আমি পরম ভাগ্যবান, কারণ কিছু অসাধারণ মুহূর্ত স্বামী রামকৃষ্ণানন্দজীর সঙ্গে অতিবাহিত করেছি। যদিও ছয় দশক অতিক্রান্ত হয়ে গেছে, তবুও সেই স্মৃতিগুলি আমার হৃদয়ে এখনো একইভাবে সজীব।

বেলুড় মঠে আমেরিকায় রামকৃষ্ণ মিশনের কাজকর্মের সঙ্গে আটবছর যুক্ত থাকার পর ভারতবর্ষে এসে বেলুড় মঠে একজন অন্তেবাসী হিসাবে থাকা আমার পক্ষে সম্পূর্ণ নতুন এক অভিজ্ঞতা। বেলুড় মঠ রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান কার্যালয়, যেখান থেকে মঠ ও মিশনের সাধু-ব্রহ্মচারীদের কর্মীরূপে বিভিন্ন শাখাকেন্দ্রে পাঠানো হয়। আমেরিকায় বেদান্তপ্রচারের কাজ সুনির্দিষ্ট রূপ পরিগ্রহ করার আগে থেকেই আমি সমগ্র প্রক্রিয়াটির সাক্ষী ছিলাম। সেসময় নিউ ইয়র্ক শহরে কোনো এক অনুরাগীর বাড়িতে বেদান্তের জনা কয়েক ছাত্র সমবেত হতো সেখানে অবস্থানরত মহারাজের সঙ্গে দেখা করে প্রয়োজনীয় নির্দেশাদি গ্রহণ করার জন্য। আবার আজকের আমেরিকার যে বেদান্ত আন্দোলন অর্থাৎ অত্যন্ত সুসংগঠিত এক প্রতিষ্ঠান—প্রশস্ত প্রধান কার্যালয়, রবিবার প্রকাণ্ড সভাগৃহে কোনো মহারাজের বক্তৃতার সময় প্রত্যেকটি আসন পূর্ণ হয়ে যাওয়া। এসব কিছুরও আমি সাক্ষী। বিভিন্ন পর্বে ক্যালিফোর্নিয়ার কর্মকাণ্ডও বিকশিত হতে আমি দেখেছি—যেমন সান ফ্রান্সিসকোতে বেদান্ত সোসাইটি কর্তৃক হিন্দু-মন্দির নির্মাণ; লস এঞ্জেলসে গৃহের উদ্‌ঘাটন—যেখানে মহারাজের সঙ্গে একত্রে বেদান্তের ছাত্ররা বসবাস করে তাঁর ব্যক্তিগত সান্নিধ্য পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে, আবার সান অ্যান্টোনের পাহাড়ে অনুষ্ঠিত আধ্যাত্মিক শিবিরে সাধন-ভজন করতে যাওয়ার জন্য বেদান্তের ছাত্রদের প্রবল আকর্ষণ। এসবই আমেরিকায় আমি দেখেছি। কিন্তু বেলুড় মঠের অভিজ্ঞতা সব দিক থেকেই স্বতন্ত্র। যদিও মঠ বলতে সন্ন্যাসীদের আবাসস্থানকে বোঝায়, তবুও বিদেশের সাধুজীবনের ধারণা থেকে কিছুতেই ভারতে সন্ন্যাসজীবনের ধারণা করা যাবে না। সন্ন্যাসজীবনের নিয়ম হিসাবেই ভারতে সন্ন্যাসীদের বসবাসের সুনির্দিষ্ট কোনো স্থান থাকে না। পাশ্চাত্যে কিন্তু মোটামুটিভাবে সন্ন্যাসীদের বাসস্থান নির্দিষ্ট; অবশ্য ক্বচিৎ একটু-আধটু পরিবর্তনের দরকার হতে পারে। পাশ্চাত্যে একবার একজন কোনো মঠ বা আশ্রমে প্রবেশ করলে সারাজীবনের জন্যই সেখানে থাকবে। কিন্তু ভারতবর্ষে, একজন সন্ন্যাসী হলো মানে তাকে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে গৃহস্থের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভিক্ষা করে খেতে হবে। বিশ্রামের জায়গা বলতে খোলা আকাশ বা যখন যেমন জোটে। এই কারণে ভারতবর্ষে একজন সন্ন্যাসীকে একজন গৃহস্থ—তা সে যত গরিবই হোক না কেন—কখনোই ভিক্ষা দিতে অস্বীকার করে না বা খালি-হাতে ফেরায় না। বেলুড় মঠ প্রতিষ্ঠার আগে রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীরাও...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in