শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন মানবজীবনের উদ্দেশ্য ঈশ্বরলাভ। কী উপায়ে হবে সেই লাভ? তিনি বলছেন—অনন্ত মত

শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন মানবজীবনের উদ্দেশ্য ঈশ্বরলাভ। কী উপায়ে হবে সেই লাভ? তিনি বলছেন—অনন্ত মত, অনন্ত পথ। জাগতিক ও আধ্যাত্মিক লোকশিক্ষার পরিসরে ‘মান’ আর ‘হুঁশ’ সমন্বিত মানুষ গড়ার উদ্দেশ্যে, আত্মজ্ঞানের উদ্দেশ্যে, সর্বোপরি ‘ঈশ্বরলাভ’-এর উদ্দেশ্যে কত না পথের কথা বলেছেন ঠাকুর! মানুষ যে-পন্থাই অবলম্বন করুক না কেন, পুনঃপুন সদসৎ বিচার, অভীষ্টলাভের ব্যাকুলতা আর সময়বিশেষে নির্জনবাস করে নিজের মনকে উচ্চতর আদর্শে প্রতিষ্ঠা—এই তিন খুঁটিকে সম্বল করতেই হবে—বারবার বলে গেছেন ‘লোকশিক্ষক’ শ্রীরামকৃষ্ণ। শিক্ষাদানের পদ্ধতি আকর্ষণীয় করতে লোকশিক্ষকের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হলো—সহজ ভাষায় সংযোগস্থাপন। শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে ক্ষীণতম পরিচয় ঘটেছে যে-মানুষের, যিনি তাঁর অমৃতবাণীর একটি পঙ্‌ক্তিও আত্মস্থ করেছেন, তিনিও সম্মত হবেন—সহজতার অস্ত্রটি ঠাকুরের জন্মগত। তাঁকে ‘শিক্ষক’ বা ‘জনসংযোগকারী’ হয়ে উঠতে হয়নি আলাদা করে; সেটি তাঁর সহজাত প্রবৃত্তি। বৈদান্তিক তত্ত্ব, সর্বধর্মসমন্বয়ের খুঁটিনাটি অবলীলাক্রমে তিনি পৌঁছে দিয়েছেন স্ত্রী-পুরুষ, ধনী-দরিদ্র, সাধু-অসাধু, গৃহী-সন্ন্যাসী নির্বিশেষে সকলের কাছে। তবে এই পথটি সাধারণ মানুষের কাছে আরো সহজগম্য হয়ে উঠেছে শ্রীরামকৃষ্ণের এক আশ্চর্য ক্ষমতাবলে। তত্ত্বের আলোচনা তত্ত্বে সীমাবদ্ধ না রেখে এক লহমায় ঠাকুর তাকে মিলিয়ে দিয়েছেন প্রাত্যহিক জীবনের অনুষঙ্গে, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগতের সাথে, অবিস্মরণীয় সব উপমার মধ্য দিয়ে। উচ্চমার্গের দর্শন কেবল সুসজ্জিত বাণীরূপে না থেকে যাতে প্রায়োগিক ও ব্যাবহারিক স্তরে নেমে আসে, যাতে মানুষের আত্মীয়তা নিবিড় হয় সেইসব ধারণার সঙ্গে—এইই সম্ভবত ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। শ্রীরামকৃষ্ণের মহাজীবনের শেষ চারটি বছরের সমাজ-ভক্ত-শিষ্য-পরিবৃত পুঙ্খানুপুঙ্খ ছবি আমরা পাই শ্রীম-কথিত শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত গ্রন্থে। দক্ষিণেশ্বরের সেই ঘর হোক, ভক্তদের বাড়ি হোক কিংবা অন্ত্যলীলাস্থল শ্যামপুকুরবাটী বা কাশীপুরের বাগানবাড়ি হোক—শ্রীরামকৃষ্ণ-সমীপে সবসময়ই আনন্দের হাট, উপমার খেলা। উপমা যত বেড়েছে ঠাকুরের কথায়, ততই যেন একত্বে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার লক্ষ্যটিও সকলের কাছে আরো দৃশ্যমান হয়েছে। একইসঙ্গে একথাও উল্লেখ করতে হয়—উপমাত্মক, ব্যঞ্জনাময় উপদেশগুলি শুধুমাত্র শ্রীরামকৃষ্ণের মুখের কথা হয়ে থেকে যায়নি; তাঁর ‘সত্যের অঁাট’ এমন দৃঢ় যে, মুখনিঃসৃত সব কথাকেই যথাসাধ্য জীবনচর্যায় নিয়ে এসেছেন তিনি—ঈশ্বরলাভের পন্থা ও সেইসব পন্থা-সম্বন্ধীয় উপমার প্রভেদ ক্রমশ মুছে গেছে। উপমা নিজের গঠনগত বৈশিষ্ট্য পেরিয়ে মূলগতভাবে হয়ে...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in