পুরুলিয়া জেলার অন্তর্গত বাগদা নামক এক নিতান্ত সাধারণ গ্রাম কী করে শ্রীরামকৃষ্ণ-ভাবসমুদ্রের ক্ষুদ্র
পুরুলিয়া জেলার অন্তর্গত বাগদা নামক এক নিতান্ত সাধারণ গ্রাম কী করে শ্রীরামকৃষ্ণ-ভাবসমুদ্রের ক্ষুদ্র দ্বীপে পরিণত হলো তার কাহিনি বিস্ময়করই বটে। শতাধিক বছর আগের কথা, তখনো বাগদা মানভূম জেলার মধ্যে। গ্রামটির অবস্থান পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া থেকে প্রায় সমদূরত্বে কমবেশি ৫০ কিলোমিটারের কাছাকাছি। গ্রামের চারদিকেই শাল, আমলকী, হরীতকী ইত্যাদি গাছের জঙ্গল। জঙ্গলের মাঝে পুষ্করিণী, মনোরম ও শান্ত পরিবেশ। গ্রামের বাসিন্দা বলতে কুলীন বাঁড়ুজ্যে, চাটুজ্যে, মুখুজ্যে শ্রেণির ব্রাহ্মণের বাসই বেশি। আর কয়েক ঘর কুম্ভকার, ভূমিজ, তাম্বুলী, মাহাতো পরিবার। মুখুজ্যেরাই ছিল এই গ্রামের তালুকদার। কৃষিই প্রধানত সকলের উপজীবিকা। ধর্মকর্মের একটা বাতাবরণও ছিল। এই বাগদা গ্রামকেই সাধনস্থল বেছে নিয়ে ১৯১০ সালের শেষে বা ১৯১১ সালের শুরুতে শ্রীমা সারদাদেবীর কৃপাধন্য বিশ্বেশ্বর চট্টোপাধ্যায় (পরবর্তিকালে স্বামী তপানন্দ) তাঁর অনুমতিক্রমে ঘর-সংসার ছেড়ে এখানে চলে আসেন। উদ্দেশ্য—জনকোলাহলমুক্ত মনোরম ও নির্জন পরিবেশে, প্রকৃতির কোলে বসে একান্তে সাধন। সাধনকালে অনেকেই তাঁর সান্নিধ্যে এসে জপ-ধ্যানাদির অভ্যাস করতেন, কেউ হরিনামকীর্তনে যোগ দিতেন বা ভগবৎপ্রসঙ্গ করতেন। ক্রমে তাঁকে কেন্দ্র করে একটি শ্রীরামকৃষ্ণ-ভক্তগোষ্ঠী গড়ে ওঠে। এরপর ১৯১৮ সালে (১৩২৫ বঙ্গাব্দে) দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের সেবা করার জন্য বেলুড় মঠের প্রতিনিধিরূপে বাগদা গ্রামে আসেন শ্রীমায়ের আরেক মন্ত্রশিষ্য স্বামী কৃষ্ণানন্দ। দুই মাতৃসন্তানের অক্লান্ত পরিশ্রম ও শিবজ্ঞানে জীবসেবায় ঐ অঞ্চলের মানুষ দুর্ভিক্ষের হাত থেকে পরিত্রাণ পায়। সুষ্ঠুভাবে ত্রাণকার্য সম্পন্ন করে তাঁরা এলাকার অধিবাসী ও ভক্তমণ্ডলীর কাছে একটা আদর্শ স্থাপন করে তাদের আস্থা অর্জন করেন। সেবাব্রতে নিয়োজিত থেকেও মানুষের মধ্যে দিব্যত্রয়ীর ভাবপ্রচারের কাজও চলতে থাকে। এই সময়ে শ্রীরামকৃষ্ণ-ভাবাদর্শে উজ্জীবিত ও উৎসাহী কয়েকজন ভক্ত পায়ে হেঁটে জয়রামবাটী গিয়ে শ্রীমায়ের কৃপালাভ করে ধন্য হয়েছেন। বাগদা ও সন্নিহিত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে দুই মাতৃসাধকের নিরন্তর সাধনা ও দীর্ঘ অবস্থান এখানকার মাটিকে তপোভূমিতে পরিণত করেছিল। ফলে কিছু উৎসাহী শিক্ষিত মানুষের প্রচেষ্টায় এখানে যে ‘শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রম’ গড়ে উঠেছিল তার উল্লেখ পাওয়া যায় স্বামী তপানন্দকে (তখন ব্রহ্মচারী) লেখা স্বামী শিবানন্দজীর কয়েকটি চিঠির ঠিকানা থেকে। সময়ের নিরিখে ধারণা করা যেতে পারে,...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹100/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in
