গেলেও তা মনকে উদ্বিগ্ন না করে শান্ত ও বৈরাগ্যময় করে তুলছে। আসলে এ যে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ লোক-সমাবেশ। এ যে মহাকুম্ভযোগ। আধ্যাত্মিকতার প্লাবনে আরাধ্যের স্পর্শ পেয়ে যেন জেগে উঠেছে জনগণ। এখন নদীস্রোত অমৃতধারা। মরদেহে যে অমর সত্তা নিবাস করেন—তাঁকে লাভ করতেই অমৃতকুম্ভে স্নানের আকর্ষণ। শ্রীরামকৃষ্ণ বলছেন : “কি জানো, অমৃতকুণ্ডে কোনও রকমে পড়া। তা স্তব করেই হোক অথবা কেউ ধাক্কা মেরেছে আর তুমি কুণ্ডে পড়ে গেছ, একই ফল। দুই জনেই অমর হবে!”১ আবার ‘তীর্থীকুর্বন্তি তীর্থানি’।২ তাই কুম্ভের পবিত্রতায় মানুষ অমৃতের সন্ধান পেতে ফিরে ফিরে আসে, নাকি অযুত মানুষের একীভূত আরাধনায় স্নানযোগ অমৃতকুম্ভ হয়ে যায়—তার নির্ণয় কে করবে! হয়তো একটি অন্যটিকে প্রভাবিত করে চলেছে দূর অতীতের অচেনা গহ্বর থেকে। আজ আর উভয়কে পৃথক করা সম্ভব নয়। তবু মানবিক তাগিদে কুম্ভমেলার শিকড় অনুসন্ধান করতে যতদূর সম্ভব যত্নবান হব আমরা। ‘সুপবিত্র ছন্দ-মাঝে’ যা বড় আদরের তা অতি আপনার। ভারতীয় শাস্ত্রে প্রিয়কে তাই কত পুরাণকথায় সাজিয়ে, কত সাহিত্যের উপমায় ঢেকে, কত প্রতীকের ঘোমটা পরিয়ে কবিরা আমাদের উপহার দিয়েছেন! যতই আমরা সেগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করি, ততই সব ইতিহাস, বিজ্ঞান, ভূমিরূপের সুগন্ধ মেলে। সযত্নে বের করে আনতে হয় বলে ধীরে ধীরে প্রিয় হয়ে ওঠে প্রিয়তর।...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹100/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in