এই তো শরৎ এসেছে। আশ্বিনের শারদপ্রাতে যে আলোকমঞ্জীর বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে
এই তো শরৎ এসেছে। আশ্বিনের শারদপ্রাতে যে আলোকমঞ্জীর বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে অনুরণিত হয়ে উঠেছে, আদৌ কি তা প্রাচীন? যখনি সে গদ্য-সুর প্রাণের মাঝে বেজে ওঠে, বাঙালি তখন হাতড়াতে থাকে ফেলে আসা বাড়িতে আদুরে বারান্দার শৈশব-কোণ আর এক চিলতে আধো-আলো ভোর। উঠোনের অঁাধার-আকাশ জুড়ে মিটিমিটি হাসে শিউলিফুলের কত কত শুকতারা! কুড়োতে গেলে ঘাসের আগায় শিশিরে পা ভিজে আসে। উঠোন পেরিয়েই সামনের দুর্গাদালানে এই ভোরেও কেউ দুটো ধূপ জ্বেলে গেছে। সে আটপৌরে গন্ধ শিউলির হিমেল সুবাসে মিলেমিশে এখনো কি নাসাপথ আকুল করে তুলছে না? চুন-সুরকির দালানের গায়ে গায়ে আড়াইশো বছরের নোনা-ধরা ছাপ যে এখনো স্পষ্ট জেগে! আবহে বেজে চলেছে সেই উদাত্ত গদগদ আবৃত্তি—“দেবীর আবির্ভাবের এই শুভ বার্তা প্রকাশিত হলো।…” মা আর বড়রা নিঝুম তাকিয়ে শুনছে। আপনার শৈশবে তারা তখন পুজোর রোদে সোনালি হচ্ছে। আহা! মহালয়ার সেই আলতা-গোলা ভোর মানেই মহিষাসুরমর্দিনীর অনুশ্রবণ, ঘরে ফেরার ডাক, বাঙালির বাৎসল্যে ব্রহ্মময়ীর বালিকাবেশ। আর সেই অতি চেনা মহিষাসুরবধ। যুদ্ধে রোমাঞ্চ কিছু নেই; তবু ফি-বছরই নতুন; আজও। রণচণ্ডী-মূর্তিতে সেজে উঠেও দেবী বড় কোমলা। তিনি অগ্নিবর্ণা ও অগ্নিলোচনা হয়েও বড় স্নিগ্ধা। দেবতাগণের সম্মিলিত তেজঃপুঞ্জ থেকে দেবী সদ্য সাকারা হয়েছেন। তারপর দেবতারা একে একে অস্ত্র-শস্ত্র দিয়ে তাঁকে সাজিয়ে দিলেন। তাঁর মুকুট গগনচুম্বী, পদভারে পৃথিবী আনতা। নিখিল আনন্দ ঘনীভূত হয়ে যেন তিনি প্রকাশিতা হলেন। চোখ বুজলেই অতীত দালানের সেই দেবীপ্রতিমা বাঙালি আজও দেখতে পায়। তাদের স্মৃতি-সজল ভোরে ভাষ্যপাঠের সঙ্গে আজও তা মিলিয়ে দেখে নেয়। নস্টালজিয়া তখন প্রেমবাষ্প হয়ে কন্যাকুমারীকে আগলে ধরে। সমবেত শৈশব দেবতা হয়ে তাঁর আরাধনা গায়। স্মৃতি তাই বড় আদরিণী।
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹100/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in