কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শেষ হইয়াছে। শ্রীকৃষ্ণ একে একে সকলের নিকট বিদায় লইতেছেন। কুন্তীর সহিত
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শেষ হইয়াছে। শ্রীকৃষ্ণ একে একে সকলের নিকট বিদায় লইতেছেন। কুন্তীর সহিত সাক্ষাৎ হইল। তিনি ভক্তিবিনম্র চিত্তে প্রণাম নিবেদনপূর্বক তাঁহার স্তব করিতে লাগিলেন। স্তবের প্রারম্ভে ‘নমস্যে পুরুষং ত্বাদ্যং ঈশ্বরং প্রকৃতেঃ পরং’ উচ্চারণ করিয়া কুন্তী শ্রীকৃষ্ণ-চরণে নিজেকে সমর্পণ করিয়াছেন। শরণাগত ভাবই যে ভগবদুপাসনার অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায়, তাহা এই স্তবের প্রতিটি ছত্রে ফুটিয়া উঠিয়াছে। এই স্তবেরই একটি স্থানে কুন্তী প্রার্থনা করিলেন—সর্বদাই যেন তাঁহার বিপদ লাগিয়া থাকে, কারণ বিপদের মাঝেই তো জগদ্গুরু পাশে আসিয়া দাঁড়ান। বিপদেই তাঁহার দর্শন পাওয়া যায়। সেই দর্শন কীরূপ, সেই প্রসঙ্গে বলিতেছেন—‘অপুনর্ভবদর্শনং’ অর্থাৎ সেই দর্শন দ্বারা জীবের সংসারমুক্তি হয়। কুন্তী সেইরূপ বিপদকেই কামনা করিতেছেন, যাহা দ্বারা ভগবানের মোক্ষপ্রদ ‘দর্শন’ লাভ হয়। বিপদ এইখানে মানবের চিত্তকে ভগবন্মুখী করিবে। ভক্ত বিপদ চাহিতেছেন কিন্তু তাঁহার সহিত ভগবানকে বাঁধিতেছেন। ভক্ত-ভগবানের এ এক অপূর্ব সম্পর্ক! শ্রীকৃষ্ণ-জীবনে ভক্ত-ভগবানের এমন অপূর্ব সম্পর্কের অজস্র দৃষ্টান্ত দেখিতে পাওয়া যায়। ভাগবত জুড়িয়া রহিয়াছে এইসকল লীলাকাহিনি। বিভিন্ন জন বিভিন্ন দৃষ্টিতে ভগবানকে দেখিতেছে, নানাভাবে তাঁহার রসাস্বাদন করিতেছে। শ্রীকৃষ্ণ ‘অখিলরসামৃতমূর্তি’। রসাস্বাদনকারী ভক্তগণ নিজ নিজ হৃদয়ের ভাবানুসারে অনন্ত রসময় শ্রীকৃষ্ণকে আস্বাদন করিয়া থাকে। শ্ৰীকৃষ্ণ নিজ ঐশ্বর্যস্বরূপে জগৎকে বিস্মিত করিলেও তাঁহার আরেকটি রূপ রহিয়াছে ভক্তের জন্য। ব্রজবাসী সখা, গোপ-গোপীদের শুদ্ধ ভালবাসায় তিনি বাঁধা পড়িয়াছেন। যেখানে শুদ্ধ প্রেম সেখানেই তিনি সম্পূর্ণ অধীন। ভগবান বলেন : “অহং ভক্তপরাধীনো হ্যস্বতন্ত্র ইব দ্বিজ।/ সাধুভির্গ্রস্তহৃদয়ো ভক্তৈর্ভক্তজনপ্রিয়ঃ।” অর্থাৎ, আমি ভক্তের অধীন এবং স্বাধীনতা-রহিত; ভক্তজন আমার প্রিয় ও ভক্তগণ দ্বারা আমার হৃদয় আকৃষ্ট রহিয়াছে। এই তাঁহার অতলস্পর্শী প্রেমমাধুর্য। এই অধীনতার জন্যই তিনি এত মধুময়। একবার মা যশোদা দধিমন্থন করিতেছেন। এমন সময় বালক কৃষ্ণের স্তন্যপানের ইচ্ছা হওয়ায় তিনি দধিমন্থন বন্ধ রাখিয়া স্তন্যপান করাইতে লাগিলেন, আর মাঝে মাঝে পুত্রের স্মিতহাস্য মধুরবদন অনিমেষ নয়নে দেখিতে লাগিলেন। এদিকে উনানে দুধ বসানো ছিল, তাহা উথলিয়া উঠিতেছে। মা তাহা নামাইতে গেলেন। বালক রাগিয়া অস্থির হইয়া একখণ্ড পাথর দিয়া দধিমন্থনের পাত্রটা ভাঙিয়া দিলেন এবং অশ্রুসিক্ত নয়নে ঘরের ভিতরে...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹100/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in