গিরিশচন্দ্র সম্পর্কে পত্রিকা-সম্পাদক ও প্রাবন্ধিক প্রফুল্লকুমার সরকারের নিরীক্ষা—“গিরিশচন্দ্র ঘোষের
গিরিশচন্দ্র সম্পর্কে পত্রিকা-সম্পাদক ও প্রাবন্ধিক প্রফুল্লকুমার সরকারের নিরীক্ষা—“গিরিশচন্দ্র ঘোষের ন্যায় বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন লোক যে কোন দেশেই—বিরল, বাঙ্গলা দেশে তো বটেই! ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে—বাঙ্গলায় কয়েকজন ক্ষণজন্মা পুরুষ আসিয়াছিলেন, এক-একটা মিশন বা ব্রত লইয়া নব্য বাঙ্গালী জাতিকে গড়িয়া তুলিবার জন্য।… গিরিশচন্দ্র বাঙ্গালায় আসিয়াছিলেন, বাঙ্গলার নাট্যসাহিত্য ও নাট্যকলা নূতন করিয়া গড়িয়া তুলিতে। তিনি ছিলেন একাধারে নাট্যকার, অভিনেতা, রূপদক্ষ, ধারণা শিল্পী, নাট্যাধ্যক্ষ এবং নাট্যাচার্য্য। গিরিশচন্দ্রের যৌবনে বাঙ্গলায় নাট্যকলার শৈশব অবস্থা, প্রতীচ্যের দৃষ্টান্তে, তখন সবে মাত্র কেহ কেহ ‘সখের থিয়েটার’ প্রভৃতি করিতে আরম্ভ করিয়াছেন।… গিরিশচন্দ্র এরূপ অবস্থায় সব্যসাচীর মত আবির্ভূত হইলেন। তিনি রঙ্গমঞ্চ গড়িয়া তুলিলেন,… অভিনয়োপযোগী নাটক লিখিতে লাগিলেন,… প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরিয়া তিনি বাঙ্গলাদেশে এই বিরাট সৃষ্টির কার্য্য করিয়াছেন। শ্রেষ্ঠ শিল্পীর মতই সামান্য উপাদান লইয়া অসম্ভব সম্ভব করিয়াছেন।… তিনি একাই ছিলেন একশত। বহুমুখী প্রতিভার এমন দৃষ্টান্ত বাঙ্গলা দেশে খুব বেশী আছে বলিয়া… মনে করি না।” ঊনবিংশ শতাব্দীর ছয়ের দশকের কলকাতায় তখন শহুরে রাজা-বাবুদের গানবাজনার প্রতিভাসে বিনোদনের নতুন ঢেউ। মেহ্ফিল বদলাল মঞ্চের সাজে। ঝাড়বাতির রোশনাইয়ে গান-সঙ্গী হলো অভিনয়-সংলাপ। বনেদি বাড়ির উঠানে গড়ে উঠল রঙ্গমঞ্চের পালাক্রম। মঞ্চনাট্যের ধারায় গানে গানে সংলাপ-সঙ্গী হলো গিরিশ-গাথা। কলোনিয়াল কালচারের দর্শক-দাবিতে মঞ্চনাট্যে মিলল চৈতন্য-যাত্রার সুরের রেশ আর বাবু-বৃত্তের নিধুর গান। সেই আবহে গানেই প্রথম প্রকাশ সদ্য কুড়ি-পেরনো গিরিশচন্দ্রের। নিধুবাবুর গানের আধারেই বাঁধলেন— “সুখ কি সতত হয় প্রণয় হ’লে।সুখ-অনুগামী দুখ, গোলাপে কণ্টক মিলে।।শশী প্রেমে কুমুদিনী, প্রমোদিনী উন্মাদিনী,তথাপি যে একাকিনী, কত নিশি ভাসে জলে।।” গিরিশচন্দ্র ‘নিবিষ্ট মনে ও পরম উৎসাহে কাব্যশাস্ত্র আলোচনায়’ মেতে থাকতেন। তবে পিতা নীলকমলের প্রয়াণে গিরিশচন্দ্রের স্বরূপ বদলে যায়। জীবনীকার অবিনাশচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়ের বয়ানে—“…পাড়ায় একটী বওয়াটে দলের সৃষ্টি হইল—গিরিশচন্দ্র তাহার নেতা। তুবড়িওয়ালা, সাপুড়ের সঙ্গে কখনও বাণ খেলিতেছেন, কখনও অত্যাচারী ভণ্ড সন্ন্যাসীদিগকে দণ্ড দিতেছেন; আবার কাহারও বাটীতে, লোকাভাবে মৃতের সৎকার হইতেছে না, গিরিশচন্দ্র অগ্রগামী হইয়া আপনার দল লইয়া দাহকার্য্য সম্পন্ন করিতেছেন। পাড়ায় কোথায় পীড়িত ব্যক্তির লোকাভাবে শুশ্রূষা হইতেছে না, অর্থাভাবে ঔষধ-পথ্য জুটিতেছে...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹100/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in