শ্রীশ্রীঠাকুরের স্থূলশরীর ত্যাগের দু-সপ্তাহ পরে শ্রীশ্রীমা বৃন্দাবনের উদ্দেশে যাত্রা
শ্রীশ্রীঠাকুরের স্থূলশরীর ত্যাগের দু-সপ্তাহ পরে শ্রীশ্রীমা বৃন্দাবনের উদ্দেশে যাত্রা করেন এবং একবছর সেখানে অবস্থান করেন। এই সময় তিনি বিরহদগ্ধা, পরম আকাঙ্ক্ষিতের বিচ্ছেদভারে জর্জরিতা; মনোজগতের দহনজ্বালার পাশাপাশি পার্থিব জগতের আঘাতও তখন তাঁকে গ্রহণ করতে হচ্ছে। এই সময়েই দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি থেকে তাঁর জন্য যে মাসোহারা দেওয়া হতো, তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সুতরাং স্থূলজগতের দৃষ্টিতে দেখলে একপ্রকার নিঃসহায় ও নিঃসম্বল অবস্থাতেই তাঁর বৃন্দাবনে আগমন। তবু বৃন্দাবনের শ্রীরাধিকার বিরহাশ্রুসিক্ত ধূলিকণায় তাঁর ভারাক্রান্ত বিহ্বল হৃদয় পরমপ্রিয়ের দর্শনাকাঙ্ক্ষায় তন্ময় থেকেছে। এর প্রায় চারশো বছর পূর্বে রাজপুত-দুহিতা মহাসাধিকা মীরাবাইয়ের বৃন্দাবন আগমনের প্রেক্ষাপটও প্রায় অনুরূপ। তিনিও ছিলেন সম্বলহীন ও নিঃসঙ্গ। মধুরভাব সাধন ও সংগীত-আরাধনার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরোপাসনার মহত্তম আসনে আসীন হয়ে তিনি ভারতের সাধনার ধারা ও ঈশ্বরপ্রেমের আদর্শকে চিরশাশ্বত করে রেখেছেন। রাজপুতানার প্রদেশ মেবারের মহারাণা তখন সংগ্রাম সিং। তাঁর পুত্র ভোজরাজের বধূ মীরার আবাল্যপ্রেমসাধন গিরিধারীলালের সঙ্গে। মধুরভাব সাধনের মাধ্যমে সেই গিরিধারী গোপালকেই পতিরূপে গ্রহণ করেছিলেন তিনি। তাই শক্তি-উপাসক শ্বশুরকুলের কুলদেবী ভীমাদেবীর পরিবর্তে আবাল্যসাধিত গিরিধারীলালের প্রতিই ছিল তাঁর চির-অনুরাগ। সাধারণ বৈবাহিক নারীজীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষার ঊর্ধ্বে উঠে এক অলোকসামান্য সাধিকার জীবনের প্রবেশলগ্নে দাঁড়িয়ে তিনি পার্থিব জগৎ থেকে আঘাত পেয়েছেন বারংবার। বিবাহের কয়েক বছর পরেই স্বামী ভোজরাজের যখন মৃত্যু হয়, তখন মীরা ভগবৎপ্রেমে মাতোয়ারা। রইদাস নামে বৈষ্ণব সাধুর নিকট তাঁর মন্ত্রদীক্ষা হয়েছে, সাধুসঙ্গ ও ভগবত্তত্ত্ব আলোচনায় তাঁর প্রাণ তখন মুখর, মৌখিকভাবেই রচনা করছেন একের পর এক ভজন, পরমপ্রিয় গিরিধারীলালকে আরাধনা করছেন ভাবমধুর নৃত্য-গীতে। অশুদ্ধচিত্ত মানুষ বিধবা মীরার এই ভগবৎপ্রেম ও সাধুসঙ্গ বিষয়ে কুকথা রটাতে দেরি করল না; রাজপরিবার থেকে বিতাড়িত হতে হলো মীরাকে। কিন্তু সে যেন বন্ধন থেকে মুক্তি—যেন অদৃশ্য কোনো লোক থেকে বাঁশির ডাক ভেসে এল। অভিজাত শিশোদীয় বংশের রাজকুলবধূ ধূলিধূসরিত রাজপথে হরিনাম- গুণকীর্তনে মাতোয়ারা এক অধ্যাত্মযাত্রী। ভারতের ধর্ম-ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। মীরাবাই পৌঁছালেন মহাতীর্থ বৃন্দাবনে—নিঃসহায় ও নিঃসম্বল, হৃদয়ে কেবল নিরন্তর কৃষ্ণপ্রেম। “শ্যাম মৈঁনে চাকর রাখোজী, গিরধারীলাল! চাকর...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹100/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in