দহিজুড়ি গ্রাম ঝাড়গ্রাম জেলার বিনপুর-১ ব্লকের অন্তর্গত। প্রাচীন রাঢ়বাংলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল

দহিজুড়ি গ্রাম ঝাড়গ্রাম জেলার বিনপুর-১ ব্লকের অন্তর্গত। প্রাচীন রাঢ়বাংলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল এই ঝাড়গ্রাম। অতীতে ভাগীরথীর পশ্চিম কূলকে বলা হতো ‘রাঢ়’। ঠিক কোন সময়কাল থেকে রাঢ়বাংলায় জৈন ধর্মের প্রসার শুরু হয়েছিল সেবিষয়ে ঐতিহাসিকগণের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। জৈন ধর্মগ্রন্থ আচারঙ্গ সূত্র থেকে জানা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে জৈন ধর্মের চব্বিশতম তীর্থঙ্কর ভগবান মহাবীর (খ্রিস্টপূর্ব ৫৯৯—খ্রিস্টপূর্ব ৫২৭) শিষ্য-প্রশিষ্যসহ রাঢ়দেশে ভ্রমণ করে ধর্মপ্রচার করেছিলেন। সম্ভবত সেই সময় থেকে রাঢ়বাংলায় জৈন ধর্মের চর্চা শুরু হয়। পরে জৈন সন্ন্যাসীদের পথ অনুসরণ করে রাঢ়বাংলায় আগমন ঘটে জৈন বণিকদের। সুদূর অতীত থেকে রাঢ়বাংলায় বিশেষত তৎকালীন ঝাড়গ্রামের পাহাড়-মালভূমি অঞ্চলে তাম্র ও লৌহ নিষ্কাশন শুরু হয়েছিল। সেকালের এক শ্রেণির মানুষ তাম্র ও লৌহ আকরিক কাঠের উনুনে গলিয়ে তামা ও লোহা নিষ্কাশন করত। জৈন বণিকদের যোগদানে রাঢ়ের তৎকালীন ধাতুশিল্প ও ধাতু-ব্যবসায় প্রভূত উন্নতি ঘটে। জৈন বণিকরা রাঢ়ের ধাতব ও বনজ পণ্য নদীপথে তাম্রলিপ্ত বন্দরে প্রেরণ করত। তারা ছিল অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ। ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে তারা পরম নিষ্ঠার সঙ্গে নিজেদের ধর্ম অনুশীলন করত। ধর্মচর্চার জন্য নদীকূলবর্তী প্রতিটি বাণিজ্যকেন্দ্রে তারা গড়ে তুলেছিল বহু সুষমামণ্ডিত দেউল। দেউল-মধ্যে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল আরাধ্য দেবতা তীর্থঙ্করের অনুপম মূর্তি। দেউলগাত্রে ও দেউলপ্রাঙ্গণে ছিল পার্শ্বদেবদেবীর অগণিত মূর্তি। এগুলি নিশ্চিতভাবে সেযুগের অনুপম ভাস্কর্যের অনন্য নিদর্শন। রাঢ়বাংলা কখনো ছিল মগধের অধীন, আবার কখনো কলিঙ্গের। সেকালের মগধ এবং কলিঙ্গের অধিপতিগণের অনেকেই ছিলেন জৈন ভক্ত। জৈন শাস্ত্র বৃহৎ কথা কোষ থেকে জানা যায়, মগধাধিপতি চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য (খ্রিস্টপূর্ব ৩২১—খ্রিস্টপূর্ব ২৯৭) ছিলেন জৈন সন্ন্যাসী আচার্য ভদ্রবাহুর শিষ্য। কলিঙ্গাধিপতি খারবেল (খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় বা খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতক) ছিলেন জৈন ধর্মাবলম্বী। ভুবনেশ্বরের নিকটে উদয়গিরির হাতিগুম্ফা শিলালিপি থেকে খারবেলের ধর্ম-পরিচয় পাওয়া যায়। জৈন কল্পসূত্র অনুযায়ী আচার্য ভদ্রবাহুর চার প্রধান শিষ্যের মধ্যে একজন ছিলেন আচার্য গোদাস—যিনি ছিলেন ‘গোদাসগণ’ মতের প্রবর্তক। এই মতের চারটি শাখা—তাম্রলিপ্তিকা, কোটিবর্ষিকা, পৌণ্ড্রবর্ধনীকা এবং দাসীখর্বটীকা। এগুলির মধ্যে প্রথম তিনটি শাখার ভৌগোলিক অবস্থান নির্ণয় সম্ভব হলেও চতুর্থ শাখাটির অবস্থান সম্বন্ধে...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in