[পূর্বানুবৃত্তি : বৈশাখ সংখ্যার পর]

।।৩।।

১৮৯৮ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যভাগ পর্যন্ত শ্রীরামকৃষ্ণের পার্ষদগণ আলমবাজার মঠেই ছিলেন। কিন্তু ভূমিকম্পে তা বসবাসের অযোগ্য হওয়ায় এবং সেখান থেকে গঙ্গা পার হয়ে বেলুড়ে এসে নতুন মঠ তৈরির কাজে সুবিধা হবে না বলে তাঁরা জমির কাছেই নীলাম্বর মুখার্জির বাগানবাড়ি ভাড়া নেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি আলমবাজার থেকে এখানে মঠ স্থানান্তরিত হয়। স্বামী ত্রিগুণাতীতানন্দজী ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রমদাদাস মিত্রকে লিখছেন : “এক্ষণে মঠ পুরাতন স্থান হইতে উঠিয়া বেলুড় নামক গ্রামে হাওড়া জেলার অন্তর্গত স্থানে গঙ্গাতীরে এক মনোহর উদ্যানে কলিকাতার প্রায় সম্মুখে জাহ্নবীর অপর পারে উঠিয়া আসিয়াছে। এই স্থানের নিকটেই নূতন মঠ নির্ম্মাণ হইবে সত্বরে।” ওনাকেই ২৫ ফেব্রুয়ারি লিখছেন : “মঠ নির্ম্মাণের ব্যয়ভার ঈশ্বরই গ্রহণ করিয়াছেন। ৪০ [চল্লিশ] হাজার টাকা দিয়া ১৮ বিঘা উত্তম জমী গঙ্গার পশ্চিম কূলে ক্রয় করা হইয়াছে। আরও, মঠের জন্য প্রায় একশত বিঘা জমী ঐ জমীর চতুঃপার্শ্বে ক্রয় করিবার মত আছে। জমীতেই প্রায় ২ লক্ষ টাকা পড়িয়া যাইবে। এতদ্ব্যতীত মন্দিরাদি নির্ম্মাণ করিতে প্রায় ১০।১২ লক্ষ টাকা পড়িবে। এ সমস্ত বৃহদ্ব্যয়ভার একমাত্র ঈশ্বর ব্যতীত আর কে লইতে সমর্থ?”

৪ মার্চ ১৮৯৮ বাকি ৩৭৯৯৯ টাকা দিয়ে ২২ বিঘা জমিটি কেনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।৬১ পরের দিন হাওড়া সাবরেজিস্ট্রি অফিসে দুপুর বারোটা থেকে একটার মধ্যে স্বামী বিবেকানন্দের নামে দলিল রেজিস্ট্রি হয়। সাক্ষী ছিলেন সলিসিটর প্রমথচন্দ্র কর, শরৎচন্দ্র ঘোষ এবং বাবু অক্ষয়চরণ ঘোষ।৬২ ৬ মার্চ ১৮৯৮ উচ্ছ্বসিত স্বামী প্রেমানন্দজী স্বামী রামকৃষ্ণানন্দজীকে লিখছেন : “গতকল্য ঐ জায়গাটি ৩৯,০০০ টাকায় ক্রয় করা হইয়াছে। শ্বেত পাথরের মন্দির ও প্রকাণ্ড বাটী তৈয়ারের আয়োজন হইতেছে, শীঘ্রই কার্য আরম্ভ হইবে। দেখেশুনে লোকে অবাক হইয়াছে। তাঁর কার্য তিনিই করেন।”

স্বামীজী ঠিক কবে বেলুড়ের জমিতে প্রথম পদার্পণ করেন তা ঠিক জানা যায় না। তবে বেলুড়-নিবাসী দুই সুহৃৎ গোপালচন্দ্র আটা ও যদু মোদক স্বামীজীকে এই জমি দেখিয়েছিলেন ও মঠের হাতে আসার ব্যাপারে সাহায্য করেছিলেন।৬৩ এই ঘটনা অবশ্যই ২১ জানুয়ারি স্বামীজীর কলকাতায় ফেরার পরে স্বামী যোগানন্দজীর জমি-পরিদর্শনের পর ও ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে হয়ে থাকবে। কারণ, ৯ ফেব্রুয়ারি স্বামীজী তাঁর বিদেশি অনুরাগীদের নিয়ে নতুন জমিতে বনভোজন করেছিলেন।৬৪ শীঘ্র মঠস্থাপনের জন্য এই কালে স্বামীজীকে বারংবার কলকাতায় বলরামবাবুর বাড়ি থেকে বেলুড়ে ছোটাছুটি করতে হয়েছে।

নিজস্ব জমিতে ঠাকুরের প্রতিষ্ঠা

এই বছর ২২ ফেব্রুয়ারি শ্রীশ্রীঠাকুরের জন্মতিথি পালিত হয় নীলাম্বরবাবুর বাগানবাড়ির মঠে। ২৫ ফেব্রুয়ারি স্বামী রামকৃষ্ণানন্দজীকে স্বামীজী লিখছেন : “যে জমি কেনা হইয়াছে, আজ আমরা উহার দখল লইব এবং যদিও এখনই ঐ জমিতে মহোৎসব করা সম্ভবপর নহে, তথাপি রবিবারে উহার উপর আমি কিছু না কিছু করাইব। অন্ততঃ শ্রীজীর ভস্মাবশেষ ঐ দিনের জন্য আমাদের নিজস্ব জমিতে লইয়া গিয়া পূজা করিতেই হইবে।” পরের রবিবার ২৭ ফেব্রুয়ারি নতুন জমির কিছুটা উত্তরে পূর্ণচন্দ্র দাঁয়ের ঠাকুরবাড়িতে মহাসমারোহে শ্রীশ্রীঠাকুরের জন্মমহোৎসব অনুষ্ঠিত হয়।৬৫ আর এদিনই সকালে বহু আকাঙ্ক্ষিত মঠের নিজস্ব জমিতে স্বামীজী শ্রীশ্রীঠাকুরকে স্থাপন করেন। স্বামীজী সাশ্রুনয়নে ঠাকুরের আত্মারামের কলস মাথায় করে এনে এই মঠভূমির নিমগাছতলায় বসিয়ে পায়েস ভোগ দিয়েছিলেন। এখন যেখানে উৎসবের বড় প্যান্ডেল হয় তার পিছনে যে গোলাপবাগান, তারই কিনারাতে নিমগাছ ছিল।৬৬

নতুন জমিতে শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রতিষ্ঠা দর্শনের আকাঙ্ক্ষায় শিষ্য শরচ্চন্দ্র চক্রবর্তী আগের রাত থেকেই নীলাম্বরবাবুর বাগানবাড়িতে অবস্থান করছিলেন। তাঁর মাধ্যমে এই ঐতিহাসিক ঘটনার এক নিখুঁত চিত্র পাওয়া যায়—“প্রাতে গঙ্গাস্নান করিয়া স্বামীজী ঠাকুর-ঘরে প্রবেশ করিলেন। অনন্তর পূজকের আসনে বসিয়া পুষ্পপাত্রে যতগুলি ফুল-বিল্বপত্র ছিল, সব দুই হাতে এককালে তুলিয়া লইলেন এবং শ্রীরামকৃষ্ণদেবের শ্রীপাদুকায় অঞ্জলি দিয়া ধ্যানস্থ হইলেন—অপূর্ব দর্শন! তাঁহার ধর্মপ্রভা-বিভাসিত স্নিগ্ধোজ্জ্বল কান্তিতে ঠাকুর-ঘর যেন কি এক অদ্ভুত আলোকে পূর্ণ হইল! প্রেমানন্দ ও অন্যান্য স্বামিপাদগণ ঠাকুর-ঘরের দ্বারে দাঁড়াইয়া রহিলেন

“ধ্যান-পূজাবসানে এইবার মঠভূমিতে যাইবার আয়োজন হইতে লাগিল। তাম্রনির্মিত কৌটায় রক্ষিত শ্রীরামকৃষ্ণদেবের ভস্মাস্থি স্বামীজী স্বয়ং দক্ষিণ স্কন্ধে লইয়া অগ্রগামী হইলেন। অন্যান্য সন্ন্যাসিগণসহ শিষ্য পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিল। শঙ্খ-ঘণ্টারোলে তটভূমি মুখরিত হওয়ায় ভাগীরথী যেন ঢল ঢল হাবভাবে নৃত্য করিতে লাগিল। যাইতে যাইতে পথিমধ্যে স্বামীজী শিষ্যকে বলিলেন, ‘ঠাকুর আমাকে বলেছিলেন, “তুই কাঁধে করে আমায় যেখানে নিয়ে যাবি, আমি সেখানেই যাব ও থাকব—তা গাছতলাই কি, আর কুটিরই কি।” সেজন্যই আমি স্বয়ং তাঁকে কাঁধে করে নূতন মঠভূমিতে নিয়ে যাচ্ছি। নিশ্চয় জানবি, বহুকাল পর্যন্ত বহুজনহিতায় ঠাকুর ঐ স্থানে স্থির হয়ে থাকবেন।’…

বেলুড় মঠে এই বাগানের কিনারাতে নিমগাছ ছিল

“এইরূপ কথাবার্তা হইতে হইতে সকলে মঠভূমিতে উপস্থিত হইলেন। স্বামীজী স্কন্ধস্থিত কৌটাটি জমিতে বিস্তীর্ণ আসনোপরি নামাইয়া ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম করিলেন। অপর সকলেও প্রণাম করিলেন।

“অনন্তর স্বামীজী পুনরায় পূজায় বসিলেন। পূজান্তে যজ্ঞাগ্নি প্রজ্বলিত করিয়া হোম করিলেন এবং সন্ন্যাসী ভ্রাতৃগণের সহায়ে স্বহস্তে পায়সান্ন প্রস্তুত করিয়া ঠাকুরকে নিবেদন করিলেন।… পূজা সমাপন করিয়া স্বামীজী সাদরে সমাগত সকলকে আহ্বান ও সম্বোধন করিয়া বলিলেন—‘আপনারা আজ কায়মনোবাক্যে ঠাকুরের পাদপদ্মে প্রার্থনা করুন যেন মহাযুগাবতার ঠাকুর আজ থেকে বহুকাল “বহুজনহিতায় বহুজনসুখায়” এই পুণ্যক্ষেত্রে অবস্থান করে ইহাকে সর্বধর্মের অপূর্ব সমন্বয়কেন্দ্র করে রাখেন।’ সকলেই করজোড়ে ঐরূপ প্রার্থনা করিলেন।”৬৭

স্বামীজীর আদেশে স্বামী শিবানন্দজী এক মন দুধের পায়েস রান্না করেছিলেন। ঐ পায়েস ঠাকুরকে নিবেদন করা হয়েছিল। তাঁর কথায়—“ঠাকুরকে এ মঠে প্রতিষ্ঠিত করে স্বামীজী মহা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলেছিলেন, ‘আজ আমার মাথা থেকে একটা বড় বোঝা নেমে গেল। গত বারো বৎসর ধরে আমার মনে ঐ এক চিন্তা—কিভাবে ঠাকুরের একটু জায়গা করে তাঁকে প্রতিষ্ঠিত করি। তাঁরই ইচ্ছায় এটি সম্ভব হল—তিনি নিজেই সব যোগাযোগ করে দিয়েছেন। এ মঠ থেকে সমগ্র বিশ্বে ঠাকুরের উদার ভাব প্রচারিত হবে—এইটি হবে তাঁর সর্বধর্মসমন্বয়ের প্রধান কেন্দ্র, এখানে সকল মতের সকল ভাবের সামঞ্জস্য থাকবে।’ পরে সকলকে সম্বোধন করে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনারা এই মঠকে কেন্দ্র করে তাঁর ভাবপ্রচারের সহায়ক হউন, জগৎ ধন্য হয়ে যাবে, আপনারাও ধন্য হয়ে যাবেন। সমগ্র জগৎ ঠাকুরের উদার ভাব নেবার জন্য উদ্‌গ্রীব হয়ে আছে। আমি ক্ষেত্র তৈয়ার করেছি—আপনারা তাতে বীজ বপন করতে সাহায্য করুন।’”৬৮ স্বামী অদ্ভুতানন্দজী এদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে জানিয়েছেন—পূজা শেষ করে স্বামীজী উপস্থিত সকলকে বলেছিলেন : “আজ থেকে এই মঠে তাঁকে (ঠাকুর শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণদেবকে) এনে বসালাম। তিনিই আমাদের চালাবেন। দেখিস্‌ ভাই। তাঁর চালনায় তোরা সবাই যেন চলতে পারিস।”৬৯

পূজা শেষে স্বামীজীর আদেশে শিষ্য শরচ্চন্দ্র আত্মারামের কৌটা মাথায় করে নীলাম্বরবাবুর বাগানবাড়িতে নিয়ে গেলেন। স্বামীজী তাঁকে কথাপ্রসঙ্গে বললেন : “ঠাকুরের ইচ্ছায় আজ তাঁর ধর্মক্ষেত্রের প্রতিষ্ঠা হলো। বারো বছরের চিন্তা আমার মাথা থেকে নামল। আমার মনে এখন কি হচ্ছে, জানিস?—এই মঠ হবে বিদ্যা ও সাধনার কেন্দ্রস্থান। তোদের মতো ধার্মিক গৃহস্থেরা এর চারদিককার জমিতে ঘরবাড়ি করে থাকবে, আর মাঝখানে ত্যাগী সন্ন্যাসীরা থাকবে। আর মঠের ঐ দক্ষিণের জমিটায় ইংলন্ড ও আমেরিকার ভক্তদের থাকবার ঘর-দোর হবে।”৭০ জন্মমহোৎসব পূর্ণচন্দ্র দাঁয়ের ঠাকুরবাড়িতে সম্পন্ন হলেও মঠের নতুন জমি বিচিত্র পতাকা-শোভিত ও ঠাকুরের নামগানে মুখরিত হয়েছিল। মহোৎসবে তিনশোর ওপর কীর্তনদল এসেছিল। তারা স্বামীজীর ব্যবস্থামত নতুন মঠভূমির ওপর দিয়ে রামকৃষ্ণ-নাম করতে করতে ঠাকুরবাড়িতে সমবেত হয়।৭১ পরের রবিবার, ৬ মার্চ ১৮৯৮ স্বামী প্রেমানন্দজী স্বামী রামকৃষ্ণানন্দজীকে এই অনুষ্ঠানের সংবাদ জানিয়ে লিখলেন : “গত রবিবার দাঁ-দের বাগানে মহোৎসব অতি উত্তমরূপে সম্পন্ন হইয়া গিয়াছে। প্রায় অন্য বছরের তুল্য। ঐদিন নূতন জায়গায় নরেন্দ্র নিজে ঠাকুর লইয়া গিয়া পূজা ও হোম করিয়াছিলেন। এবং পায়সান্ন ভোগ হইয়াছিল।”

জমি সংগ্রহে স্বামী ব্রহ্মানন্দজীর ভূমিকা

জমি সংগ্রহের ব্যাপারে স্বামীজীর অন্যান্য গুরুভাই ও কয়েকজন গৃহিভক্ত নিযুক্ত থাকলেও স্বামী ব্রহ্মানন্দজী ছিলেন প্রধান। তাঁর ওপরেই স্বামীজীর আস্থা, নির্ভরতা সর্বাধিক ছিল। স্বামী সারদেশানন্দ জানিয়েছেন—মহারাজ অনেক পরিশ্রম করে বেলুড় মঠের বর্তমান ভূমি সংগ্রহ করতে সমর্থ হন। সেই সময়ে মহারাজের কর্মতৎপরতা ও কষ্টস্বীকারের কথা উল্লেখ করে জনৈক প্রাচীন সাধু একসময় বলেন : “মহারাজ তখন সকালে উঠিয়া স্নান করিয়া চারিটি ভিজা চিঁড়া মুখে দিয়া ব্যাগের ভিতর আবশ্যকীয় দলিল কাগজপত্র পুরিয়া হাঁটিয়া বাহির হইয়া যাইতেন। দিনভোর এখানে সেখানে উকিল মক্কেল ও সহায়ক পরামর্শদাতা লোকের বাড়ি বাড়ি ঘুরিয়া, কোর্ট অফিস করিয়া কোনদিন অপরাহ্ণে, কোনদিন সন্ধ্যায় ক্লান্ত অবসন্ন দেহে মঠে ফিরিতেন। কোনদিন মধ্যাহ্নে কোন ভক্ত বা পরিচিত লোকের বাড়িতে খাওয়া হইত, কোনদিন হইত না। কোনদিন অপরাহ্ণে মঠে ফিরিয়া ঠাণ্ডা ভাত, কোনদিন ভিজা চিঁড়া, কোনদিন বা উপবাসের পর রাত্রেই একেবারে অন্নগ্রহণ করিতেন। এজন্য কেহ কখনও তাঁহার মুখে বিরক্তি, অবসাদ, দুঃখ বা নৈরাশ্যের কথা শুনে নাই।”৭২

স্বামী ব্রহ্মানন্দ

বেলুড় গ্রামের ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক পরিচয়

প্রায় দেড় হাজার বছর আগে বর্তমান ত্রিবেণী থেকে শিবপুর পর্যন্ত ভূভাগ দ্বীপের মতো মনে হতো। এর পূর্বদিকে ভাগীরথী ও পশ্চিমে সরস্বতী নদী প্রবাহিত ছিল।৭৩ কালের গতিতে এই দুই নদীর গতিপথ পরিবর্তনের ফলে পুরানো খাতের ওপরে ছোট ছোট জনপদের উদ্ভব হয়। পঞ্চদশ শতকের কবিরাম-কৃত সংস্কৃত দিক বিজয় প্রকাশ গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, গঙ্গা ও সরস্বতী নদীর মধ্যে একুশ যোজন পরিমিত ‘কিলকিলা ভূমি’। এর অধিকাংশ স্থান নদীগর্ভ বা জলাভূমি থেকে উদ্ভূত বাদাভূমি। দক্ষিণে শিবপুর থেকে উত্তরে বালি, ভদ্রেশ্বর, শ্রীরামপুর ও কলকাতার কিছু অঞ্চল এই ‘কিলকিলা ভূমি’র মধ্যে ছিল। বালি ও বেলুড় গ্রাম এইসকল নদীর চরভূমি থেকে উৎপন্ন।৭৪ এই অঞ্চলের বিবরণ দিতে গিয়ে ফার্গুসন তাঁর প্রবন্ধে যে পলিগঠিত গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের কথা লিখেছিলেন, বেলুড় তারই অন্তর্গত। গঙ্গা তখন অনেকখানি পশ্চিম ঘেঁসে প্রবাহিত। শ্রীশ্রীঠাকুর গঙ্গার ধার ভালবাসতেন। তাঁর অভিমত ছিল—মহাসমাধির পরে তাঁর ভস্মাস্থি যেন গঙ্গাতীরেই সমাহিত করা হয়। স্বামীজীও তাই চেয়েছিলেন—মঠের জন্য যে-জমি কেনা হবে তা যেন ‘একেবারে গঙ্গার ওপরে’ হয়। ঐতিহাসিক ও গবেষকদের মত অনুসারে, গঙ্গার প্রাচীন প্রবাহপথের ওপরেই বর্তমান বেলুড় মঠ অবস্থিত। দোরভদ্রা নদী অতীতে বেলুড়ের ডাঙার কাছে গঙ্গায় মিশত। এই নদী ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে শেষে অদৃশ্য হয়। জমির নাম হয় ‘বালুয়াড়া’ (বালু + আড়া) অর্থাৎ বালুর আড় বা আল দিয়া রক্ষিত। পরে এই নাম ক্রমে ‘বালুড়ি’ এবং শেষে ‘বেলুড়’-এ পরিণত হয়েছে।৭৫

বর্তমান বেলুড় মঠ হাওড়া জেলার বালি পৌরসভার অন্তর্গত। পণ্ডিতেরা মনে করেন, বালি ও সন্নিহিত অঞ্চল হাজার বছর আগেই বাসের উপযোগী হলেও জলা-জঙ্গল পরিষ্কার করে গোষ্ঠীবদ্ধ বসবাস শুরু হয় আরো প্রায় দু-তিনশো বছর পরে। প্রথম পর্যায়ে এসব এলাকায় অনুন্নত যাযাবর গোষ্ঠীর মৎস্যজীবী, শিকারি প্রভৃতির বাস ছিল। আরো অনেক পরে বাগদি, মালা প্রভৃতি জাতির মানুষজন গোষ্ঠীবদ্ধভাবে বাস করতে শুরু করে।৭৬ বালিতে ব্রাহ্মণ, কায়স্থ প্রভৃতি উচ্চবর্ণের আগমন হয় রাজা বিজয় সেনের অভ্যুদয়কালে (১০৭২ সাল)। ওয়ারেন হেস্টিংসের রাজত্বকালে ১৭৭৫ সালে মহারাজা নন্দকুমারের ফাঁসির পরে আরেক দফায় কলকাতার ব্রাহ্মণদের একটা অংশ গঙ্গা পেরিয়ে বালিতে এসে বসবাস শুরু করে। ৬০০ সাল থেকে সেন বংশের রাজত্বকাল পর্যন্ত বেলুড় অংশের উল্লেখ তেমন কোথাও পাওয়া যায় না। ১৭৯৬ সালে লিখিত তীর্থমঙ্গলকাব্য-এ কোননগর, কোতরং, ঘুষুড়ি, বালি প্রভৃতির উল্লেখ থাকলেও বেলুড় অনুপস্থিত। দশম শতাব্দী পর্যন্ত বেলুড় এলাকায় নিম্নবর্ণের মানুষেরা বসবাস করত।৭৭ ১৮৪৫ সালে ৪১টি গ্রামকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি হুগলি থেকে পৃথক করে হাওড়া জেলার সাথে যুক্ত করে। সরকারি ১৮৫৭ সালের গেজেটে (Calcutta Gazette, 22.7.57) হাওড়া শহরের মিউনিসিপ্যাল সীমার মধ্যে স্পষ্টভাবে বেলুড়ের উল্লেখ আছে। ১ এপ্রিল ১৮৮৩ হাওড়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বালি পৃথক পৌরসভার মর্যাদা পায়। ১৮৮৪ সালের ১ জানুয়ারি বেলুড় বালি পুরসভার সঙ্গে যুক্ত হয়।৭৮

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে হাওড়া শহর ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রে পরিণত হয়। গঙ্গার পশ্চিমপাড়ে শিবপুর থেকে সালকিয়া, ঘুষুড়ি পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে গড়ে ওঠে একাধিক ডক-ইয়ার্ড, জাহাজ মেরামতের কারখানা ও গুদাম। বেলুড় মঠের পাশেই পূর্বে নেপালি শালকাঠ আসত বলে পরিচয় ছিল ‘কাঠগোলা ঘাট’ নামে। ক্রমে কলকাতার নিমতলা ঘাটে এই কাঠ সংক্রান্ত নানা সামগ্রী যেতে থাকায় কাঠগোলার ঘাট ধীরে ধীরে অস্তিত্ব হারায়।৭৯ ১৮৮৮ সালে শ্রীমা যখন নীলাম্বরবাবুর ভাড়াবাড়িতে অবস্থান করছেন, তখনো বেলুড়ে কাঠগোলার অস্তিত্ব ছিল। সেসময়কার কথায় স্বামীজীর ভাই মহেন্দ্রনাথ দত্ত জানিয়েছেন : “গঙ্গার পাঁদাড়ে নেপালীদিগের বড় বড় শালকাঠ বরাবর কিনারাময় পাতা ছিল, কারণ বেলুড় গ্রাম তখন শালকাঠের আড়ৎ।”৮০

উনিশ শতকের প্রথম দিকে নিত্যযাত্রীরা ছোট পানসি বা অপেক্ষাকৃত বড় নৌকায় একসঙ্গে অনেকে কলকাতায় যাতায়াত করত। এই নৌকাগুলোকে ‘কুঠির পানসি’ বলা হতো। বালি থেকে বাগবাজারের ভাড়া ছিল ১ থেকে ৩ পয়সা।৮১ বেলুড়ে মঠ স্থাপনার কালে মঠবাসী ও ভক্তদের কলকাতা যাতায়াতে এইসব চলতি নৌকাই প্রধান ভরসা ছিল। যদিও প্রথম থেকেই মঠের নিজস্ব একটা পানসি ও বড় নৌকা ছিল।৮২

ভারতের অন্যতম প্রাচীন ও দীর্ঘ রাজপথ গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড বা জি. টি. রোড বেলুড় গ্রামের মধ্য দিয়ে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর চলে গিয়েছে। ১৭৭৯ সালে রেনল-কৃত মানচিত্রে নদীর তীরে সালকিয়া থেকে বালিখাল পার হয়ে শ্রীরামপুর এবং তার উত্তরে একটা ভাল রাজপথের নিশানা দেখা যায়। মঠস্থাপনকালেও এই অঞ্চলে গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডের ধার তখন এমন জঙ্গলপূর্ণ ছিল যে, দিনের বেলাতেও মানুষ চলাফেরা করতে ভয় পেত। বিশের দশকের শেষদিকে এই রাস্তায় বাস পরিষেবা চালু হয়।৮৩

১৮৫৪ সালের অগস্ট মাসে হাওড়া থেকে হুগলি পর্যন্ত ৪০ মাইল বাষ্পীয় ট্রেন প্রথম চালু হলো। হাওড়ার পরে প্রথম স্টেশন বালি। ১৮৮৪ সালে বেলুড়ে একটি স্টেশন খোলার আবেদন করা হয়। এরও অনেক পরে বেলুড় গ্রামের প্রান্তসীমা ধর্মতলা রোডে স্টেশন খোলা হয়। ১৯১৭ সালে হাওড়া-বর্ধমান কর্ড লাইন শুরু হলে বেলুড় স্টেশনের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। ট্রেন চলাচলের সূচনা থেকেই ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বেলুড়ের আশপাশের জমি একটু একটু করে অধিগ্রহণ করতে শুরু করে। ১৯২৩ সালে ইংরেজ সরকার বেলুড় মঠের পাশেই ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ের একটি ইয়ার্ড স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়। মিস জোসেফিন ম্যাকলাউডের প্রচেষ্টায় মঠ এই সংকটময় পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হয়। তিনি এক চিঠিতে লিখছেন : “মঠের জমি এবং বেলুড় গ্রামের ওপর ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ে যে অবৈধ হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছিল, সরকার থেকে তা রদ করা হয়েছে। লর্ড লিটনের মধ্যস্থতায় এটি সম্ভব হয়েছে।”৮৪ যদিও এই সময় বেলুড়ের উত্তর প্রান্তের অনেকটা জমি ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানি অধিগ্রহণ করেছিল স্ক্র্যাপ ইয়ার্ড গড়ে তোলার জন্য।

একসময় আলিবর্দী খাঁ অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে এই অঞ্চলের ইজারা দিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের কান্দির দেওয়ান গঙ্গাগোবিন্দ সিংহকে। পরবর্তিকালে তাঁর পৌত্র কৃষ্ণচন্দ্রের নামেই বেলুড় গ্রামের কতকাংশের নাম হয়েছিল ‘কৃষ্ণচন্দ্রপুর’। একদা তিনি এক রজক-কন্যার তার পিতার উদ্দেশে বলা কথা শুনলেন—“বেলা যে যায়, বাসনায় আগুন দিবি না?” নিতান্তই এক পারিবারিক সংলাপ হলেও কৃষ্ণচন্দ্রের জীবনে তা অন্য মাত্রা আনল। তিনি ভাবলেন—সত্যিই তো জীবন শেষ হয়ে আসছে—কবেই বা পার্থিব কামনা-বাসনায় আগুন দেবেন! শোনা যায়, সেদিনই প্রবল প্রতাপশালী জমিদার কৃষ্ণচন্দ্র এই বেলুড়ের বাড়ি (বর্তমানে বেলুড় গার্লস হাইস্কুল) থেকেই সর্বস্ব ত্যাগ করে গেরুয়া ধারণ করে বেরিয়ে পড়েন। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র হলেন ‘সাধু লালাবাবু’।৮৫ তাঁরই স্মৃতি বহন করছে গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড থেকে গঙ্গার তীর পর্যন্ত লালাবাবু সায়র রোড। তাঁর ধর্মপ্রাণা স্ত্রী কাত্যায়নীদেবী এই বেলুড় গ্রামেই একদা ‘অন্নমেরু’ ও ‘তুলাদান’ ব্রত পালন করেন। বেলুড়ের মাটিতে কাত্যায়নীদেবীর বিবিধ পুণ্যকর্মের মধ্যে বর্তমান বেলুড় বাজারে শ্রীশ্রীসিদ্ধেশ্বরী কালীমাতার মন্দির, গঙ্গাতীরের শ্রীশ্রীজগন্নাথ মন্দির প্রতিষ্ঠা উল্লেখযোগ্য।৮৬ একদা গঙ্গাতীরে নীলাম্বর মুখোপাধ্যায়ের বাগানবাড়ির উত্তরে এঁদের দোতলা বাড়ি ছিল। ১৯৯১ সালেও সেই বাড়ির ধ্বংসস্তূপ দেখা যেত। [ক্রমশ]

তথ্যসূত্র

৬১ বেলুড় মঠের প্রধান কার্যালয়ে র‌ক্ষিত দলিল থেকে প্রাপ্ত তথ্য। ১৯০১ সালের জমিটার এক নকশার ওপর পরিমাণ উল্লেখ আছে—১৭ বিঘা ১৫ কাঠা ৩০ বর্গফুট। ১৯০১ সালের ৩০ জানুয়ারি দেবোত্তর দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে স্বামীজী মঠের ১৯ বিঘা জমি স্বামী ব্রহ্মানন্দজী প্রমুখ গুরুভাইদের হাতে অর্পণ করেন। (Having recorded in Block I. vol. II, pages from 235 to 248, Being no. 348 of 1901 with the office of spl. Sub-Register, Howrah) যদিও এই সময়ের মধ্যে জমিটির কোনো অংশ বিক্রি হয়নি বা নতুন জমি কেনা
হয়নি।
৬২ দ্রঃ সরকার, সরলাবালা, রচনা সংগ্রহ, আনন্দ পাবলিশার্স লিঃ, কলকাতা, ১৯৮৯, ২য় খণ্ড, পৃঃ ১৮৪
৬৩ স্বামী শঙ্করানন্দ শরৎচন্দ্র আটাকে বলেছিলেন : “তোমার বাবা ও যদু মোদক দুজনে মিলে স্বামীজীকে এ-জায়গা দেখিয়েছেন। তাঁদের চেষ্টায় জায়গাটি মঠের হাতে এসেছিল।” (চক্রবর্তী, ডাঃ বিশ্বনাথ, স্বামী শঙ্করানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ২০১৩, পৃঃ ২৩১) শরৎচন্দ্র আটা বালি পৌরসভার প্রধান ছিলেন সেপ্টেম্বর ১৯৪৫ থেকে নভেম্বর ১৯৪৬ এবং ডিসেম্বর ১৯৪৬ থেকে মে ১৯৪৭।
৬৪ দ্রঃ ১০ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৮ মিসেস হ্যামন্ডকে লেখা নিবেদিতার চিঠি—“গতকাল তাঁর অতিথি হিসাবে পিকনিক করলাম সুন্দর এক নদীর তীরে (গঙ্গাতীরে), যে-জায়গাটি মিস মুলার মঠ তৈরীর জন্য স্বামীজীকে কিনে দিচ্ছেন।” (বসু, শঙ্করীপ্রসাদ, নিবেদিতা লোকমাতা, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ, কলিকাতা, ১৯৬৮, ১ম খণ্ড, পৃঃ ২৯)
৬৫ তখনকার বিখ্যাত The Bengalee পত্রিকাতে ১৮৯৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি একটি বিজ্ঞাপন বেরিয়েছিল ‘The Annual Ramakrishna Utsab’ শিরোনামে, যেখানে লেখা ছিল—“The sixty fifth birthday anniversary of Ramkrishna Paramhansha will be celebrated on sunday, the 27th February, 1898 at Purna Chandra Deb’s (Daw’s) Radharamanjis Thakurbari, Bally, Barrackpur on the right bank of the Ganges 3 miles up the river and off Calcutta. Steamers will ply Calcuttta and thakurbari Ghat.” (দ্রঃ মুখোপাধ্যায়, অনুপম, পুরাতন বেলুড়, বালি ও কতিপয় সন্নিহিত অঞ্চল, বেলুড় সাধারণ গ্রন্থাগার, হাওড়া, ২০২২, পৃঃ ৮৭)
৬৬ দ্রঃ স্বামী নির্বাণানন্দ, দেবলোকের কথা, উদ্বোধন কার্যালয়, ১৯৯৭, পৃঃ ১১৭। মহাপুরুষ মহারাজের মন্ত্রশিষ্য স্বামী ধর্মানন্দজীর কাছে স্বামী সুহিতানন্দজী শুনেছেন, ঠাকুরের মন্দিরের পূর্বদিকে রেলিং-ঘেরা ফুলের বাগানে—এখন যেখানে সিমেন্ট বাঁধানো ছোট চৌবাচ্চা আছে—সেখানেই স্বামীজী আত্মারামের পূজা করেছিলেন। এর পাশ দিয়ে এখনো একটি নালা গঙ্গায় গিয়ে মিশেছে।
৬৭ চক্রবর্তী, শরচ্চন্দ্র, স্বামি-শিষ্য-সংবাদ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ২০২২, পৃঃ ৮৫-৮৭। এখানে এই অনুষ্ঠানের তারিখ উল্লেখ আছে—৯ ডিসেম্বর ১৮৯৮। কিন্তু ঘটনাটি যে ২৭ ফেব্রুয়ারিতেই ঘটেছিল, তা রামকৃষ্ণ মঠের আদিকথা (স্বামী প্রভানন্দ লিখিত) গ্রন্থে স্পষ্ট করা আছে (পৃঃ ২৩৯—২৪২)। সেদিন পূজার পর আত্মারামকে পুনরায় নীলাম্বরবাবুর বাগানবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় আর ৯ ডিসেম্বর ১৮৯৮ থেকে নতুন মন্দিরে পাকাপাকিভাবে শ্রীশ্রীঠাকুরের পূজা শুরু হয়। এই দুদিনের পূজানুষ্ঠানের একটি চিত্র পাওয়া যায় স্বামী শঙ্করানন্দের বর্ণনায়। তিনি জানিয়েছেন : “১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে বেলুড়ে এই জায়গা নেওয়া হলো। সেবার ঠাকুরের জন্মতিথি উৎসব হয় এখানে।… ঐ নীলাম্বরবাবুর বাড়িটা ভাড়া নেওয়া হলো, আর এখানে দাঁ-বাবুদের মন্দিরবাড়ি আছে। বেশ সুন্দর রাধাকৃষ্ণের মূর্তি। সেখানে পূজা-ভোগাদি হলো। শেষে ‘আত্মারামের কৌটা’ নিয়ে এসে এখানে নিজস্ব জায়গায় স্থাপন করে সাজানো হলো। উৎসব অন্তে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো। পরে যখন এখানে বাড়ি হলো তখন সেখানে এনে ঠিকমতো স্থাপন করা হলো।” (স্বামী শঙ্করানন্দ, পৃঃ ১৮৯)
৬৮ স্বামী অপূর্বানন্দ, দেবলোকে, রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার, কলকাতা, ২০২১, পৃঃ ১৭৮
৬৯ চট্টোপাধ্যায়, চন্দ্রশেখর, শ্রীশ্রীলাটু মহারাজের স্মৃতি-কথা, উদ্বোধন কার্যালয়, ২০২২, পৃঃ ৩১১
৭০ স্বামি-শিষ্য-সংবাদ, পৃঃ ৮৭
৭১ দ্রঃ ব্রহ্মচারী প্রকাশচন্দ্র, স্বামী সারদানন্দ (জীবন-কথা), বসুমতি-সাহিত্য-মন্দির, কলিকাতা, ১৯৩৬, পৃঃ ১১৩
৭২ স্বামী চেতনানন্দ (সম্পাদিত), স্বামী ব্রহ্মানন্দের স্মৃতিকথা, উদ্বোধন কার্যালয়, ২০০৩, পৃঃ ১৭২-৭৩
৭৩ পূর্বে ভাগীরথীর প্রধান স্রোত সরস্বতী নদী দিয়ে প্রবাহিত হতো। ১৫৩৭ সালের পর থেকে ভাগীরথীর গতি পরিবর্তিত হওয়ায় সরস্বতীর প্রবাহ ভাগীরথীকে আশ্রয় করায় সরস্বতী নদী ক্রমশ শুকিয়ে যেতে লাগল। (দ্রঃ হুগলী জেলার ইতিহাস ও বঙ্গসমাজ, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৭৯) স্বামীজী ‘পরিব্রাজক’ প্রবন্ধে লিখেছেন : “পূর্বে ত্রিবেণী পর্যন্ত বড় বড় জাহাজ অনায়াসে প্রবেশ করত। সপ্তগ্রাম নামক প্রাচীন বন্দর এই ত্রিবেণী ঘাটের কিঞ্চিৎ দূরেই সরস্বতীর উপর ছিল। অতি প্রাচীনকাল হতেই এই সপ্তগ্রাম বঙ্গদেশের বহির্বাণিজ্যের প্রধান বন্দর। ক্রমে সরস্বতীর মুখ বন্ধ হতে লাগলো। ১৫৩৭ খ্রীষ্টাব্দে ঐ মুখ এত বুজে এসেছে যে, পোর্তুগিজেরা আপনাদের জাহাজ আসবার জন্যে কতকদূর নীচে গিয়ে গঙ্গার উপর স্থান নিল।” (স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, উদ্বোধন কার্যালয়, ২০১৫, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ ৫৩)
৭৪ দ্রঃ বন্দ্যোপাধ্যায়, শীতাংশুমোহন, শতাব্দীর পরিক্রমায় বালী গ্রামের ইতিকথা, প্রভা বন্দ্যোপাধ্যায়, বালী, হাওড়া, ১৯৮৮, পৃঃ ৪
৭৫ মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে—বেলু+উড়ি অর্থাৎ বেলু বা বেল্লু নামে পরিচিত দশ বৌদ্ধভি‌ক্ষুর উড়ি বা কুটির থেকে ‘বেলুড়ি’ শব্দটি এসেছে। বৌদ্ধধর্ম যে তান্ত্রিক ধর্মে রূপান্তরিত হয় তার চিহ্ন এই অঞ্চলে ছিল। বেলুড়ে যতিপুকুর (যতি অর্থাৎ ভি‌ক্ষু), ধর্মতলায় ধর্মরাজ ঠাকুর প্রভৃতিও বৌদ্ধ প্রভাবের অস্তিত্বসূচক। (দ্রঃ ঐ)
৭৬ দ্রঃ ঐ, পৃঃ ৭, ২৬
৭৭ দ্রঃ ঐ, পৃঃ ২৮; পুরাতন বেলুড়, বািল ও কতিপয় সন্নিহিত অঞ্চল, পৃঃ ৫৪, ১২
৭৮ দ্রঃ শতাব্দীর পরিক্রমায় বালী গ্রামের ইতিকথা, পৃঃ ১৬৬
৭৯ দ্রঃ পুরাতন বেলুড়, বালি ও কতিপয় সন্নিহিত অঞ্চল, পৃঃ ৯
৮০ দত্ত, মহেন্দ্রনাথ, শ্রীমৎ বিবেকানন্দ স্বামীজীর জীবনের ঘটনাবলী, দি মহেন্দ্র পাবলিশিং কমিটি, কলিকাতা, ২য় খণ্ড, ১৯৮৭, পৃঃ ৩৭
৮১ দ্রঃ বালী গ্রামের ইতিকথা, পৃঃ ১৫৬
৮২ ভগিনী নিবেদিতাকে স্বামীজী ১৮৯৯ সালের ২ মার্চ পত্রে লেখেন : “ওনারা যদি… প্রায় ৪টে নাগাদ বেরিয়ে পড়েন তাহলে সহজেই আমাদের বড় নৌকাটা গিয়ে ওঁদের আনতে পারে।”
৮৩ রামকৃষ্ণ মঠের আদিকথা, পৃঃ ২৪৪
৮৪ প্রব্রাজিকা প্রবুদ্ধপ্রাণা, ট্যান্টিন : জোসেফিন ম্যাকলাউড, শ্রীসারদা মঠ, কলকাতা, ২০০৮, পৃঃ ২৭৬
৮৫ দ্রঃ পুরাতন বেলুড়, বালি ও কতিপয় অঞ্চল, পৃঃ ১৬-১৭
৮৬ দুর্গাপূজার কয়দিন এই জগন্নাথ-মন্দিরের শালগ্রাম শিলা বেলুড় মঠে শ্রীশ্রীদুর্গাদেবীর সাথে পূজিত হন। স্বামী বৈদ্যনাথানন্দের সূত্রে জানা যায়, পূর্বে এই শালগ্রাম শিলা বেলুড় মঠের মন্দিরে পূজিত হতেন। ব্রাহ্মণ পূজক প্রভৃতি আরো কয়েকটি বিশেষ কারণে এই শিলাকে জগন্নাথ-মন্দিরে প্রেরণ করা হয়। স্বামীজীর শিষ্য ব্রহ্মচারী জ্ঞান মহারাজ দীর্ঘকাল এই শিলার পূজা
করেছেন।