বাঙ্গালীর ইতিহাস গ্রন্থে নীহাররঞ্জন রায় বাংলা সম্পর্কে বলেছেন : “ব্রহ্মাবর্ত ও আর্যাবর্তের হৃদয়দেশ হইতে বহুদূরে,

বাঙ্গালীর ইতিহাস গ্রন্থে নীহাররঞ্জন রায় বাংলা সম্পর্কে বলেছেন : “ব্রহ্মাবর্ত ও আর্যাবর্তের হৃদয়দেশ হইতে বহুদূরে, আর্যাবর্তের প্রাচ্য প্রত্যন্তে অবস্থিত এই দেশে আর্য জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা-দীক্ষার প্রসার ঘটিয়াছিল বহু বিলম্বে।”১ সেই বিলম্বের কারণ কী? প্রশ্নটি প্রাসঙ্গিক হলেও তার উত্তর অনুসন্ধান করা এই প্রবন্ধের উদ্দেশ্য নয়, বরং সেই বিলম্বিত তথাকথিত ‘আর্য’ জ্ঞানচর্চার প্রলম্বিত রূপটির অন্তত কিছুটা খুঁজে পাওয়ার একটা প্রচেষ্টা করাই এই প্রবন্ধের উদ্দেশ্য। প্রাচীনকালে বাংলার শিক্ষাব্যবস্থা কেমন ছিল সে-সম্পর্কে লেখালেখি করার উপাদান বেশ অল্প, তবে মধ্যযুগে রচিত একাধিক মঙ্গলকাব্য এবং ইউরোপীয়দের তৈরি কয়েকটি রিপোর্ট থেকে বাংলার শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে অন্তত কিছু তথ্য পাওয়া যায়। ব্রিটিশযুগের আগে বাংলার একজন শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হতো পাঠশালায়। জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে এই পাঠশালাগুলি ছিল সকলের জন্য উন্মুক্ত। এখানকার শিক্ষকরাও যেকোনো বর্ণের হতে পারতেন।২ প্রাথমিক শিক্ষায় অক্ষর-পরিচয়, সাধারণ গণিত, জমিজমার হিসাব-নিকাশ ইত্যাদি শেখার পর একজন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণের উপযুক্ত হতো। সেই উচ্চশিক্ষার কেন্দ্রগুলিকে সেযুগে বলা হতো টোল ও চতুষ্পাঠী। উচ্চশিক্ষার ভাষা ছিল সংস্কৃত। সংস্কৃতচর্চায় ব্রাহ্মণ জাতিই যে অগ্রগণ্য ছিল—এব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই, তবে মধ্যযুগে অব্রাহ্মণদেরও সংস্কৃতচর্চার কিছু কিছু উদাহরণ পাওয়া যায়। ডঃ সুকুমার সেন যথার্থই বলেছেন : “ন্যায় ও স্মৃতি শাস্ত্রের চর্চ্চা ছিল ব্রাহ্মণদের একচেটিয়া। তবে ব্যাকরণ কাব্য পুরাণ প্রভৃতির চর্চ্চা অন্যজাতির লোকেও করত।…দক্ষিণরাঢ়ে স্থানে স্থানে এখনও ডোম ও বাগদী পণ্ডিতের টোল আছে। সেখানে ব্যাকরণ-কাব্য ইত্যাদির পঠন-পাঠন হয় এবং বামুনের ছেলেরাও পড়ে।”৩ শুধুই ‘ছেলেরা’ নয়, স্ত্রীজাতির সংস্কৃত-চর্চার উদাহরণও বঙ্গদেশের ইতিহাসে আছে। এপ্রসঙ্গে রাঢ়দেশের হটী বিদ্যালংকারের এবং হটু বিদ্যালংকারের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। লক্ষ্য করার ব্যাপার হলো, সেকালের সংস্কৃত উচ্চশিক্ষাকেন্দ্রগুলিকে কোথাও বলা হয়েছে ‘টোল’, আবার কোথাও বলা হয়েছে ‘চতুষ্পাঠী’। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত বঙ্গীয় শব্দকোষ গ্রন্থে ‘চতুষ্পাঠী’ শব্দের অর্থ—“চতুর্ব্বেদাধ্যয়নস্থান, ছাত্রাধ্যয়নগৃহ, চৌপাঠী, টোল।” অর্থাৎ ‘চতুষ্পাঠী’র একটি অর্থ ‘টোল’ও বটে। বর্তমান কলকাতার সংস্কৃত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগের নাম ‘Department of Traditional Oriental Learning (TOL)’। তাই ‘টোল’ শব্দটির উৎপত্তি বিদেশিদের হাত ধরে কি...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in