আজ সকালে শুভময় বলছিল, শান্তিনিকেতনের কাছে একটা গ্রামে একজন সাঁওতাল দিদা ওকে গল্প করেছেন কেমনভাবে তাঁদের গ্রাম পত্তন

আজ সকালে শুভময় বলছিল, শান্তিনিকেতনের কাছে একটা গ্রামে একজন সাঁওতাল দিদা ওকে গল্প করেছেন কেমনভাবে তাঁদের গ্রাম পত্তন হয়েছিল। জলের ব্যবস্থা, জমির ঢাল—সব দেখে নিয়ে একটা জায়গায় গ্রাম পত্তন করার আগে অনুমতি নিতে হয়। কাদের অনুমতি? যারা ঐ জায়গাটাতে অনেক আগে থেকে আছে, যেমন গাছপালা, পাখি, জীবজানোয়ার, পোকপতং—সকলের। মানুষ যে এসে সেখানে নিজের ঘরদোর বসাবে, পাড়া, পথঘাট, জল—সেসবের আগে অনুমতি নেওয়া চাই। তারা যদি অনুমতি না দেয়? তাহলে মেনে নিতে হবে, নাহলে আরো এক-দুইবার তাদের একটু মিনতি করা যাবে, কিন্তু জোর করে বসা যাবে না। বসলে ভাল হয় না। সেই অনুমতি পাওয়া গেল কী গেল না কী করে বোঝা যাবে তারও ধরন আছে বৈকি। সে-দেখার ভাগ্য হয়েছিল উত্তরবঙ্গের পাহাড়ে। জলঢাকা নদীর অনেকটা উজানে একটা ছোট গ্রাম, পাহাড়ের কম উঁচু আর বেশি উঁচু—দুইভাগে ভাগ। সেখানে চাষের কথা, খাবারের কথা, উৎসব পরবের কথা জিজ্ঞেস করে করে যঁাদের বিরক্ত করে তুলছিলাম—তাঁদের মধ্যে একজন, যিনি গোরুদের রোগ আরাম করতে পারেন বলে আশপাশের গ্রামগুলোতে খুব সম্মান, সকলে ‘বড়া’ বলে ডাকে, তিনি বললেন : “যাবে আমাদের ভূমিপূজায়?” সকাল সকাল গ্রাম থেকে বেশ খানিকটা ওপরে পৌঁছে দেখা গেল, একটা গাছের চারাকে পাত্রে বসিয়ে তাকে ঘিরে মেয়েপুরুষ অনেকে ঢিমে লয়ে গান গাইছেন আর নাচছেন। পাড়ার ছেলে, মেয়ে, বৌদের যাঁর যেমন কাজ শেষ হচ্ছে তিনি এসে সেই নাচে ঢুকে পড়ছেন। বয়স্ক মহিলা বা পুরুষদের অন্য কাজ নেই, তাঁরা গান গাইছেন আর নাচছেন অনেক সময় ধরে। তার মধ্যেই কেউ একবার চা খাচ্ছেন, বা ভুট্টার খই। বেলা দুপুর হলো। সবাই এসে জড়ো হয়েছেন। এবার সেই চারাগাছকে কোলে করে গান গাইতে গাইতে সকলে চললেন পাহাড়ের আরো উঁচুর দিকে, যেখানে জঙ্গল। সেখানে পৌঁছে জঙ্গলের কিনারে সকলে মিলে বসলেন মাটিতে হঁাটু পেতে। গানের সুর এখন আরো ধীর—যেন কিছু প্রার্থনার মতো। একসঙ্গে সবাই সামনে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন, মাথা ঠেকাচ্ছেন মাটিতে আর গান চলছে। বড়াকে ফিসফিস করে...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in