দেবী দুর্গার সাথে ‘শারদা’ নামটা বেশ আপন করা আদরণীয়া বলে মনে হয়। শরৎকালে পূজা হয় বলে ‘শারদা’। এছাড়া স্মার্ত রঘুনন্দন তাঁর তিথিতত্ত্বম্
দেবী দুর্গার সাথে ‘শারদা’ নামটা বেশ আপন করা আদরণীয়া বলে মনে হয়। শরৎকালে পূজা হয় বলে ‘শারদা’। এছাড়া স্মার্ত রঘুনন্দন তাঁর তিথিতত্ত্বম্ গ্রন্থের দুর্গোৎসব প্রকরণে বলেছেন—কালিকাপুরাণে কামাখ্যাপঞ্চমূর্তি প্রকরণে দেখা যায়, যেহেতু পুরাকালে শরৎকালীন নবমীতে দেবগণ কর্তৃক দেবী বোধিতা হয়েছিলেন, এইজন্য তিনি পীঠস্থানে এবং লোকসমাজে শারদা নামে বিখ্যাত হয়েছেন— “শরৎকালে পুরা যস্মান্নবম্যাং বোধিতা সূরৈঃ।শারদা সা সমাখ্যাতা পীঠে লোকে চ নামতঃ।।”১ যদিও কবিগুরুর শরতের বর্ণনার সাথে মায়ের ঐ রণরঙ্গিণী রূপের মিল পাওয়া যায় না, কিন্তু ঋষিরা যে-নামে তাঁকে পূজা করেছেন তার একটা বাস্তব রূপ থাকবে না তা হতে পারে না। শারদা শব্দটি এসেছে ‘শৃ’ ধাতু থেকে। অর্থ—বধ ও হিংসা, অর্থাৎ হিংসাত্মক যা কিছু ধ্বংস করে সৃষ্টিকে সমৃদ্ধ করে তোলেন যিনি তিনিই ‘শারদা’। এখন প্রশ্ন, আশ্বিন মাসে শরৎকালেই বা এই পূজা করব কেন? এই প্রসঙ্গেও স্মার্ত রঘুনন্দনের দুর্গাপূজাতত্ত্ব গ্রন্থের দুর্গোৎসব প্রকরণে কাত্যায়নীতন্ত্র-এর বচন উল্লেখ করে বলা হয়েছে— “রামরাবণয়োর্যুদ্ধে দুর্গা রামেণ পূজিতাঅবধীদ্রাবণং রাম ঈষেমাসি প্রপূজৃণাৎতেন লোকাশ্চরিষ্যন্তি দুর্গায়াঃ শারোদোৎসবম্।”২ এই বচন অনুসারে কেবল আশ্বিন মাসে পূজার প্রামাণ্যতা নয়, এই শারদীয়া পূজাকে শারদোৎসবের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এখানে ‘ঈষেমাসি’ (আশ্বিন মাস) শব্দটি থাকায় কোনো কোনো বছর দুর্গাপূজা কার্তিক মাসে হলেও পূজার সংকল্পবাক্যে আশ্বিন মাস উল্লেখ করতে হয়। যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি লিখেছেন : “দুর্গাপূজা শরৎকালীন যজ্ঞ।” এই “শরৎকালীন যজ্ঞই রূপান্তরিত হইয়া দুর্গাপূজা হইয়াছে।” ‘দুর্গা’ শব্দটি এসেছে ‘দুর্গ’ থেকে। ‘রমসে দেবি দুর্গেষু দুর্গেশ্বরি নমোঽস্তু তে।’ (দেবীপুরাণম্, ৮৩।৬৩) ‘প্রতিদুর্গং দুর্গরূপাঃ পরিতঃ পরিবাসয়।’ (স্কন্দ-পুরাণম্, কাশীখণ্ডম্, উত্তরার্দ্ধম্, ৬৯।১৭৮) তবে এই দুর্গ শুধু ঐহিক দুর্গই নয়, জীবের অভ্যন্তরে স্বপুর দুর্গ অর্থাৎ আত্মার যে-অবস্থানভূমি রয়েছে তাকেও রক্ষা করেন দেবী দুর্গা। মার্কণ্ডেয়পুরাণ-এ দুর্গম ভবসাগরকে দুর্গ বলে। ভরসাস্থল একমাত্র তরণী দুর্গা—‘দুর্গাসি দুর্গভবসাগরনৌরসঙ্গা।’ (৮৪।১০) দুর্গাসুর বধের জন্য দেবীর নাম দুর্গা—‘দুর্গমাসুরহন্ত্রীত্বাৎ দুর্গেতি মম নাম যঃ।’ (দেবীভাগবতম্, ৭।২৮।৭৯) শ্রীশ্রীচণ্ডীর (১১।৪৯-৫০) সেই বিখ্যাত শ্লোক— “তত্রৈব চ বধিষ্যামি দুর্গমাখ্যং মহাসুরম্।।দুর্গাদেবীতি বিখ্যাতং তন্মে নাম ভবিষ্যতি।” অধ্যাত্মসম্পদে বলীয়ান হলেই কেবল তাঁকে পাওয়া যায়।...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹100/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in