সাধারণত সরার ওপর অঙ্কিত চিত্রকেই ‘সরাচিত্র’ বলা হয়। কোথাও কোথাও ‘সরাপট’ও বলে। সরার ওপর যে চিত্রাঙ্কন করা হয়, পটের অঙ্কনের সঙ্গে তার সাদৃশ্য থাকায় তাকে ‘সরাপট’ বলা হয়। প্রাচীনকালে সরার ওপর-নিচ অর্থাৎ উত্তল ও অবতল দুই দিকেই ছবি আঁকা হতো। তবে সেই অঙ্কন পটের মতো নয়—ছিল লোকজ বা আলপনা থেকে উদ্ভাবিত নকশা। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদরোতেও সরাচিত্রের নিদর্শন পাওয়া গেছে। পুরাতাত্ত্বিক মাধো স্বরূপ ভাট তাঁর Excavations at Harappa৪ গ্রন্থে উক্ত সরাচিত্রের নিদর্শনের আলোকচিত্র প্রদান করেছেন। হরপ্পায় প্রাপ্ত সরায় উত্তল অংশেই নানা অলংকরণ অঙ্কিত হয়েছিল—ময়ূর, হরিণ, কলমিলতা, পদ্মফুল, পদ্মপাতা-লতা, সূর্য, চক্র ইত্যাদি। হরপ্পায় সরাগুলিতে কলমিলতা, পদ্মলতাকে আমরা অলংকরণের আদি রূপ হিসাবে ধরতে পারি। এই কলমিলতা, পদ্ম, পদ্মলতা বঙ্গদেশে ল‌ক্ষ্মীপুজোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। বলা যেতে পারে, এগুলিই ল‌ক্ষ্মীদেবীর প্রতীক হিসাবে বিবেচ্য। সম্ভাবনার সঙ্গে কথাগুলি বললেও বঙ্গদেশে চন্দ্রকেতুগড় থেকে প্রাপ্ত মৃৎফলকে পদ্মের ওপর অবস্থান করা নারীমূর্তির সন্ধান আমরা পেয়েছি। গবেষকগণ এই নারীমূর্তিকে ‘পদ্মাসনা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন; ‘পদ্মাসনা’ অর্থাৎ যিনি পদ্মের ওপর আসীন বা উপবিষ্ট হয়ে আছেন। আবার ‘পদ্মাসনা’ মানে ল‌ক্ষ্মী। হরপ্পার সরাচিত্রে পদ্ম, পদ্মলতা-পাতা, কলমিলতা ইত্যাদির অলংকরণ কৃষিভিত্তিক সভ্যতায় উদ্ভাবিত হয়েছে। ফলে কৃষির দেবীকে পদ্মের সাথে তুলনা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, চন্দ্রকেতুগড়ে ‘গজল‌ক্ষ্মী’র মৃৎফলক পাওয়া গেছে। গবেষকগণ চন্দ্রকেতুগড়ের সময়কাল নির্ধারণ করেছেন খ্রিস্টপূর্ব ২০০ থেকে খ্রিস্টীয় ২০০ অব্দ। অধুনা বাংলােদশের সিলেট জেলার মৌলবিবাজার মহকুমার অন্তর্গত কালীপুর গ্রাম থেকে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে মরুণ্ডনাথের তাম্রপট্ট মুদ্রা পাওয়া গেছে। এই মুদ্রায় প্রস্ফুটিত পদ্মের ওপর দণ্ডায়মান গজল‌ক্ষ্মীর মূর্তি, তাঁর দুই ধারে দুটি হাতি অভিষেক করছে; নিচে দুজন সেবক পুজো করছেন। এমন একটি চিত্রকল্প উক্ত মুদ্রায় খোদিত হয়েছে।৫ এই সমস্ত মৃৎফলক বা মুদ্রা দেখে দুটি বিষয় পরিল‌ক্ষিত হয়। এক, সুদূর অতীতকালে বঙ্গদেশে ল‌ক্ষ্মীপুজোর প্রচলন ছিল; দুই, মৃৎফলকে পদ্মাসীনা দেবীর সঙ্গে হস্তী সংযুক্ত হওয়া—এই দুইয়ের পিছনে বোধকরি হস্তী-সংস্কৃতির প্রভাব যুক্ত হয়েছিল। প্রাচীনকালে হস্তী-সংস্কৃতিই দেবদেবী-ভাবনার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ফলে গজল‌ক্ষ্মী দেবীর উদ্ভব ঘটেছিল বঙ্গদেশে। গজের সঙ্গে ল‌ক্ষ্মীদেবীর যোগের কথা আমরা ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যেও উল্লিখিত হতে দেখি। এই কাব্যে কমলেকামিনীর দর্শন পেয়েছিলেন ধনপতি। মুকুন্দরাম সেসম্পর্কে লিখেছেন


“অমলা কমল হৈল পদ্ম করিবর
হাসিতে লাগিলা শতদলের উপর॥”৬

এ শুধু ষোড়শ শতকে নয়, অষ্টাদশ শতকের কবি দয়ারামের লেখা ‘বিনন্দ রাখালের পালা’তেও বঙ্গদেশে গজল‌ক্ষ্মী পুজোর কথা উল্লিখিত হয়েছে। বিশ শতকে হীরেন্দ্রনাথ মিত্রের সংগৃহীত সরাচিত্রে গজল‌ক্ষ্মী অঙ্কিত হতে দেখা যায়। অনুমিত হয়, আঠারো-উনিশ শতকের বহু পূর্ব থেকেই সরায় গজল‌ক্ষ্মী মূর্তি অঙ্কিত হতো। হীরেন্দ্রনাথ মিত্রের সংগৃহীত সরাটি তার উল্লেখযোগ্য প্রমাণ বলা যায়।৭ কিন্তু কৌতূহলের বিষয় হলো—বঙ্গদেশে সরার উপরিতল বা উত্তল অংশে দেবদেবীর চিত্র আঁকা হয় কেন? বহু গবেষকই বলেছেন, ল‌ক্ষ্মীর আবাস পৃথিবীপৃষ্ঠ অর্থাৎ মাটিতেই ল‌ক্ষ্মীর আবাস। আর ঐ উত্তল অংশকে গর্ভবতী নারীর স্ফীতোদরের প্রতীক বলেছেন। কিন্তু তাঁরা এর কোনো ব্যাখ্যা দেননি। সাধারণত সরার যোগ কলস বা হাঁড়ির সঙ্গে, কারণ হাঁড়ির ভিতর কিছু রেখে সরা উত্তল বা অবতল দুভাবেই ঢাকা দেওয়া হয়। হাঁড়ি বা কলসকে বলা হয় জলাধার, ঘট, কুম্ভ ইত্যাদি। প্রাচীনকালে বঙ্গদেশে বা অন্য প্রদেশেও স্ত্রী-গ্রামদেবতার প্রতীক হিসাবে ঘট বিবেচ্য ছিল।৮ ঘটকে নারীদেহের প্রতীক, বিশেষত নারীর গর্ভরূপে কল্পনা করা হয়েছে। আবার মাতৃকাভেদতন্ত্র-এ৯ শালগ্রাম, মণি, যন্ত্র, প্রতিমা, ঘট, জল, পুস্তিকা, গঙ্গা, শিবলিঙ্গ ও প্রসূনকে আধার বলা হয়েছে। এই দুই জায়গাতেই ঘটকে আধাররূপে দেখা হয়েছে। কিন্তু আধার বিষয়টি কী? ‘আধার’ শব্দের অর্থ হলো—যাতে কোনো বস্তু থাকে, পাত্র, আশ্রয় ইত্যাদি। আমরা জানি, ঘটের ভিতর অন্ন, জল ইত্যাদি-সহ উপরিভাগে সংর‌ক্ষণ হেতু সরা দিয়ে ঢাকা রাখা হয়। এ‌ক্ষেত্রে অন্ন, জল ইত্যাদির সাথে সরাও আধারস্থ বস্তু (ঘটের) বা আধেয় বস্তু। বিষয়টাকে যদি আমরা সম্পদের দিক দিয়ে দেখি, তাহলে দাঁড়ায় এইরকম—কৃষিজাত পণ্য বা সম্পদ রাখা হয় কলস বা হাঁড়িতে। সেই হাঁড়ি ভর্তি হলে সরা অবতলভাবে ঢাকা দেওয়া হয়। কিন্তু যে-মুহূর্তে সম্পদ বৃদ্ধি পায়, তখন সরা উত্তলভাবে ঢাকা দেওয়া হয়। সম্পদ বৃদ্ধির ফলে গর্ভ বা কলস স্ফীতধরা হয়ে থাকে। ফলত এই স্ফীতধরা রূপকল্পটি নারীগর্ভের তুলনীয় হয়েছে। সাধারণত গর্ভবতী মহিলার গর্ভ স্ফীত হয়। শস্য বা সম্পদ ধারণক্ষমতার মধ্য দিয়ে আধার বা আধেয় বস্তুটির অবস্থা যেমন প্রকটিত হয়, তেমনই ‘মূর্তি’ বা ‘প্রতিমা’ শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হলো—মুর্চ্ছ+ক্তি অর্থাৎ প্রকটিত বা ব্যক্ত অবস্থা।


এই যে কূর্মপৃষ্ঠের ন্যায় সরার গড়ন বা ভূমি—শিল্পী এই ভূমিতে প্রতিমা রচনার ক্ষেত্র নির্মাণ করেছেন। ‘প্রতিমা’ শব্দের দুটি অর্থ রয়েছে; মুখ্য অর্থ হলো সদৃশ বস্তু ও গৌণ অর্থ হলো প্রতিরূপ বা প্রতিমূর্তি। মহানির্বাণতন্ত্র গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে—প্রতিমাতেই দেবতার আবাস ও দেবতা স্বয়ং। যথা—


“নমস্তে প্রতিমে তুভ্যং বিশ্বকর্মবিনির্মতে।
নমস্তে দেবতাবাসে ভক্তাভীষ্টপ্রদে নমঃ॥”১০


এই শ্লোকে আমরা বিশ্বকর্মার উল্লেখ পেলাম। বঙ্গদেশে যারা সরা বা সরাচিত্র নির্মাণ করেন, তাঁদের ‘কুম্ভকার’ বলা হয়। ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ-এ কুম্ভকারদের বিশ্বকর্মার পুত্র বলা হয়েছে, যথা—


“মালাকার-কর্মকার-শঙ্খকার-কুবিন্দকাঃ।
কুম্ভকারঃ কংসকারঃ ষড়েতে শিল্পিনাং বরাঃ॥
সূত্রধারশ্চিত্রকারঃ স্বর্ণকারস্তথৈব চ।”১১


ঘৃতাচি ও বিশ্বকর্মার নয় পুত্র হলেন—মালাকার, কর্মকার, শঙ্খকার, কুবিন্দক বা তন্তুবায়, কুম্ভকার, কাংসকার বা কংসবণিক, সূত্রধর, চিত্রকর ও স্বর্ণকার। এঁদেরকেই বাংলায় ‘নবশাক সম্প্রদায়’ বলা হয়ে থাকে। যদিও তাঁরা নিেজদের ‘রুদ্রপাল’ বলে পরিচয় দেন।


সরাচিত্র রীতিগতভাবে লোকচিত্রকলার অঙ্গ হলেও এর মধ্যে প্রাচীন বৌদ্ধ অঙ্কনশৈলীর অধঃ‌ক্ষেপ দেখা যায়। সরাচিত্র বা সরাপটের (পূর্ববঙ্গের লোকেরা ‘সরাপট’ বলে থাকেন) মূল উপজীব্য বিষয় হলো ল‌ক্ষ্মীদেবী। তবে ল‌ক্ষ্মীদেবীর সঙ্গে শিল্পীরা অন্যান্য দেবদেবীকেও অঙ্কন করে থাকেন। ল‌ক্ষ্মীদেবীর পুজো প্রাচীনকাল থেকেই ঘরে ঘরে অনুষ্ঠিত হতো; বঙ্গদেশের মঙ্গলকাব্যগুলিতে তা দৃষ্ট হয়। যথা—“পদ্মবনে পদ্মাবতী, তুমি মা হরের সতী, স্বর্গল‌ক্ষ্মী তুমি স্বর্গপুরে।/ ধন্য-ধান্য অন্নপ্রদা, গোলকে তুমি শ্রীরাধা, গৃহল‌ক্ষ্মী সকলের ঘরে॥”১২


ঘরে ঘরে ল‌ক্ষ্মীপুজো থেকেই বোধ করি বহুলভাবে সরার প্রচলন ঘটে। অন্যদিকে মাটি সহজলভ্য উপাদান হওয়ার ফলে টেরাকোটা বা পোড়ামাটি তথা সরা মৃৎশিল্পের উৎকৃষ্ট নিদর্শন হয়ে উঠেছিল। প্রাচীনকাল থেকে সরার ব্যবহার তৈজস হিসাবে হলেও গুপ্ত বা তৎপরবর্তী যুগ থেকে প্রতিমাশিল্পে ‘ইমেজ’ বা দৃশ্যগত অবয়ব নির্মাণের প্রতি শিল্পী তথা পূজক শ্রেণি সজাগ হয়ে উঠেছিলেন। মাটি সহজলভ্য মাধ্যম হওয়ায় তার ওপর প্রতিমা নির্মাণ সহজতর ও বহুল উৎপাদন সম্ভবপর হয়েছিল। খুব সম্ভবত মৃত্তিকানির্মিত গোলাকার অবয়ব নির্মাণের প্রতি শিল্পীরা গুরুত্ব দিয়েছিলেন। গুপ্তযুগে প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সেকথা বলে। পাল-সেন যুগে এসে প্রতিমানির্মাণ শিল্পকলা আরো উন্নত হয়েছিল। বৌদ্ধ শ্রমণ তারানাথ তাঁর গ্রন্থে এবিষয়ে উল্লেখ করেছেন।১৩ চতুর্দশ থেকে অষ্টাদশ শতকের মঙ্গলকাব্যেও ল‌ক্ষ্মীপুজো ও প্রতিমার নানা প্রসঙ্গ ধরা পড়েছে। সরায় ল‌ক্ষ্মীপুজো মূলত পূর্ববঙ্গে অনুষ্ঠিত হতো কিন্তু দেশভাগ ও সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক কারণে পূর্ববঙ্গের বহু শিল্পী এপার বাংলায় চলে আসেন। ফলত এই বঙ্গে সরাপট নির্মাণ ও পুজো শুরু হয়। শিল্পীরা সরাপটের ঐতিহ্য এপার বঙ্গে নিয়ে আসেন; এপার বঙ্গের বেশ কিছু আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য ও চালচিত্রের শৈলী সরাচিত্রে মেশে। পূর্ববঙ্গে প্রধানত চাররকমের সরা নির্মিত হতো, যথা—(১) ফরিদপুরী, (২) সুরেশ্বরী, (৩) আচার্যী বা গণকা ও (৪) ঢাকাই সরা।১৪ কিন্তু ল‌ক্ষ্মীসরা অঙ্কনের ে‌ক্ষত্রে শিল্পী বা পালেদের নিজস্ব ভাষায় কিছু ভাগ রয়েছে। যথা—


(১) একল‌ক্ষ্মী সরা বা একপুতলা সরা : সরা গোলাকার হয়। শিল্পীরা সাধারণত দুটি পরিমাপের সরা তৈরি করেন। একটির পরিমাপ হলো ১২×১২ ইঞ্চি ও ছোটটির পরিমাপ হলো ৮×৮ ইঞ্চি। গোলাকার ক্ষেত্রের ওপর নানা ভাগ করে নিয়ে নানা দেবদেবীর প্রতিকৃতি অঙ্কন করা হয়। সরার বহির্বন্ধনী লাল ও নীল রঙের করে মাঝে একটি ল‌ক্ষ্মীর প্রতিকৃতি আঁকা হয়। একেই শিল্পীরা বলেন ‘একল‌ক্ষ্মী সরা’। মা ল‌ক্ষ্মীর রক্তাবৃত বসন, বসে থাকেন সুখাসন ভঙ্গিতে। বাম হাতে সম্পদ কলস ও ধানের শিষ, ডান হাত অভয়মুদ্রায় বিন্যস্ত থাকে। মা ল‌ক্ষ্মীর দুদিকে দুটি পদ্ম বা টুনি ফুল লাল রঙে শিল্পীরা আঁকেন। এছাড়া দুপাশে থাকে মা ল‌ক্ষ্মীর ব্যবহৃত আরশি, চিরুনি, সিঁদুরকৌটো, শাঁখ-কড়ি, পেঁচা ও মাঝে মাঝে দুই সখীকেও দেখা যায়। একল‌ক্ষ্মী সরারও আবার বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। যেমন—


(ক) সাধারণ একল‌ক্ষ্মী সরা : পদ্মের ওপর দণ্ডায়মান ত্রিভঙ্গ ভঙ্গিতে দেবী দাঁড়িয়ে থাকেন। দুই হাতে দুই পদ্ম বা ধানের শিষ ধরে থাকেন। পদ্মের নিচে শুভ্র সফেদ পেঁচা ও ল‌ক্ষ্মীর দুপাশে দুটি ময়ূর। এমন সরা আঁকতেন বিখ্যাত সরাশিল্পী ফরিদপুরের বলাই পাল। তিনি থাকতেন পশ্চিমবঙ্গের সোদপুর পানিহাটীতে। এধরনের দণ্ডায়মান ল‌ক্ষ্মীমূর্তি নদিয়া জেলার তাহেরপুরের শিল্পীরাও এঁকে থাকেন।


(খ) কুমারটুলির একল‌ক্ষ্মী সরা : গোলাকার সরার মাঝে পদ্মের ওপর পদ্মাসীনা ল‌ক্ষ্মী ত্রিভঙ্গ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকেন। পদ্মফুলের ফুল, পাতা, পদ্মকুঁড়ি-সহ দুটি লতা ল‌ক্ষ্মীর দুপাশ বেয়ে ওপরের দিকে বিন্যস্ত থাকে। ডানদিকের একটি লতার পদ্মফুলে হাত দিয়ে ল‌ক্ষ্মী দাঁড়িয়ে থাকেন। অন্য হাতে কখনো পদ্ম বা ধানের শিষ থাকে। পদ্মের নিচে থাকে ধনসম্পদের র‌ক্ষয়িত্রী পেঁচা। এই ল‌ক্ষ্মী অঙ্কনের পিছনে ঔপনিবেশিক রীতি বর্তমান। এরকম ভঙ্গিতে পদ্মের ওপর দাঁড়ানো ও দুপাশ দিয়ে পদ্মলতার বিন্যাস উনিশ-বিশ শতকের অন্যান্য শিল্পেও দেখা গেছে। যেমন—হুগলি জেলার গুপ্তিপাড়ায় অবস্থিত বৃন্দাবন বঙ্গের মন্দিরগাত্রের ফেস্কো চিত্রে আবার উনিশ শতকের ছাপাই চিত্র দেখা যায়। এই রীিতটিকে বহু গবেষক কুমারটুলি বা উপনিবেশ রীতি আখ্যা দিয়েছেন।


(২) দুইপুতলি সরা বা জোড়া ল‌ক্ষ্মী সরা : জোড়া অর্থে দুই; সরাতে দুটি ল‌ক্ষ্মীর প্রতিমূর্তি আঁকা হয়। বেশ কিছু পূজক শ্রেণির লোকদের পারিবারিক রীতি রয়েছে জোড়া ল‌ক্ষ্মী পুজোর। তাই তাঁরা জোড়া ল‌ক্ষ্মী প্রতিমূর্তিযুক্ত সরা শিল্পীদের থেকে ক্রয় করেন। শিল্পীরাও তাঁদের জন্য এমন সরা এঁকে থাকেন। এই সরাকে শিল্পীরা বলেন ‘দুই পুতলি’ বা ‘পুতলা সরা’। কারণ, দুটি পুতুল অর্থাৎ দুটি মূর্তি আঁকা থাকে বলে এইরূপ নামকরণ হয়েছে। দুই পুতলি সরার আরেকটি প্রকার রয়েছে, সেটিকে পালেরা বলেন—


দুইপুতলি ল‌ক্ষ্মী-নারায়ণ : এই সরাতে ল‌ক্ষ্মী ও নারায়ণের প্রতিকৃতি আঁকা হয়। দুজনেই পদ্মের ওপর সুখাসন ভঙ্গিতে অবস্থান করেন। কখনো আবার পালেরা দণ্ডায়মান ল‌ক্ষ্মী-নারায়ণও এঁকে থাকেন। ল‌ক্ষ্মীদেবীর গায়ের রঙ হরিদ্রাভ বা পিটলি (হলুদ) ও নারায়ণের গায়ের রঙ আকাশি বা নীল বর্ণে শিল্পীরা রঞ্জিত করেন। নারায়ণের হাতে শঙ্খ, চক্র, গদা ও পদ্ম থাকে, তাঁর শরীরের উত্তরীয় ও ধুতির রং সাধারণত লাল ও হলুদ রঙের হয়।
(৩) তিনপুতলা বা পুতলি সরা : তিনটি পুতুল অর্থাৎ তিনটি মূর্তি সরায় আঁকা হয় বলে এমন নাম হয়েছে। তিনটি মূর্তি হলো ল‌ক্ষ্মী ও তাঁর দুধারে দণ্ডায়মান থাকে দুই সখী জয়া এবং বিজয়া। এদের হাতে চামর ও ফুলের মালা থাকে। এইরকম সরার সাধারণত তিনটি বৈশিষ্ট্য দুই বঙ্গদেশে দেখা যায়—(ক) তাহেরপুরী, (খ) কলকাতার কুমারটুলি ও (গ) সাধারণ ফরিদপুরী। পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার তাহেরপুরের তিনপুতলি সরা সাদা, নীল ও লাল পার্শ্বদৃশ্যের (ব্যাকগ্রাউন্ড) ওপর উপস্থাপিত হয়, ল‌ক্ষ্মীদেবী পদ্মের ওপর সুখাসনে বসে থাকেন। মুখের আকার থ্রি-কোয়ার্টার বা একের তৃতীয়াংশ ভঙ্গি আঁকা হয়। দুই পাশে দুই সখীর মুখ কখনো প্রোফাইল (পার্শ্বমুখ) বা ফ্রন্টাল (সামনাসামনি) ভঙ্গিতে উপস্থাপিত হয়। প্রোফাইল ভাবে আঁকাটিকে শিল্পীরা আদি ফর্ম বা পুরানো ধারা বলে অভিহিত করেন। সরাকে আবার কখনো দুটি ভাগ করে নিয়ে ওপরে দুই সখী-সহ ল‌ক্ষ্মীদেবী এবং নিচে ল‌ক্ষ্মীদেবীর বাহন পেঁচাকে আঁকা হয়। কলকাতার কুমারটুলিতে তিনপুতলি একটু অন্যরকম, সরার পার্শ্বদৃশ্য লাল (কখনো নীল) রঙের। উপরিভাগে চাঁদোয়া টাঙানো, মাঝে মুঘল অনুচিত্রের মতো ফুলকারী নকশা, ল‌ক্ষ্মীদেবী পদ্মফুলের ওপর ত্রিভঙ্গ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকেন। কাপড় পরার শৈলীটি বাংলার পাড়াগঁায়ের মহিলাদের মতো আটপৌরেভাবে অঙ্কিত। একহাতে ধানের শিষ ও অন্যহাতে পদ্মফুল থাকে। ল‌ক্ষ্মীদেবীর পায়ের কাছে গাছকৌটা, আরশি, চিরুনি, পেঁচা, ধানের শিষ ইত্যাদি অঙ্কিত থাকে। দুই পাশে দুই সখীর পোশাক অনেকটা মুঘল অনুচিত্রে মহিলাদের মতো ঘাঘরা পরা, তাদের দুই হাতে চামর থাকে। সাধারণত ফরিদপুরী সরাতে চারটি প্যানেল থাকে। ওপরে লম্বালম্বি তিনটি ও নিচে আড়াআড়ি একটি; নিচে পেঁচা ও উপরিভাগে মাঝে ল‌ক্ষ্মী এবং দুই পাশে দুই সখী।


(৪) চারপুতলি বা যুগল সরা : ‘যুগল’ শব্দের অর্থ জোড়া, যদিও বৈষ্ণব শাস্ত্রে রাধা-কৃষ্ণের একসঙ্গে থাকার প্রতিমূর্তিকে ‘যুগলমিলন’ বা ‘যুগলমূর্তি’ বলা হয়ে থাকে। সরাচিত্রেও তাই রাধা-কৃষ্ণের যুগল রূপ অঙ্কন করা হয়। এই সরা কোথাও কোথাও ‘যুগল সরা’ নামেও পরিচিত। একটা বিষয় বেশ আশ্চর্যের, তা হলো সব সরাকেই ‘ল‌ক্ষ্মীসরা’ বলে, কিন্তু দুর্গার নিচে ল‌ক্ষ্মী আবার রাধা-কৃষ্ণের মূর্তির তলায় ল‌ক্ষ্মীর প্রতিমূর্তি অঙ্কিত হয়। যদিও রাধা-কৃষ্ণ বৈষ্ণবদের পূজিত দেবতা ও দুর্গামূর্তি শাক্তদের পূজিত দেবতা। কোথাও আবার দুই-ই অনুসৃত হয়। এসম্পর্কে লোকসংস্কৃতিবিদ হীরেন্দ্রনাথ মিত্র মনে করেন, শাক্ত ও বৈষ্ণবদের রুচির চাহিদা মেটাতেই দুর্গাসরা, কৃষ্ণসরার উদ্ভব হয়েছে।১৫


(৫) পাঁচপুতলি ল‌ক্ষ্মী বা পাঁচপুতলি সরা : পাঁচ পুতুল অর্থাৎ ল‌ক্ষ্মী, দুই সখী ও দুই দিকে দুইটি ময়ূর। পাঁচপুতলি সরার দুটি ভাগ—উপরিভাগে ময়ূরপঙ্খি নৌকার ন্যায় দুইদিকে দুটি নীল রঙের ময়ূর। এই ময়ূর-দুটির রূপকল্পনা এসেছে ময়ূরপঙ্খি নৌকা থেকে। পূর্ববঙ্গের ঢাকাই সরায় কালো ও লাল রঙে আঁকা হয় ময়ূরপঙ্খি নৌকা। এর ওপরে অবস্থান করেন দেবী ল‌ক্ষ্মী। তাহেরপুরের সরাতে এই ময়ূর অঙ্কনের বিষয়টি নকশাস্বরূপ ব্যবহৃত হয়, একটু মুখ ঘুরিয়ে। কিন্তু এর উৎস যে ঢাকাই সরা থেকে এসেছে তা বোঝা যায়। পাঁচপুতলি সরার নিচে ল‌ক্ষ্মীমূর্তি আঁকা হয়। সব সরার নিচেই আরেকটি ল‌ক্ষ্মীমূর্তি আঁকা হয় ছোট্ট অবয়বে। এর পাশে থাকে গাছকৌটা, আরশি, চিরুনি ইত্যাদি সব ব্যবহার্য বস্তুসামগ্রী। পাঁচপুতলি সরার আরেকটি ভাগ দেখা যায়। যথা—


পাঁচপুতলি ঢাকাই সরা : ঢাকাই সরার চতুর্দিকে উঁচু বেড় লাগানো থাকে। একে বহির্বন্ধনী বলা হয়। সাদা পৃষ্ঠদেশের ওপর প্রথমে কালো রং দিয়ে ময়ূরপঙ্খি নৌকা আঁকা হয়। এই সরা দুটি প্যানেলে ভাগ করে নিয়ে নিচের ভাগে ময়ূরপঙ্খি নৌকায় ল‌ক্ষ্মীদেবী ও দুই সখীকে আঁকা হয়। ওপরের ভাগে ল‌ক্ষ্মী-নারায়ণ আঁকা হয়। ঢাকাই সরাতেও দুবার মা ল‌ক্ষ্মীর প্রতিমূর্তি আঁকা হয়ে থাকে। এই সরার বহির্বন্ধনী লাল রঙের।


(৬) গজল‌ক্ষ্মী সরা : গজল‌ক্ষ্মী পুজো বহু পূর্বকাল থেকে বঙ্গদেশে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে, পূর্বে তা বলেছি। পশ্চিম ও মধ্য ভারতে যে গজল‌ক্ষ্মী ল‌ক্ষ্মীপুজোর দিন পূজিত হন, সেই মূর্তির উপরিভাগে দুটি হাতি ল‌ক্ষ্মীদেবীর ওপর পুষ্প ও জল বর্ষণরত দেখা যায়। বঙ্গদেেশর সরাচিত্রে গজল‌ক্ষ্মীর রূপকল্পনাটি ভিন্ন ধরনের। তিনি হাতির ওপর অধিষ্ঠান করেন। এই সরাচিত্রের দুটি প্যানেল—উপরিভাগে হাতির ওপর ল‌ক্ষ্মী অঙ্কিত হয় এবং দুই পাশে দুই সখী, নিচের ভাগে দুই ডানায় ভর করে উড্ডীয়মান পেচকের প্রতিমূর্তি শিল্পীরা এঁকে থাকেন।

(৭) সাতপুতলি ল‌ক্ষ্মীসরা : সাতপুতুল অর্থে দুর্গা, সিংহ, মহিষাসুর, ল‌ক্ষ্মী, গণেশ, সরস্বতী ও কার্তিক। এটি দুর্গাসরা হলেও একে ল‌ক্ষ্মীসরাই বলা হয়। কারণ, তলদেশে ল‌ক্ষ্মীদেবী অবশ্যই আঁকতে হবে। সরাটি দুর্গা ও ল‌ক্ষ্মী দুই পুজোতেই ব্যবহৃত হয়। সাতপুতলি এই সরায় দুর্গার দুরকম প্রতিকৃতি দেখা যায়। শিল্পীদের ভাষায়—(ক) একচোখো দুর্গা, অর্থাৎ দুর্গার মুখাবয়বটি একদিকে পাশ করা, ইংরেজিতে বলে ‘প্রোফাইল’ ভঙ্গিতে আঁকা। ল‌ক্ষ্মীদেবীর মুখাবয়বও এই ভঙ্গিতে আঁকা হয় অনেক সময়। (খ) দুইচোখো দুর্গা : সামনাসামনিভাবে তাকিয়ে থাকা দুর্গার প্রতিকৃতি আবার অন্য সরায় শিল্পীরা এঁকে থাকেন। এটিতে এক-তৃতীয়াংশভাবে দুর্গার মুখাবয়ব আঁকা থাকে। এই ভঙ্গিকে ‘সামনাসামনি’ বলা যায়। যেহেতু সামনে থেকে দুটো চোখই দেখা যায়, তাই শিল্পীরা বলে থাকেন ‘দুচোখো দুর্গা’। ইংরেজিতে বলে ‘ফ্রন্টাল ফেস’। এরকম মূর্তি শিল্পীরা আঁকেন, কারণ যাঁরা সরা কিনে থাকেন তাঁদের পারিবারিক বিধান বা ঐতিহ্য রয়েছে একচোখো বা দুইচোখো পুজো করার। তাই শিল্পী তাঁদের কথা মাথায় রেখে এমনটা এঁকে থাকেন।


(৮) আটপূজারিনি-সহ ল‌ক্ষ্মী : গোলাকার সরার মাঝে পদ্মের ওপরে সুখাসন ভঙ্গিতে ল‌ক্ষ্মীদেবী বসে থাকেন। তাঁর দুই পাশে চারজন করে পূজারিনি মহিলা বা সখীকে আঁকা হয়। শিল্পীরা এই সরাটির নাম রেখেছেন ‘আটপূজারিনি ল‌ক্ষ্মী’। পালেরা এই আটজন মহিলাকে পূজারিনি বললেও এর মধ্যে অষ্টনায়িকা বা অষ্টশক্তির প্রতিচ্ছবি ধরা পড়ে। অষ্টনািয়কারা হলেন—অভিসারিকা, বাসকসজ্জা, উৎকণ্ঠিতা, বিপ্রলব্ধা, কলহান্তরিতা, প্রোষিতভর্তৃকা, স্বাধীনভর্তৃকা ও খণ্ডিতা। অন্যদিকে অষ্টশক্তিরা হলেন—প্রিয়স্বরূপে, দয়িতস্বরূপে, প্রেমস্বরূপে, সহজাতিরূপে, নিজানুরূপে, প্রভুর স্বরূপে, তদনুরূপে ও স্ববিলাসরূপে এঁরা খ্যাত। সরাচিত্র লোকশিল্প হিসাবে বিবেচিত হলেও এর মধ্যে প্রাচীন প্রতিমাল‌ক্ষণ শাস্ত্র-অনুসারী দেবদেবীর মূর্তি নির্মাণের নানা প্রসঙ্গ ধরা পড়ে। আটপূজারিনি ল‌ক্ষ্মীসরা এখন আর আঁকা হয় না। একটা সময় এ বঙ্গে সোদপুর পািনহাটী-নিবাসী সরাশিল্পী বলাই পাল এইরকম সরা আঁকতেন।

পূর্ববঙ্গে কোজাগরী ল‌ক্ষ্মীপুজোকে কেন্দ্র করেই ল‌ক্ষ্মীসরার উদ্ভব ঘটেছিল। বঙ্গদেশে মাটি সহজল‌ভ্য উপাদান হওয়ার সুবাদে পালেদের কাছে ল‌ক্ষ্মীসরার অন্যতম উপাদান হয়েছিল মাটি। মৃন্ময়ী রূপ যেন ফুটিয়ে তুলেছিলেন শিল্পীরা সরাচিত্রণের মধ্য দিয়ে। সরাচিত্র ছিল মৃন্ময়ী রূপ নয়, চিত্রকারী রূপের প্রতিফলন; আর চিত্রকারী রূপটি বঙ্গদেশে বহু প্রাচীনকাল থেকেই অব্যাহত ছিল। সেই প্রাচীন শিল্পধারাটির অধঃ‌ক্ষেপিত রূপ হলো সরাচিত্র। কালেভদ্রে সেই সরাচিত্রণ বা সরাপটই হয়ে উঠল বাঙালির অন্যতম লোকজ সম্পদ। আর সম্পদ ও সমৃদ্ধির প্রতীক হলেন মা ল‌ক্ষ্মী। শুয়ে থাকলে যেমন সম্পদের নাশ হয়, তাই দেবী বলছেন—কে জেগে আছ পূর্ণিমা নিশি? এই রাতে দরজা খোল, সম্পদ নিয়ে যাও। তাই তো গৃহী কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে ঘুমান না, জেগে থাকেন; কখন আসবেন তিনি—এইভাবেই গৃহী প্রতী‌ক্ষায় থাকেন। আর সেই পরমপ্রেমময় প্রতী‌ক্ষার কল্পনাস্বরূপ গৃহী আসনে বসান সরাচিত্র, যাকে আমরা বলি ‘ল‌ক্ষ্মীসরা’।

তথ্যসূত্র
১. দ্রঃ “শৈলী দারুময়ী লৌহী লেপ্যা লেখ্যা চ সৈকতী। মনোময়ী মণিময়ী প্রতিমাষ্টবিধা স্মৃতা।”
(শ্রীমদ্ভাগবত, ১১।২৭।১২)
২. দ্রঃ সেন, সুকুমার, বঙ্গভূমিকা, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, কলকাতা, ১৯৯৯, পৃঃ ২২০
৩. দ্রঃ An Introduction to the State Archaeological Gallery of West Bengal by Sri Paresh Chandra Dasgupta, Directorate of Archaeology, West Bengal, 1963, p. Six (Plate No-II, IV)
৪. দ্রঃ Vats, Madhosarup, Excavations at Harappa, ASI, 1940, vol. II, Plate-LXIV
৫.দ্রঃ Gupta, Kamalakanta, Copper-plates of Sylhet, Lipika Enterprises Ltd., Sylhet, 1967, vol. I, pp. 68-69
৬. সেন, দীনেশচন্দ্র, অধ্যাপক চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, হৃষীকেশ বসু (সম্পাদিত), কবিকঙ্কন-চণ্ডী, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯২৬, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৬৭২
৭. দ্রঃ মিত্র, হীরেন্দ্রনাথ, বাংলার লোক-উৎসব ও লোকশিল্প, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, ১৪১৪, চিত্রসূচি, পৃঃ ৪১
৮. দ্রঃ সেন, সুকুমার, বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, ১৯৯১, পৃঃ ১৩
৯. দ্রঃ দাস, উপেন্দ্রকুমার, শাস্ত্রমূলক ভারতীয় শক্তিসাধনা, রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার, কলকাতা, ২০১১, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৯০৬ ও ৯৪৫
(“শালগ্রামে মণৌ যন্ত্রে প্রতিমায়াং ঘটে জলে।
পুস্তিকায়াঞ্চ গঙ্গায়াং শিবলিঙ্গে প্রসূনকে॥”
—মাতৃকাতন্ত্রভেদ, ১২।১-২)
১০. দ্রঃ শাস্ত্রমূলক ভারতীয় শক্তিসাধনা, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৯৪৪
১১. শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণম্, ১০।২০-২১
১২. ভট্টাচার্য, সুরেন্দ্রনাথ, সচিত্র বৃহৎ ল‌ক্ষ্মী চরিত্র, অ‌ক্ষয় লাইব্রেরি, কলকাতা, ২০১৯, পৃঃ ১৭
১৩. দ্রঃ Taranatha’s History of Buddhism in India, Translated from tibotan by Lama Chima, Aloka Chattopadhyaya, Motilal Bonarsidass Publishers Pvt. Ltd., Delhi, 1990, p. 348
১৪. দ্রঃ পাড়ুই, দীপঙ্কর, বাংলার সরা, সুপ্রকাশ, কলকাতা, ২০২০, পৃঃ ১৯—২৪
১৫. দ্রঃ বাংলার লোক উৎসব ও লোকশিল্প, পৃঃ ১৯৯

চিত্র পরিচয়

১. একলক্ষ্মী সরা পৃ.৮৬১
২. দুইপুতলী-লক্ষ্মী-নারায়ণ পৃ.৮৬২
৩. পাঁচপুতলী-ঢাকাই সরা পৃ.৮৬৩
৪. দুইপুতলী-দুইলক্ষ্মী সরা পৃ.৮৬৪
৫. তিনপুতলী সরা পৃ.৮৬৫
৬. সাতলক্ষ্মী-দুচোখো সরা পৃ.৮৬৬
৭. পাঁচপুতলী -ফরিদপুরী সরা পৃ.৮৬৭