বাংলা নববর্ষের গোড়ায় বৈশাখের সূত্রে গাঁথা আছে এক শৈশবের স্মৃতি—গ্ৰামের বাড়ির অনতিদূরে এক
বাংলা নববর্ষের গোড়ায় বৈশাখের সূত্রে গাঁথা আছে এক শৈশবের স্মৃতি—গ্ৰামের বাড়ির অনতিদূরে এক প্রকাণ্ড অশ্বত্থগাছ ও তার শীতল ছায়া। শুধু বৈশাখ নয়, বছরভর প্রতিদিন ভগবান-বাঁধে স্নান সেরে ফেরার পথে হরিমতি পিসিমা একঘটি জল ঐ গাছের গোড়ায় দিয়ে ভক্তিভরে প্রণাম করতেন। কোনোদিন কোনোভাবেই তার অন্যথা হয়নি। তবে বৈশাখে আরো অনেকেই ঐ অশ্বত্থের গোড়ায় জল দিত; লাল সুতো জড়িয়ে তেকাঠি যোগে বা দড়িতে ছোট ফুটোওয়ালা মাটির ভাঁড় ঝুলিয়ে তাতে জল ঢালত। তাকে বলা হতো ‘বসনধারা’। সারা বৈশাখ মাস বা পরব-পার্বণের বিশেষ দিনে গ্ৰামের কীর্তনীয়ার দল আটচালায় আসর বসানোর আগে খোল-করতালে গেয়ে ঐ অশ্বত্থবৃক্ষ প্রদক্ষিণ করে ফিরত। না, ঐ অশ্বত্থের তলে কোনো ধর্মরাজ ঠাকুর বা হাতি-ঘোড়ার মূর্তি ছিল না। অশ্বত্থবৃক্ষই ছিল দেবতাস্বরূপ। পিসিমা বলতেন—“বৃক্ষই দ্যাওতা।” কথাখানি বলেই করজোড়ে কপালে হাত ঠেকাতেন। পিসিমা চলে গেছেন, যদিও তারও আগে ঐ প্রবীণ অশ্বত্থ রাস্তার শ্রীবৃদ্ধিতে কাটা পড়েছে। আটচালাও নেই। কীর্তনের আসর আর জমে না। অথচ শৈশবের স্মৃতিতে সতেজ হয়ে আছে। সারা বৈশাখ জুড়ে সন্ধেবেলায় কীর্তনের দল বাড়ি বাড়ি আসত। খালিপায়ে হেঁটে আসা কীর্তনীয়ারা উঠোনে দাঁড়ালে মাটির আঙিনায় জল ঢালা হতো ঘড়া ঘড়া। দিনের তীব্র তাপদাহ শেষে, ভেজা উঠোনে তারা গাইত ননিচোরা ব্রজকিশোরের দস্যিপনার কাহিনি। কীর্তনের দলে থাকত পাড়ারই কোনো চঞ্চল নটকিশোর, মাখনচোরার ভূমিকায় সে তখন সবার নয়নমণি। বাড়ির মা-পিসিমারা কীর্তনীয়াদের জন্য ভিজিয়ে রাখতেন ছোলা, আর সঙ্গে বাড়ির তৈরি আখের গুড়। কীর্তনের দল নেচে গেয়ে অন্য বাড়ির উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লে পিসিমা উঠোনের ভেজা মাটি কপালে ঠেকাতেন। বৈশাখ সংক্রান্তিতে আসত গাজনের সন্ন্যাসীরা। বৈশাখ মাস জুড়ে গ্ৰামে ঢোকার মুখের বটতলায় বসত জলসত্র। রৌদ্রের দহনে দীর্ঘ পথ হেঁটে আসা পথিকের খানিক জিরান কুঁজোর ঠাণ্ডা জল আর গুড়ে। এমন ঝাঁ ঝাঁ দুপুরে হঠাৎ হাজির হতো ‘হর-পার্বতী’রূপে বহুরূপী ভাই-বোন। একদিন দেখা গেল, জলসত্রের কাছে হাতে গুড় নিয়ে চেটে খাচ্ছে ‘পার্বতী’! একবার পাড়ার বুবলাদা আইসক্রিম কিনে দিয়েছিল, ওদের মুখে খেলেছিল খুশির আলো; বরফগোলা...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹100/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in