বসুন্ধরা যেমন বীরের উপভোগ্যা, বীরত্বে তেমনই বসুন্ধরার শ্রী। কিন্তু বীরত্বের প্রাপ্তি পেলব নয়, ভীষণ ঊষর। জ্যৈষ্ঠপ্রকৃতির দারুণ নিদাঘ যেভাবে পৃথিবীর প্রান্তরকে রুক্ষ, রিক্ত, অর্ধদগ্ধ করে ফেলে রাখে—বীরের মনে সেভাবেই জ্বলে ওঠে সংগ্রামের আত্মপ্রেরণা। আত্মত্যাগের কঠিন নিষ্পেষণে একটু একটু করে গৈরিক হয়ে উঠতে থাকে জীবনের বর্ণময় বিলাস। যারা সুখকাতর-প্রাণ তারা এই ব্যথাজর্জর দহন ও কণ্টকিত শূন্যতা দূর থেকে দেখে ভীত হয়ে পড়ে। তবে অনল-ক্লান্ত জ্যৈষ্ঠনিসর্গের এক মননশীল শোভা আছে। নির্ভীক নয়নের কোনো অশ্রুবাষ্প বেরিয়ে এসে এই পথকে পিচ্ছিল করে না, মল্লার-মেশানো কোনো স্বার্থবাষ্প দীপক রাগের জ্বালাকে নিভিয়ে দিয়ে যায় না। সাহসী অন্তরের অকপট অভিব্যক্তি সাঁওতালি শিশুর মতো অনাবৃত শরীরে সামনে এসে দাঁড়ায় মাত্র। তার সঙ্গে আলাপনে ক্ষয়ের শঙ্কা নেই; আছে বাস্তবের সরল হাতছানি। গ্রীষ্মের খরতাপ সমস্ত মলিনতাকে শুষে নিয়ে নিজে ধূসর রঙে সাজে; আর সেই শোষিত পদার্থকে বিন্দু বিন্দু আকারে মেঘে পরিণত করে বর্ষার হাতে তুলে দিয়ে যায়, সকল কল্যাণের লালন হবে বলে। নিজেকে নিঙড়ে উজাড় করে দিতে জানে বলেই গ্রীষ্ম কিছু ফিরে পেতে চায় না। সে তার নিজস্ব বৈরাগী শৃঙ্গারে গৈরিক। তাই সে বসুন্ধরার শ্রী।