যখন ছাপানো বই বাংলার বাজারে আসেনি বা এলেও তা সাধারণ মানুষের ঘর পর্যন্ত পৌঁছায়নি, তখন মানুষের সাহিত্যপ্রীতি মেটানো বা ধর্মগ্রন্থ-চর্চার একমাত্র মাধ্যমই ছিল ‘পুঁথি’।

যখন ছাপানো বই বাংলার বাজারে আসেনি বা এলেও তা সাধারণ মানুষের ঘর পর্যন্ত পৌঁছায়নি, তখন মানুষের সাহিত্যপ্রীতি মেটানো বা ধর্মগ্রন্থ-চর্চার একমাত্র মাধ্যমই ছিল ‘পুঁথি’। বঙ্গদেশে পুঁথিচর্চার ধারাটি খুব প্রাচীন। পাল ও সেন রাজাদের রাজত্বকাল থেকেই বঙ্গদেশের নানা স্থানে অনুলিখিত পুঁথি পাওয়া গেছে। অবশ্য তার আগেও পুঁথিলেখার চল নিশ্চয়ই ছিল, কারণ খ্রিস্টপূর্ব যুগ থেকেই বাংলার নানা স্থানে প্রচুর অভিলেখ পাওয়া যায়। আচার্য হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে, পূর্ববঙ্গের রাজা হরিবর্মদেবের আমলে লেখা ‘বিমলপ্রভা’ পুঁথিতেই প্রাচীনতম বঙ্গাক্ষর দেখা যায়। এই পুঁথিটির অনুলিপির সময়কাল খ্রিস্টীয় দশম থেকে একাদশ শতাব্দী।১ বঙ্গদেশে সংস্কৃত ভাষার পুঁথিগুলি একত্রিত করা হলে যে-পুঁথির সংখ্যা নিশ্চিতভাবে সর্বাধিক থাকবে, তা হলো শ্রীশ্রীচণ্ডী। সংস্কৃত শাস্ত্রগ্রন্থগুলির মধ্যে একমাত্র শ্রীশ্রীচণ্ডীর প্রতিটি শ্লোকই মন্ত্ররূপে ব্যবহৃত হয়। সুতরাং এই গ্রন্থ আদ্যাশক্তির মন্ত্রময়ী রূপ হিসাবে পূজিত হয়। আর এই কারণেই গ্রন্থটির পবিত্রতা লোকসমাজে এক অন্য মাত্রায় প্রতিষ্ঠিত। তাই শ্রীশ্রীচণ্ডীর পুঁথি অনুলেখন বা পঠন সম্পর্কে নানাবিধ বিধিনিষেধ দেখা যায়। বিধিনিষেধের প্রধান উদ্দেশ্যই হলো গ্রন্থের পবিত্রতা যথাসম্ভব রক্ষা করা। যেমন, বঙ্গদেশে বেশির ভাগ শ্রীশ্রীচণ্ডীর পুঁথি তালপাতাতে লেখা। যেখানে পুরাণ, কাব্য, ব্যাকরণ, স্মৃতিশাস্ত্র, ন্যায়শাস্ত্র, জ্যোতিষশাস্ত্র প্রভৃতি বিষয়ের সংস্কৃত গ্রন্থগুলি তুলট কাগজে অনুলিখিত হয়েছে, সেখানে শ্রীশ্রীচণ্ডী তালপাতায় লেখা। তুলট কাগজের স্থায়িত্ব তালপাতার থেকে অনেক বেশি, একটি পাতায় অনেকটা অংশ জুড়ে লেখাও যায়। তালপাতায় নানাবিধ অসুবিধা থাকে। একে তো পাতা ছোট, সাধারণত তিনটি কী খুব জোর চারটি করে পঙ্‌ক্তি লেখা যায়। তার ওপর তালপাতা খুবই ভঙ্গুর, অনেক ক্ষেত্রে কালিও মুছে যাওয়ার সমস্যা দেখা যায়। এমন নানাবিধ সমস্যা থাকলেও বেশির ভাগ চণ্ডী-পুঁথিই কেন তালপাতায় লেখা—এই প্রশ্নের উত্তরেও উঠে আসে সেই পবিত্রতা র‌ক্ষা ও তা লঙ্ঘনে ভয়। তুলট কাগজ তৈরিতে অন্যতম উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হতো ভাতের মাড়। এছাড়াও ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ এই পাতা নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত থাকত। সর্বোপরি যোগিনীতন্ত্র-এ পুঁথি কেমন হবে, কী উপাদানের ওপর লেখা হবে ইত্যাদি বিষয়ে স্বয়ং মহাদেব পার্বতীকে নির্দেশ দিয়েছেন। পুঁথির পাতা...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in