বিশিষ্ট সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় রাধা গ্রন্থে লিখেছেন—ভগবান বিষ্ণুর দ্বাদশ ‘যাত্রা’র মধ্যে শ্রেষ্ঠ যাত্রা হলো রথযাত্রা।১ ওড়িশা ও বাংলার বুকে বৈষ্ণবীয় পরিমণ্ডলে অনুষ্ঠিত এই রথযাত্রা অনুষ্ঠান প্রকৃত অর্থেই উল্লেখযোগ্য।
বিশিষ্ট সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় রাধা গ্রন্থে লিখেছেন—ভগবান বিষ্ণুর দ্বাদশ ‘যাত্রা’র মধ্যে শ্রেষ্ঠ যাত্রা হলো রথযাত্রা।১ ওড়িশা ও বাংলার বুকে বৈষ্ণবীয় পরিমণ্ডলে অনুষ্ঠিত এই রথযাত্রা অনুষ্ঠান প্রকৃত অর্থেই উল্লেখযোগ্য। ওড়িশা ও বাংলায় যে রথযাত্রা আমরা দেখতে পাই তার কেন্দ্রীয় দেবতা হলেন জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরাম। কিন্তু চৈতন্যদেবের অন্যতম পার্ষদ এবং গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজের আচার্যস্থানীয় অদ্বৈত মহাপ্রভুর বিহারক্ষেত্র শ্রীপাট শান্তিপুরে তাঁরই অন্যতম বংশধর মথুরেশ গোস্বামী প্রতিষ্ঠিত ‘বড় গোস্বামী বাড়ি’তে রথযাত্রার প্রধান দেবতা হলেন ‘রঘুনাথ’রূপী রামচন্দ্র। জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরাম এখানে অনেকটাই গৌণ। আকার-আয়তনেও রঘুনাথ বিগ্রহ তুলনামূলকভাবে বড়। রথোৎসবে রঘুনাথ বিগ্রহের রামরথযাত্রা ও আষাঢ়ের নবমীতে বা ‘দেওড়া নবমী’তে তাঁর বিশেষ পূজা হয় শ্রীপাট শান্তিপুরে। এই বিশেষত্ব পশ্চিমবঙ্গের অন্য কোনো বৈষ্ণব শ্রীপাটের রথযাত্রায় পরিলক্ষিত হয় না। ওড়িশা তথা বাংলার জগন্নাথ-সংস্কৃতির মাঝে শান্তিপুরে এই রামসাধনার কারণ এবং তার সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রভাব বা প্রেক্ষিতটি আসলে কী, তা আমরা এই আলোচনার মাধ্যমে দেখে নেওয়ার চেষ্টা করব। শান্তিপুরে বর্তমানে অদ্বৈতাচার্যের বংশধরদের আটটি শ্রীপাট আছে—মদনগোপাল গোস্বামী বাড়ি, গোস্বামী ভট্টাচার্য বাড়ি, বড় গোস্বামী বাড়ি (অদ্বৈতের চতুর্থ পুত্র বলরামের ষষ্ঠ পুত্র মথুরেশের তিন পুত্রের তিনটি পাটবাড়ি; এটি বড় পুত্র রাঘবেন্দ্রের প্রতিষ্ঠিত), মধ্যম বা হাটখোলা গোস্বামী বাড়ি, চাকফেরা গোস্বামী বাড়ি, পাগলা গোস্বামী বাড়ি, বাঁশবুনিয়া গোস্বামী বাড়ি এবং বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী বাড়ি। উল্লেখ্য যে, মথুরেশ গোস্বামী রাজা প্রতাপাদিত্যের কৃষ্ণ-বিগ্রহের পূজারি ছিলেন। এই বিগ্রহ প্রথমে ওড়িশাধিপতি ইন্দ্রদ্যুম্ন কর্তৃক পুরীধামে ‘দোলগোবিন্দ’ নামে প্রতিষ্ঠিত ছিল। যশোররাজ বসন্ত রায়ের আদেশে তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র প্রতাপাদিত্য রায় এই বিগ্রহকে পুরী থেকে যশোরে আনেন। মানসিংহ যশোর আক্রমণ করলে মথুরেশ গোস্বামী বিগ্রহকে রাজ-ইচ্ছায় শান্তিপুরে নিয়ে আসেন। পরবর্তিকালে রাঘবেন্দ্র গোস্বামীর উত্তরপুরুষ বড় গোস্বামী এই বিগ্রহকে ‘রাধারমণ জীউ’ নামে প্রতিষ্ঠিত করেন।২ এই বাড়িতে রথোৎসবের প্রধান দেবতা হলেন নবদূর্বাদলশ্যাম রামচন্দ্র বা রঘুনাথ। দেবাদিদেব মহাদেব-কৃত শ্রীরামের স্তোত্রে রামচন্দ্রের রূপের সঙ্গে এই রঘুনাথ বিগ্রহের রূপ অভিন্ন—“নমোঽস্তু রামায় সশক্তিকায় নীলোৎপলশ্যামলকোমলায়। কিরীট-হারাঙ্গদভুষণায়, সিংহাসনস্থায় মহাপ্রভায়।।”৩ সর্বাঙ্গ শ্যামল, কর্ণমূল ও ওষ্ঠাধর লাল, লম্বা...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹100/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in