শ্রীচৈতন্যদেবের জীবনসাহিত্যের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য এই যে, তাঁহার উপদেশাবলি আলাদাভাবে বিশেষ পাওয়া যায় না,
শ্রীচৈতন্যদেবের জীবনসাহিত্যের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য এই যে, তাঁহার উপদেশাবলি আলাদাভাবে বিশেষ পাওয়া যায় না, তাহা মিশিয়া রহিয়াছে তাঁহার জীবনের ধারাপাতের মধ্যেই। তাঁহার জীবনাচরণ দেখিয়াই আমাদের চেতনার উন্মেষ ঘটিতে পারে। শ্রীশ্রীচৈতন্যচরিতামৃত-এর অন্ত্যলীলার বিংশতিতম পরিচ্ছেদে মহাপ্রভু-বিবৃত আটটি শ্লোক, যাহা ‘শিক্ষাষ্টক’ নামে অধিক পরিচিত, তাহা প্রত্যক্ষ হয়। এই অমূল্য রচনা মহাপ্রভুর জীবনেরই মহাভাষ্য। একাধারে ব্যাকুলতা ও সাধনমার্গের এক অসামান্য দর্পণ এই অষ্টশ্লোক। মহাপ্রভুর অন্তরের গভীরতা ও উপলব্ধি এই শ্লোকগুলির মধ্য দিয়া মূর্ত হইয়াছে। তাঁহার এই শ্লোকগুলির অনবদ্য ভাষ্য ফুটিয়া উঠিয়াছে শুধুমাত্র মহাপ্রভুর জীবনেই নহে, তাঁহার অন্তরঙ্গ পার্ষদগণের অনেকের মধ্যেও। এই অষ্টশ্লোকের মধ্যে প্রসিদ্ধ—“তৃণাদপি সুনীচেন তরোরপি সহিষ্ণুনা।/ অমানিনা মানদেন কীর্ত্তনীয়ঃ সদা হরিঃ।” অর্থাৎ, তৃণ হইতেও অবনত এবং বৃক্ষ হইতেও সহিষ্ণু হইয়া, নিজ অভিমান ত্যাগ করিয়া এবং অপরকে সম্মান প্রদর্শন করিয়া সর্বদা শ্রীহরির কীর্তন করা উচিত।পুরীতে অবস্থানকালে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু নিত্য শ্রীজগন্নাথ-দর্শনে যাইতেন। এই ক্ষণে তিনি জগন্নাথের স্বরূপে সাক্ষাৎ ব্রজেন্দ্র-নন্দনকে অবলোকন করিতেন। একদিন তিনি মন্দিরে প্রবেশ করিয়া গরুড়স্তম্ভের নিকট দাঁড়াইয়া প্রভুদর্শনে মগ্ন হইয়া আছেন। এমতাবস্থায় এক স্ত্রীলোক অসংখ্য দর্শনার্থীর সমাগমে অন্তরালবর্তী হইয়া প্রভুকে কিছুতেই দর্শন করিতে পারিতেছিলেন না। দর্শনলাভে অত্যন্ত ব্যাকুল ও উৎকণ্ঠিত হইয়া তিনি অবশেষে গরুড়স্তম্ভে চড়িলেন এবং এক পা মহাপ্রভুর স্কন্ধে দিয়া তন্ময় হইয়া জগন্নাথ-দর্শন করিতে লাগিলেন। ভাবাবেশে মোহিত হইয়া তিনি যে প্রভুর স্কন্ধে পা দিয়াছেন তাহা বুঝিতে পারেন নাই। ইতিমধ্যে প্রভুর সেবক গোবিন্দ এই অদ্ভুত কাণ্ড দেখিয়া স্ত্রীলোকটিকে নিজকর্ম হইতে বিরত করিতে চাহিলেন। কিন্তু মহাপ্রভু সেবক গোবিন্দকে নিবৃত্ত করিয়া বলিলেন, স্ত্রীলোকটি যেমন হৃষ্টচিত্তে জগন্নাথ প্রভুর দর্শন করিতেছে, তেমনই করুক। এতক্ষণ স্ত্রীলোকটির বাহ্য বিবেচনা ছিল না। তন্ময়তা ভাঙিলে তিনি বুঝিলেন কাহার স্কন্ধে পা রাখিয়া তিনি জগদীশ্বরকে দর্শন করিতেছেন! মহা অপরাধ হইয়াছে ভাবিয়া তিনি বিব্রত হইয়া শ্রীচৈতন্য-চরণে দণ্ডবৎ প্রণত হইলেন। প্রভুর নিকট ক্ষমাভিক্ষা করিলেন। প্রভুর প্রতি তাঁহার আর্তি দেখিয়া অভিভূত চৈতন্যদেব আক্ষেপ করিলেন—জগন্নাথ তাঁহাকে এতটা আর্তি দেন নাই। অভিলাষী চিত্তে এই ভাগ্যবতী স্ত্রীলোকের বন্দনা করিয়া...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹100/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in