বুদ্ধদেবের মহাপরিনির্বাণের পরে বৌদ্ধসংঘে যে বিভিন্ন মতের মধ্যে ঐক্যস্থাপনের প্রচেষ্টা হয়েছিল, পরবর্তিকালে তা
বুদ্ধদেবের মহাপরিনির্বাণের পরে বৌদ্ধসংঘে যে বিভিন্ন মতের মধ্যে ঐক্যস্থাপনের প্রচেষ্টা হয়েছিল, পরবর্তিকালে তা দেখা গেল শ্রীচৈতন্যের ভক্তগোষ্ঠীতেও। গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের একাংশ বৈষ্ণবসমাজে ঐক্যপ্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে উত্তরবঙ্গে বৈষ্ণবদের একটি সম্মেলনের আয়োজন করেন। অধুনা বাংলাদেশের অন্তর্গত রাজশাহী জেলার খেতুরি গ্রামে আনুমানিক পাঁচশো বছর আগে ফাল্গুন পূর্ণিমার দিন গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের যে ঐতিহাসিক মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তা-ই বৈষ্ণব সাহিত্যে ‘খেতুরি মহোৎসব’ নামে প্রসিদ্ধ। বঙ্গীয় ইতিহাসের এই সর্ববৃহৎ গণসমাবেশ থেকে উত্থিত মহামিলনের ভাবতরঙ্গে উদ্ভাসিত হয়েছিল তৎকালীন বঙ্গদেশের সমাজ ও সংস্কৃতি। চৈতন্যোত্তর যুগে গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজের তিন প্রধান পুরুষ শ্রীনিবাস আচার্য, নরোত্তম ঠাকুর এবং শ্যামানন্দ বাস করতেন বৃন্দাবনে। এঁদের মধ্যে নরোত্তম রাজশাহী জেলার রামপুর-বোয়ালিয়ার ছয় ক্রোশ উত্তর-পশ্চিমে খেতুরিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতা কৃষ্ণানন্দ দত্ত ছিলেন মুসলমান জায়গিরদারের অধীনে একটি ক্ষুদ্র রাজ্যের রাজা। আকুমার ব্রহ্মচারী, চৈতন্যগতপ্রাণ নরোত্তম অল্প বয়সেই গোপনে গৃহত্যাগ করে কাশী, মথুরা হয়ে বৃন্দাবনে যান। সেই সময় বৃন্দাবনে রূপ-সনাতনের ভ্রাতুষ্পুত্র বিদগ্ধ পণ্ডিত জীব গোস্বামী অবস্থান করছেন। সেখানে পরম বৈষ্ণব লোকনাথ গোস্বামীর কাছে নরোত্তমের মন্ত্রদীক্ষা হয়। তিনি জীব গোস্বামীর কাছে শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন এবং জীব গোস্বামী তাঁকে ‘শ্রীঠাকুরমহাশয়’ উপাধি দেন। বৃন্দাবনে বৈষ্ণবদের এক সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়—শ্রীনিবাস, নরোত্তম এবং শ্যামানন্দ ষড়গোস্বামীদের রচিত গ্রন্থসমূহ বঙ্গদেশে নিয়ে যাবেন প্রচারের উদ্দেশ্যে। জীব গোস্বামীর আদেশে এই তিন বৈষ্ণব দুটি গোরুর গাড়ি ভর্তি গ্রন্থ নিয়ে বাংলার উদ্দেশে রওনা দেন। পথে বনবিষ্ণুপুরে বীর হাম্বীর অথবা তাঁর মদতপুষ্ট দস্যুদল সমস্ত গ্রন্থ লুঠ করে নেয়। তখন শ্রীনিবাস আচার্য নরোত্তমকে খেতুরিতে এবং শ্যামানন্দকে অম্বিকায় পাঠিয়ে দিয়ে স্বয়ং অপহৃত গ্রন্থের সন্ধানে রাজভবনে যান এবং বীর হাম্বীরের সভাপণ্ডিত ব্যাসাচার্যকে বিচারসভায় পরাজিত করে লুণ্ঠিত গ্রন্থগুলি উদ্ধার করেন। ব্যাসাচার্য এবং বীর হাম্বীর শ্রীনিবাসের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। নরোত্তম ঠাকুর নবদ্বীপ, শান্তিপুর, অম্বিকা কালনা, সপ্তগ্রাম, খড়দহ প্রভৃতির শ্রীপাট বা বৈষ্ণবতীর্থ এবং শ্রীক্ষেত্রে জগন্নাথদর্শন করে খেতুরিতে আসেন। রাজা কৃষ্ণানন্দের মৃত্যুর পরে নরোত্তমের জেঠতুতো ভ্রাতা সন্তোষ দত্ত বিষয়সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ করতেন। তিনি নরোত্তমের কাছে মন্ত্রদীক্ষা নেন।...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹100/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in
