রামায়ণ-এর উত্তরকাণ্ডে বর্ণিত শ্রীরামের কনিষ্ঠ ভ্রাতা শত্রুঘ্নের মথুরাজয়ের কাহিনি

রামায়ণ-এর উত্তরকাণ্ডে বর্ণিত শ্রীরামের কনিষ্ঠ ভ্রাতা শত্রুঘ্নের মথুরাজয়ের কাহিনি থেকেই ব্রজধামের লিখিত ইতিকথার প্রারম্ভ। সেখানে অবশ্য এর নাম ‘মধুপুর’ বা ‘শূরসেনপুরী’। পরবর্তিকালে ভক্তেরা বলেন ‘ব্রজমণ্ডল’। অনেকে ‘মথুরামণ্ডল’ও বলে থাকেন। বারোটি বন, বারোটি তীর্থ বা উপবন আর পাঁচটি স্থল নিয়ে যমুনার দুকূল জুড়ে এই ভূমণ্ডল—ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শৈশব ও কৈশোরের লীলাভূমি। পাশাপাশি এই ব্রজতীর্থের ধূলিকণায় মহাভাবময় লীলামনুষ্য শ্রীচৈতন্যদেব ও শ্রীরামকৃষ্ণের চরণচিহ্ন ধরা আছে। সেই ‘অপূর্ব-অনপর-অনন্তর-অবাহ্য’ বিরাট পুরুষবিধ শিশু অনন্ত অতলস্পর্শী প্রকৃিত-সমুদ্রসৈকতে ধুলোখেলা খেলতে খেলতে যখন নেমে আসেন এই ধূলিধূসরিত ধরাধামে, তখন সিন্ধু নেয় বিন্দুর আকার। বালার্কের প্রতিচ্ছবি যেমন ধরা পড়ে ঘাসের শিষের পরে শিশিরবিন্দুতে, তেমনি সেই কর্মকলেবর অদ্ভুতচেষ্ট নরদেবের উপস্থিতিতে আকাশের নীলিমায়, বনের শ্যামলতায়, ফুলের গন্ধে, বিজলীর চমকে, নদীর জলে, মেঘের সঞ্চারণায়, বর্ষার ধারায় খেলে যায় এক মাধুর্যমণ্ডিত প্রাণস্পর্শী ব্যঞ্জনা। মধুরাধিপতি শ্রীভগবানের মধুর স্পর্শে অখিল চরাচর হয়ে ওঠে মধুময়। অবতারের দেহমন যেমন ঘনীভূত চৈতন্যের বিলাসকেন্দ্র, তেমনি তাঁর লীলাস্থলীও ভক্ত-সাধক, পরিব্রাজক, সাধু-মহাত্মাদের কাছে তত্ত্বত চৈতন্যাত্মক—‘চিন্ময় শ্যাম, চিন্ময় ধাম’, সেই একই চৈতন্যের দ্যোতক। যে-পুণ্যস্থলীর আকাশে-বাতাসে জলে-স্থলে একদা ধ্বনিত হয়েছিল সেই বালক প্রভুর মিঠে বুলি, সুমধুর গান, অপ্রাকৃত লীলাকথা তা কি আজও শ্রুতিগোচর হয়? ভক্তহৃদয় কি মুকুলিত হয়ে ওঠে তাঁর সুন্দর দিব্যোজ্জ্বল উপস্থিতিতে? তবেই তো সেই অপার্থিব সান্নিধ্যলােভ সার্থকতা পায় এই পার্থিব জনম-জীবন। সেই আশে এই তীর্থে যুগে যুগে সাধক মহাপুরুষদের আবির্ভাব ও অবস্থান। শ্রীরামকৃেষ্ণর সন্ন্যাসী পার্ষদেরাও সে-ধারায় বিধৃত হয়েছেন, ধরা পড়েছেন এই প্রেমনগরীর ভগবৎপ্রেমে। ব্রজতীর্থে তাঁদের সেই সাধনকথারই তীর্থমধুপ হয়েছি আমরা। শ্রীরামকৃষ্ণের ষোলোজন সন্ন্যাসী পার্ষদের মধ্যে মাত্র তিনজন—স্বামী রামকৃষ্ণানন্দজী, স্বামী নিরঞ্জনানন্দজী ও স্বামী বিজ্ঞানানন্দজী ছাড়া সকলেই ব্রজধামে এসেছেন, করেছেন তীর্থবাস। এই ত্রয়োদশ পার্ষদমধ্যে সর্বপ্রথম এই তীর্থে আসেন কে? হয় রাখাল মহারাজ, নয়তো তারক মহারাজ। খুব সম্ভবত রাখাল মহারাজের পূর্বেই তারক মহারাজের ব্রজবাস হয়েছিল ভক্ত নিত্যগোপালের সঙ্গে। কেননা ৭ সেপ্টেম্বর ১৮৮৪-তে বৃন্দাবন দর্শন করে পবিত্র ব্রজরজ, তিলকমাটি এবং প্রসাদি ছোলাভাজা নিয়ে শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে উপস্থিত হয়েছিলেন...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in