ধর্ম ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান অঙ্গ। অতীন্দ্রিয় সত্তা, ঈশ্বর-অনুসন্ধানের পথ হিসাবে ধর্মকে বিবেচনা করা হলেও এর মূলত তিনটি দিক আমরা ল‌ক্ষ্য করে থাকি—পৌরাণিকতা (Mythology), দর্শন (Philosophy) এবং আচার (Rituals)।

ধর্ম ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান অঙ্গ। অতীন্দ্রিয় সত্তা, ঈশ্বর-অনুসন্ধানের পথ হিসাবে ধর্মকে বিবেচনা করা হলেও এর মূলত তিনটি দিক আমরা ল‌ক্ষ্য করে থাকি—পৌরাণিকতা (Mythology), দর্শন (Philosophy) এবং আচার (Rituals)। গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্ম, যা মূলত চৈতন্যদেবের দ্বারা প্রবর্তিত হওয়ার পর থেকে দীর্ঘ পাঁচশো বছরেরও অধিক সময়ব্যাপী বাংলা তথা ভারতীয় ধর্মীয় সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ধারা হিসাবে বিদ্যমান, সেটিও এই প্রচলিত ত্রিমাত্রিক অর্থবহতার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। ভক্তিবাদী এই ধর্মের অনুরাগীরা পৌরাণিকতা ও দার্শনিকতার পাশাপাশি আচারপালনকেও বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। বলা যেতে পারে, বৈধী ভক্তির অংশরূপে আচারপালনের প্রতি তাঁরা অনেকটাই আগ্রহী। আর এই পালনের যে উপকরণ বা ধর্মীয় অনুষঙ্গ, তাকে কেন্দ্র করে এক বিরাট অর্থনীতির প্রকাশ ঘটেেছ। ধর্মকে ভিত্তি করে এই লোকসংস্কৃতি এবং তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত অর্থনৈতিক কাঠামো একে এক অভিনবত্ব দান করেছে। বাংলার সংস্কৃতিতে ধর্মপালনের অনুষঙ্গ হিসাবে যে বৈধী ভক্তির অনুশীলন আজও বিদ্যমান, তা নিয়ে সাহিত্যচর্চা হলেও এর আড়ালে অপ্রকাশিত অবস্থায় থেকে গিয়েছে এই ধর্মীয় সংস্কৃতি- নির্ভর ‌ক্ষুদ্রশিল্প ও শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির এক বিরাট অংশের মানুষের আর্থ-সামাজিক জীবনের ইতিহাস। এর সঙ্গে জড়িত জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা। ধর্মের সঙ্গে আর্থিক ব্যবস্থার যে সুগভীর পারস্পরিক নির্ভরশীলতার সম্পর্ক রয়েছে—এই বাংলাতেই রয়েছে, তা অনেক সময় আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের দার্শনিক বার্তা আছে, কিন্তু সাধারণ মানুষ ধর্মের বহিরঙ্গের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয় এবং আচারপালনকে কেন্দ্র করে ঐ দর্শনের পারে গিয়ে তার উপাস্যকে অনুভব করতে চায়। পর্যটনশিল্পকে আমরা এই আলোচনাতে আনতে চাইছি না। বৈধী ভক্তি ও তার অনুষঙ্গ হিসাবে তুলসীর মালা, ভাগবত পাঠ, তিলকমাটি প্রভৃতির ব্যাপক প্রচলন গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজে রয়েছে। কেবল কীর্তনের অনুষঙ্গ হিসাবে প্রয়োজন খোল, করতাল, মন্দিরা প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র, যা ধর্মীয় আনন্দকে পূর্ণতা দেয়। কিন্তু এগুলি পরিবেশনায় ও বাদ্যযন্ত্রগুলি নির্মাণের সঙ্গে যে জনগোষ্ঠী এবং ‌ক্ষুদ্রশিল্পের অর্থনীতি জড়িত, তা আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। উত্তরাধিকারসূত্রে ঐ জনগোষ্ঠী কেবল অর্থোপার্জন নয়, এই শিল্প ও ধর্মীয় সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in