অভিনবগুপ্তের অনেকগুলি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে দুটি আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে, প্রথমটি হলো তাঁর জ্ঞানলিপ্সা আর দ্বিতীয় তাঁর মাতৃভক্তি। খুব ছোটবেলায় তাঁর মাতৃবিয়োগ হয়। এরপর একমাত্র স্নেহের সূত্র ছিলেন তাঁর পিতা। তিনিও কিছুদিনের মধ্যে সন্ন্যাস নিলে অভিনবগুপ্তের মনও সব বন্ধনবিমুখ হয়ে যায়। প্রতিজ্ঞা করেন কখনো সংসার করবেন না। ‘দারাসুত-প্রভৃতিবন্ধকথাম্ অনাপ্তঃ।’ আগমে নিমগ্ন জীবনে তিনি কয়েকজন গুরুর শরণ নেন, তন্ত্রালোক-এ সেই তথ্য ধরা রয়েছে। তাঁর আরো কালজয়ী গ্রন্থ হলো পরাত্রিংশিকা- বিবরণী ও ঈশ্বরপ্রত্যভিজ্ঞাবিমর্শিনী। কাশ্মীর ও ভারতের বিদগ্ধ সমাজ তাঁকে ভৈরবের অবতার মনে করতেন। কাশ্মীরের শিবাদ্বয় দর্শনে তাঁর অসামান্য অবদান রয়েছে, আমরা এখন সেখান থেকে শুধু শক্তিতত্ত্ব তিনি যেভাবে বলেছেন তার একটি রূপরেখা স্পর্শ করার চেষ্টা করব।
শক্তির স্বরূপ ও সঞ্চার
তন্ত্রসাধনার একটি প্রধান স্তম্ভ হলো ‘শক্তি’। শক্তি কী? প্রথমে এই প্রশ্ন উঠেছে। আমরা দেখি, অদ্বৈতবেদান্ত শক্তিকে অনির্বচনীয় বলেছেন। কারণ, তা পূর্ণরূপে সৎ, অসৎ বা অলীক নয়। শক্তিকে অপেক্ষা করেই কিন্তু বিশ্ব রচিত হয়েছে! উলটোদিকে দ্বৈতাদ্বৈত, বিশিষ্টাদ্বৈত ইত্যাদি মতে শক্তি হলো নিত্যপদার্থ। আর তন্ত্রে শক্তি হচ্ছে নিত্যতত্ত্ব। অদ্বৈত-মতে শক্তির অনাদিত্ব স্বীকার করা হয়, কিন্তু অনন্তত্ব মানা হয় না। তন্ত্রমতে শক্তির উন্মেষ, বিকাশ, নিমীলন আছে, পূর্ণবাধ নেই। শক্তি অনাদি ও অনন্ত। শক্তির সঙ্গে পরমতত্ত্ব শিবের সম্বন্ধ হলো অভিন্ন। শিবে আশ্রিত হয়ে শক্তি বিরাজ করেন এবং অবিরাম সৃষ্টি ও গতির কারণ হন। এবিষয়ে বৈষ্ণব ও শৈবাগমের মতও একই। কিন্তু শক্তির প্রকাশের রূপ নিয়ে মতভেদ আছে। বৈষ্ণবরা বলেন, শক্তির বিকাশ হলো বিশেষ বিকাশ। তাই লীলাবিভূতিতে ও নিত্যবিভূতিতে শক্তির বিকাশ দেখা যায় রূপে ও লীলায়। প্রকাশ পায় আনন্দলহরিতে। সেই প্রকাশ সবিশেষ ও নির্বিশেষ উভয়। মূর্ত বিশ্বের মতোই অমূর্ত বিশ্বে তার অরূপ ব্যাপ্তি। এই শক্তি তরঙ্গায়িত হলেও তার কম্পনের রূপ নেই। তিনি পরাশক্তি, শিবে অবস্থিত। নির্বিশেষ সবিশেষ স্পন্দনে সঞ্চারিত। যখন সবিশেষ তখন তিনি জগৎ, আর নির্বিশেষে নাম-রূপের ওপারে বিশ্বের প্রকাশ! এটি হচ্ছে স্পন্দীভূত অবস্থা, একে বলে ‘নিমীলন’। শিবেরও এটি পরম অবস্থা। এখানে সব প্রযত্নের লয়। জ্ঞান, ইচ্ছা, ক্রিয়া-শূন্য অবস্থা। এর নাম ‘শূন্য’। তবে বৌদ্ধের ‘শূন্য’ নয়।
শিব ‘শূন্য’ ঠিকই কিন্তু শক্তির ধৃতি ও ক্রিয়ার আশ্রয়। আর জ্ঞানের সঞ্চারে হয় শক্তির প্রকাশ। জ্ঞানের দুটি অবস্থা—(১) স্থির নিষ্কম্প ভূমিকা, (২) সঞ্চারীভূত প্রকাশশীল অবস্থা। একে বলা হয় ‘বিমর্শ’। এই প্রকাশশীল অবস্থাই শক্তির প্রধান ভূমিকা। এর মূলে আছে ইচ্ছা। ইচ্ছা, আনন্দ, ক্রিয়া—এগুলি শক্তির বিমল বিকাশ। এদের মূলে আছে নিত্য অবভাস। এই শক্তির নৈসর্গিকী স্ফুরণ আছে—‘নৈসর্গিকী স্ফুরতা বিমর্শরূপাঽস্য বর্ত্ততে শক্তিঃ’। অভিনবগুপ্তের মতে, নির্বিশেষ ও সবিশেষ বিরুদ্ধপদার্থ নয়। শক্তির স্ফুরণে নির্বিশেষই সবিশেষ হয়। নির্বিশেষে সবিশেষের উন্মেষ সৃষ্টির সূক্ষ্ম অবস্থা। নির্বিশেষ বস্তু একেবারেই শক্তিহীন নয়। শক্তি হচ্ছেন শিবেরই প্রকাশ। ধৃতিরই স্পন্দিত অবস্থা। এই স্পন্দনে একটা কালিকত্ব আছে, অর্থাৎ এই স্পন্দিতভাব নিত্য নয়। প্রকাশোন্মুখ অবস্থায় তা থাকে, লয়ে থাকে না। তখন শিবভাবই প্রধান। প্রকাশে শক্তিভাব প্রধান। তবে শক্তির সঞ্চার হলেই নির্বিশেষ শিবে শক্তির বিকাশ কোনো রূপ নেয় না, শক্তির উদারবৃত্তি তখন শিবকেই আঁকড়ে ধরে থাকে। শিবস্বরূপতা চ্যুত হয়েও যেন শক্তি তখন শিবের মতো বিরাজ করে। শক্তির আরেক বৃত্তির নাম ‘ব্যাপিনী’। সেটি সংকোচ বৃত্তি নয়, উদার ও প্রশান্ত বৃত্তি। নিস্তরঙ্গ অবস্থাচ্যুতি হলেই শক্তির প্রকাশ মহাশূন্যে লীলায়িত হয়, দেশ বা কালে আবদ্ধ হয় না। এই বৃত্তিই শিবস্বরূপে প্রতিভাত হয়ে থাকে। শক্তির প্রাথমিক সঞ্চরণ হয় কালে, মন সেটা দেখতে অভ্যস্ত। কিন্তু অতিমানস ভূমি হচ্ছে স্বরূপভূত প্রকাশ কালের অতীত। এখানে শক্তি শিবের সঙ্গে অভিন্ন হয়ে প্রকাশিতা থাকেন। অথচ কোনো ভেদ থাকে না, এটি নিষ্ক্রিয় অবস্থা। সৃষ্টিতে পরিণামের আগে অপরিণামী শক্তির বিকাশ হয়। সেটি হলো শক্তির স্বরূপ অভিব্যক্তি, তাতে শুধু অভিব্যক্তি আছে, পরিণাম নেই। প্রকাশে ক্রিয়া ও সঞ্চার থাকে, যা জ্ঞানময় ও আনন্দময়। শক্তির বিকাশে তার ব্যাপকত্বের স্থলে ঘনত্বের উদ্ভব হয়। তখন চেতনার প্রসার থাকে না। অভিনবগুপ্ত তাকে বলেছেন—জড়ত্ব স্তব্ধ প্রকাশ। তাঁর মতে, প্রকৃতি ও তার ঊর্ধ্বস্তর হচ্ছে একই শক্তির বিকাশ। শক্তি একজায়গায় উদার ও বিস্তৃত, আরেক জায়গায় সংকুচিত ও সীমাবদ্ধ। একই শক্তি সৃষ্টিতে বিকশিত, আর ঘনীভূত বিকাশেই প্রকৃতির সৃষ্টি।
অভিনবগুপ্ত প্রকৃতির পরিণাম ছাড়া শক্তির অন্য বিকাশ স্বীকার করেন। তাকে বলে ‘আভাস’। চিতিশক্তির প্রকাশের পরিণাম হয় না। তা সবসময় স্পন্দিত হলেও তার প্রকাশের অভাব হয় না। তাই কার্য হচ্ছে কারণের প্রকাশ মাত্র, পরিণাম নয়। চৈতন্যে চিতিশক্তি নিহিত থাকে, তা-ই ক্রিয়াশীল হয়ে স্পন্দিত হয়। এই প্রকাশই হলো আভাস। পরমশিবের বিশ্বময় প্রকাশ হচ্ছে বিমর্শময়। বিমর্শ ছাড়া প্রকাশ হয় না।১ ঈশ্বরপ্রত্যভিজ্ঞাবিমর্শিনীতে প্রকাশ বা শিবকে বলা হয়েছে বিমর্শসার,২ বিমর্শশরীর।৩ বিমর্শ হচ্ছে তাঁর প্রধান রূপ।৪ এই মতে ঐশ্বর্যাত্মিকা বিমর্শরূপা কর্তৃত্বশক্তি সব শক্তিকে সবদিকে বিচ্ছুরিত করেন।৫ অভিনবগুপ্ত বলেছেন—পরমেশ্বরের বিমর্শশক্তি অহংরূপে অখণ্ডভাবে প্রকাশিতা হন। মহেশ্বরের বিমর্শশক্তি হলো তাঁর শুদ্ধ অর্থাৎ নিরুপাধিক জ্ঞান ও ক্রিয়াশক্তি।৬ তাঁর প্রকাশমানতা হলো জ্ঞানশক্তি ও স্বেচ্ছায় জগৎসৃষ্টি হচ্ছে ক্রিয়াশক্তি। শিবের বিমর্শশক্তিটি হলো স্বাতন্ত্র্য শক্তি। তা এক ও অভিন্ন পরাশক্তি।৭ এঁর দ্বারা শিব বিশ্বকে ভরণ করেন, দেখেন ও অবভাসিত করেন।৮ ভগবতী স্বতন্ত্রা চিচ্ছক্তিই জগৎ-রূপে স্ফুরিতা৯ এবং শিবের থেকে অভিন্না।১০ তাই বিশ্ব শক্তিরূপ হলেও আসলে শিবাত্মক।১১ অভিনবগুপ্ত মনে করেন, মহেশ্বর শক্তিসমূহের মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করেন। সেই শক্তি তিনটি—(ক) কর্তৃত্বশক্তি, (খ) জ্ঞাতৃত্বশক্তি, (গ) ক্রিয়াশক্তি। তবু তা শিব ভিন্ন অন্য কিছু নয়। বিশ্ব শিবের শক্তিপ্রচয়। আচার্য জয়রথ বলেছেন—জড়াত্মক ও অজড়াত্মক হচ্ছে বিশ্ববৈচিত্র। সৃষ্টি, স্থিতি, সংহার, তিরোধান ও অনুগ্রহ—এই পাঁচটি হচ্ছে কৃত্য। আর জাগ্রৎ, স্বপ্ন, সুষুপ্তি এবং তুরীয় হলো চারটি অবস্থা। এই সবই শিবের শক্তিস্ফুরণ!১২ তবে শিব শক্তিরহিত নন, আর শক্তিও শিবাতিরিক্তা নন।১৩ তাই বিমর্শশক্তি ও স্বাতন্ত্র্যশক্তি বস্তুত এক ও অভিন্ন শক্তিরই দুটি স্বরূপ। শক্তিমান ও শক্তির মধ্যে কিংবা কর্তৃত্ব এবং জ্ঞাতৃত্বের মধ্যে যে ভেদ কল্পনা করা হয় তা শুধু বিচার বা বোধের সুবিধার জন্যই হয়।১৪
অভিনবগুপ্ত মনে করেন, অভিব্যক্তি দুরকম—বাহ্য ও আন্তর। অর্থাৎ বিশ্বচৈতন্য যেন সমুদ্র আর আভাসগুলি হচ্ছে তার স্রোত। প্রতিটি আভাস একটি আলাদা স্রোত যা বিশ্বচৈতন্যরূপ সমুদ্রের মধ্যে প্রবাহরূপে প্রবেশ করছে। আর বিশ্বচৈতন্যের স্বাতন্ত্র্যশক্তির যে স্বরূপ আভাসগুলির আলাদা করে আন্তর অভিব্যক্তি ঘটায়, আন্তর বিভেদ রক্ষা করে—তার নাম কর্তৃত্বশক্তি। তবে কখনো কখনো প্রবাহগুলি তরঙ্গ হয়ে আসে, তখন তারা এমনভাবে বিন্যস্ত যে, প্রতিবিম্বগ্রহণে সক্ষম সেই তরঙ্গে প্রতিবিম্বসৃষ্টিকারী তরঙ্গগুলি সক্রিয় হয়ে ওঠে। এটি হচ্ছে জ্ঞাতৃত্বশক্তির ক্রিয়া। প্রতিবিম্বগ্রহণে সমর্থ তরঙ্গের ক্রিয়াই হলো জ্ঞানতত্ত্ব।
এই জ্ঞাতৃত্বশক্তির তিনটি স্বরূপ—(১) জ্ঞানশক্তি, (২) স্মৃতিশক্তি, (৩) ভেদনির্ণয়ের শক্তি (অপোহন শক্তি)। এর মধ্যে জ্ঞানশক্তি হচ্ছে বিশ্বচৈতন্যের শক্তির সেই স্বরূপ, যা বিশ্বে অন্তর্নিহিত অসংখ্য বস্তু থেকে কয়েকটিমাত্র বিশেষকে অভিব্যক্তির জন্য আলাদা করে গ্রহণ করে। ‘স্বরূপাৎ উন্মগ্নম্ আভাসয়তি।’ যেন সমুদ্রের দুটি তরঙ্গের ওঠাপড়া মাত্র! এদের একটির প্রতিবিম্বগ্রহণে সামর্থ্য আছে, তার নাম ‘জীবাভাস’ বা সীমিত চেতন অভিব্যক্তি। আর দ্বিতীয়টির সেই সামর্থ্য নেই, তার নাম ‘জড়াভাস’ বা অচেতন অভিব্যক্তি। যখন চেতন অভিব্যক্তির উত্থান অচেতন অভিব্যক্তির সংস্পর্শে সক্রিয় হয়, তখন আয়নার সামনে কিছু রাখলে তখনি যেমন সেটা জানা যায়, সেভাবেই নানা রূপও জানা হয়ে যায়। তাই জ্ঞান হলো শুধু সক্রিয় চেতন তরঙ্গ। আর জ্ঞানশক্তি হচ্ছে বিশ্বচৈতন্যের সেই সামর্থ্য, যার কারণে জ্ঞানের জন্য প্রয়োজন দুটি তরঙ্গেরই উদ্ভব হয়।১৫
এখানে আমরা মনে রাখব যে, শক্তি যখন শিবের আশ্রয়ে সম্পূর্ণ স্তিমিত, তখন এই বিশ্বের প্রকাশ থাকে না। স্পন্দীভূত হলেই প্রকাশ হয়। অবশ্য এই প্রকাশ শিবে অন্তর্নিহিত, যদিও তা ক্রিয়াপ্রধান। চিতিশক্তি স্পন্দনাত্মিকা। প্রাথমিক স্পন্দনে কোনো বিষয়-বিষয়ী ভাব থাকে না। তেেজাময় শুদ্ধ প্রকাশময় স্পন্দনে এর বিকাশ। সে-প্রকাশে পরিণাম নেই, তাই আভাস। অপরদিকে জ্যোতির্ময় লোক ছন্দে উজ্জীবিত। আভাসে ছন্দ আছে, চিতিশক্তির গতি তাই ছান্দসিক। এর প্রতিটি প্রকাশ ছন্দ-নিয়ন্ত্রিত, আর চেতনা হলো সেই ছন্দের আশ্রয়। সাম্য, বৈষম্যই চিতির, শক্তির ও প্রকৃতির ক্রিয়ার নির্ণায়ক। অবশ্য প্রকাশ এখানে এত স্বচ্ছ যে, মূল কারণের স্বরূপ কোথাও ঢাকা পড়ে না। তাই সর্বত্র কার্যে কারণের সন্ধান পাওয়া যায়। আর এখানে কারণের সঙ্গে কার্যের নিত্যসম্বন্ধ থাকে বলে প্রকৃতির স্পন্দন থেকে চিতির স্পন্দন আলাদা হয়। সমতা ও ছন্দ তাতে থাকে। প্রকৃতির ওপরে এই শুদ্ধপ্রকাশের তত্ত্বটি অদ্বৈতবাদীও স্বীকার করেন।
শক্তির উন্মেষ
অভিনবগুপ্ত-সম্মত মত হলো—শক্তির ক্রিয়া যখন প্রাথমিক রূপ নেয় তখন তাকে বলে ‘বিন্দু’। বিন্দু শক্তির কেন্দ্রীভূত বিকাশ, শুধু সঞ্চরণ। দ্বিতীয় অবস্থা হলো ঘনীভূত অবস্থা। তারপর বিচ্ছুরিত শক্তি ক্রমশ কেন্দ্র রচনা করে। শক্তির সঞ্চার একটু ঘনীভূত হলে বিন্দুর প্রকাশ হয়। বিন্দু হচ্ছে স্বচ্ছ, বিকাশ, তেজোময়, জ্যোতির্ময়। এই বিকাশের স্বরূপ নির্ভর করে শক্তির সঞ্চারের পরিমাণের ওপর। সঞ্চারের শুরুতে শ্বেতবিন্দু প্রকাশিত হয়। এতে গতির চেয়ে স্থিতির ভাব বেশি। তাই তা হলো শিব। গতি বাড়লে হয় লাল রঙের বিন্দু, এটিই শক্তি। চেতনার বিকাশ বিন্দু, কারণ শক্তি হলেন চিৎস্বরূপা।
বিন্দু প্রকাশময়। তার ভিতরে অস্ফুট সৃজনবোধ সঞ্চারিত হলে নাদের কম্পন গোচরীভূত হয়। বিন্দু হচ্ছে প্রাথমিক প্রকাশ, নাদ প্রাথমিক শব্দহীন শব্দ। অরবের রব। বিন্দুই শিব। বীজ হলেন শক্তি। নাদ এঁদের প্রাথমিক স্ফুরণ। নাদে শক্তি প্রসারিত, বিন্দুতে ঘনীভূত। নাদে ক্রিয়াশক্তি স্ফুট, তাই নাদে শক্তির সঞ্চার বেশ অনুভব করা যায়। নাদ ও বিন্দু হচ্ছে শক্তির জ্ঞানরূপী ও ক্রিয়ারূপী প্রকাশ। চিচ্ছক্তি ক্রিয়াপ্রধান হলে নাদের বিকাশ শুরু হয়। নাদ হলো রক্তবিন্দুর পরের অবস্থা। কারণ, রক্তবিন্দুতে শক্তির যে-পরিমাণ ঘনত্ব, নাদে তার চেয়ে বেশি থাকে। তাই রক্তবিন্দু হলো জ্ঞান ও ক্রিয়ার মধ্যবর্তী অবস্থা। শ্বেতবিন্দুতে যার আভাস পাওয়া যায়, রক্তবিন্দুতে তার উদ্গম আর নাদে তার প্রকাশ। জ্ঞানের প্রাথমিক প্রকাশে যত না ইচ্ছা হয়—আনন্দ হয় তার চেয়ে বেশি। আনন্দ হচ্ছে জ্ঞানেরই পূর্ণতার বোধ। জ্ঞান ও আনন্দ অবিমিশ্র। স্ফুটপ্রকাশই আনন্দ। এই আনন্দ শুধু হ্লাদ নয়, এটি জ্ঞানের স্বরূপ। জ্ঞান স্বরূপে শান্ত, আনন্দ উদ্বেল। তাই আনন্দের রূপ নেওয়ার চেষ্টা থাকে, সেই চেষ্টাই নাদে স্ফুটতর হয়। আনন্দে ক্রিয়ার সঞ্চার, আর আনন্দের মূর্ত বিকাশই তো সৃষ্টি! আনন্দের সঙ্গে ইচ্ছা ও ক্রিয়ার সম্বন্ধ আছে, আনন্দ এদের উপজীব্য। নাদ ও বিন্দু অবস্থায় চেতনা সঞ্চরণশীল হয়েও কিন্তু কেন্দ্রীভূত হয় না, এদের গতি প্রকাশ ও ক্রিয়া প্রসারীভূত। এরাই চেতনার নির্বিশেষ প্রকাশ। একটা সম্বন্ধহীন নির্বিশেষ সঞ্চরণ এখানে থাকে, সেটাই প্রাথমিক বিকাশ।
এই প্রাথমিক স্পন্দনে যখন ‘অহম্’-এর স্ফুরণ হয়, তখনি শক্তি কেন্দ্রীভূত হয়, চেতনা কেন্দ্রগত হয়। ‘আমি’ বোধ স্ফুট হয়। চেতনা কেন্দ্রগত হয় বলে জ্ঞান নিরুপাধিক স্বরূপ ত্যাগ করে আর ‘অহং’ কেন্দ্রে স্ফূর্ত হয়। তারপর এই কেন্দ্রকে অবলম্বন করে তার ক্রিয়া হয়। অপরদিকে নিরুপাধিক চেতনার কোনো কেন্দ্র থাকে না, তাই তার ভিতরে কোনো ক্রিয়া কেন্দ্রগত হয়ে প্রকাশ পায় না। জ্ঞানে কেন্দ্রগত হলে তবে কেন্দ্রকে নিয়েই সেই ক্রিয়ার স্ফূর্তি হয়। এই কেন্দ্রীভূত জ্ঞান পরা বা চিতিশক্তিকে অবলম্বন করেই হয়। এই মতে ‘আমি’র বোধ হলো প্রাথমিক সংকোচ। এই সংকোচ শক্তির পুঞ্জীভূত বিকাশ। এটিই সদাশিব তত্ত্ব।
প্রাথমিক বোধের কথা আমরা দেখলাম, তা শুদ্ধ ‘আমি’-রূপে স্ফুট—যাকে শ্রীরামকৃষ্ণদেব ‘পাকা আমি’ বলেছেন। এই ‘আমি’র কোনো আবরণ নেই, কোনো পার্থক্য বা ব্যক্তিত্ববোধ নেই। এই অবস্থায় ‘আমি-বোধ’ ছাড়া আর কিছুই থাকে না। তাই এই বোধকে জ্ঞাতা বলা যায় না, কারণ জ্ঞাতৃত্ব তো বিষয়-বিষয়ী বোধকে নিয়ে প্রকাশিত হয়। যেখানে শুদ্ধ ‘আমি’, সেখানে বিষয় নেই—সেখানে ‘আমি’ বোধকে বিষয়ীও বলা যায় না। এই হলো জ্ঞানের কেন্দ্রগত বোধ। জ্ঞান বিষয়-বিষয়ী সম্বন্ধমুক্ত হলে এই অবস্থা লাভ হয়। জ্ঞাতা ও জ্ঞেয়-শূন্য কেন্দ্রগত বোধই হচ্ছে ‘আমি’ বোধ। এই বোধ স্থূল, সূক্ষ্ম, কারণের অতীত। এখানে বিশ্বদৃশ্য নেই। চিতিস্পন্দন শুদ্ধ ‘আমি’-রূপে প্রবাহিত হয়।১৬ এই ‘আমি’র বোধ শুধু বোধ হলেও তাতে কিন্তু শক্তির স্ফুরণ থাকে, কারণ চিতিশক্তি জ্ঞানে নিত্য স্ফুরিত হয়। এই মতে—যখন ইচ্ছা স্ফুট হয়, তখন এই শক্তিই ‘ইদম্’-রূপে প্রতিভাত হয়। জ্ঞানের ‘আমি’-কেন্দ্র থেকে স্বতঃস্ফূর্ত শক্তি প্রবাহিত হয়ে ইদং-এর রূপ নেয়। এই বিষয়-বোধের স্ফূর্তির সঙ্গে কিন্তু ‘আমি-বোধ’ বিলয় হয় না। এই তত্ত্বের নাম ‘ঈশ্বর’।
চিতিশক্তি কখনো কেন্দ্রচ্যুত হয় না, তাই জ্ঞানের আরো নিম্নভূমিকাতেও এই শক্তি আবার কেন্দ্রাভিমুখী হয়। তার মানে এই নয় যে, শক্তি আগে কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আবার ফিরে গেল! শক্তির স্ফুরণ শুরু হলে তা হঠাৎ লয় হয়ে যায় না, কেন্দ্রাভিমুখ হলেও ইদংতা লয় পায় না। জ্ঞানের প্রকাশের আরেক পর্যায়ে তাদের তখন সমন্বয় হয়। ইদংতা অহংতাকে বাদ দিয়ে স্বরূপ প্রকাশের উপায় থাকে না—পারস্পরিক এই সন্নিবিষ্টতার সমন্বয় হলে হয় পূর্ণবিকাশ। তখন ইদংতা নিজের স্বরূপকে পায় অহংতার ভিতরে, আর অহংতা নিজের প্রকাশকে পায় ইদংতার ভিতরে! জ্ঞানের এই ভূমিকার নাম ‘সদ্বিদ্যা’।
প্রকৃতির ওপরে চিতিশক্তি অপরিণামী প্রকাশ সদাশিব, ঈশ্বর ও সদ্বিদ্যারূপে প্রকাশিত হয়। জ্ঞানের এই ভূমিকায় ওপরের তত্ত্বগুলির নিচে প্রতিভাস হয়। এখানে অহং ইদংবিশিষ্ট হলেও তাতে অহং-ইদং-এর একীভূত ভাবই থাকে, সম্বন্ধ থাকে না। এই একীভূত জ্ঞান হলো অপরোক্ষ জ্ঞান। ইদং অহং-এ এখানে কোনো দূরত্ব নেই! স্বরূপভূত জ্ঞানের দুটি বিকাশ তখন একীভূত হয়ে থাকে। সমগ্র জ্ঞানটি সম্বন্ধকে গর্ভে করে প্রজ্বলিত হয় বিজ্ঞানালোকে।
আচার্য অভিনবগুপ্ত মনে করেন, শিব ও শক্তির যুগপদ্ভাবেই অভিব্যক্তি হয়। যা অভিব্যক্ত হলো তার যদি চৈতন্য না থাকে, তাহলে কী করে বলব যে, অভিব্যক্তি হয়েছে? তবে যুক্তিগতভাবে চৈতন্যের আগে সত্তার অস্তিত্ব মানতে হয়, যেমন আলোর আগে আগুনের থাকাটাকে মানতে হয়। এই অভিব্যক্তি চিহ্নিত হয় ‘অহম্’ শব্দের সঙ্গে ‘অস্মি’ শব্দের যোগের মধ্যে যেমন ‘অহমস্মি’ উপস্থিত থাকে তেমনি। শক্তির অভিব্যক্তির এই অবস্থায় আনন্দশক্তির প্রাধান্য অভিনবগুপ্ত স্বীকার করেছেন।
সদ্বিদ্যা
সদ্বিদ্যা হচ্ছে বিজ্ঞানের কেন্দ্র। এতে ঊর্ধ্বলোকের সব জ্ঞান একীভূত হয়ে প্রকাশিত হয়। মহাশক্তির সমস্ত বিভূতি, সম্ভূতি এই সদ্বিদ্যায় প্রকাশিত হয়ে তাদের এই জগতে অবতরণ ঘটে। সদ্বিদ্যায় বিজ্ঞান ও আনন্দ অমূর্ত অথচ উপভোগ্য! বিজ্ঞানালোকে উদ্ভাসিত অতিমানস ও অধিমানস জ্ঞানের সমন্বয়-ভূমি হলো সদ্বিদ্যা। তা একদিকে মহাশক্তির ঘনীভূত প্রকাশ, অন্যদিকে প্রকৃতির মূল আশ্রয়। প্রকৃতির ধৃতি ও মহাপ্রকৃতির পাদপীঠ। চিতিশক্তি প্রকৃতির ঊর্ধ্বে যেমন, তেমনি অন্তরেও ক্রিয়াশীল থাকেন। এই সদ্বিদ্যায় প্রতিষ্ঠিত হলে চেতনার সংকোচন-প্রসারণ বোঝা যায়। চেতনা সংকুচিত হয়ে প্রকৃতিতে রূপান্তরিত হয়, প্রকৃতি প্রসারিত হয়ে চেতনায় স্ফূর্ত হয়। এই প্রেক্ষিতে বিশ্বাস হলো—অজ্ঞান জ্ঞানবিরোধী নয়, বরং জ্ঞানেরই অস্ফুট বিকাশ। সদ্বিদ্যায় প্রকৃতি হচ্ছে স্বচ্ছ, আবরণশূন্য। চিচ্ছক্তির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা বোধ আছে। অভিনবগুপ্ত মনে করেন, পরিণাম ও প্রকাশের মধ্য দিয়ে শক্তির স্বভাব পরিবর্তিত হয় না, বরং সব মূর্ছনার ভিতরে শক্তি শক্তিই থাকে। তাঁর কোনো ভিন্নতা নেই। ভেদ হচ্ছে বিকাশ ও ক্রিয়ায়—স্বরূপে নয়।
সম্ভূতি
এই জগতে মহাশক্তির সম্ভূতি ক্রিয়াশীল আছেন। তাঁর সম্পর্কে প্রকৃতি স্ফুরিত হয় সৃজন-বৈচিত্রে, স্থিতি-সংবেশে, সুষমার স্ফূর্তিতে ও লয়ের অন্তর্মুখিনতায়। এঁর আধিভৌতিক বিকাশ হয় সূর্য, চন্দ্র, বায়ু, বরুণ, অগ্নির মধ্যে; আধিদৈবিক বিকাশ দিব্যশক্তির মধ্যে ক্রিয়াশীল হয়, এবং আন্তর দিব্য প্রেরণায় হয় অধ্যাত্মবিকাশ। ইনি শুধু বিশ্বশক্তি নন, ইনি ভক্তের মা। রক্ষয়িত্রী ও ধাত্রী। এই সম্ভূতি অবতরণ করলে সত্তায় সংকোচ চলে যায়, তিনি সত্তাকে অধিকার করেন। তখন জীবের জ্ঞানের আর সীমা থাকে না। অপরোক্ষবিজ্ঞান, পরাসম্বিত তাকে আশ্রয় করে। তার জীবত্ব চলে যায়, ঐশ্বরীয় ঐশ্বর্য আসে। সব সিদ্ধি হাতের মুঠোয় আসে।
অন্তরে মহাশক্তির এই প্রকাশ অতিমানসরূপে ও শব্দে সত্তাকে তখন উদ্বোধিত করে। শিবময় স্থিতি দেয়। শাস্ত্র বলেন, ছন্দ শব্দময় হলে হয় মন্ত্র। তেজোময় হলে হয় দীপ্তবিগ্রহ। তাই সম্ভূতির দিব্য বিগ্রহ হলো মন্ত্র। মন্ত্র ছন্দের বাহন, তাতে সংকুচিত থাকে সম্ভূতির স্বরূপ ও শক্তি। সম্ভূতির মূর্ত প্রকাশ হয়, তখন তেজ পুঞ্জীভূত হয় অন্তরলোকে, জ্যোতির্ধারা প্রতিফলিত হয়ে রূপ নেয়।
সম্ভূতির রূপ
সম্ভূতির জ্যোতি সত্তাকে অভিষিক্ত করে হ্লাদিনীর বিকাশ করে। এই জ্যোতিচ্ছন্দ অসংখ্য প্রকার। অনন্ত তাঁর রূপ, অনন্ত মহিমা। তাই নানারূপে তাঁর অবতরণ হয়। কোথাও বিজ্ঞানশক্তি বেশি ক্রিয়াশীল, কোথাও ইচ্ছা এবং প্রাণ-শক্তি বেশি ক্রিয়াশীল। কোথাও আনন্দ বেশি। এগুলি ঐ এক মহাছন্দেরই অভিব্যক্তি। বিজ্ঞানের নিম্নভূমিকায় এঁর অবতরণ হয় না। সেখানে তিনি গভীর, জ্ঞানদীপ্ত, প্রসারিত ও প্রশান্ত। এঁর স্পর্শে প্রাণাধার শান্ত হয়। সংসারের ছোট চাওয়া সব চলে যায়। প্রাকৃত লয় থেকে মুক্ত হয়ে অভয়ে প্রতিষ্ঠা হয়। প্রকৃতির বৈভব থেকে আকর্ষণ চলে যায়।
ইনি বৃহতের থেকে বৃহত্তর সত্তায় সাধককে আকর্ষণ করে ঋত ও সত্যে তাকে প্রতিষ্ঠা করেন। ইনি মহাশক্তির মহেশ্বরী রূপ। আর তাঁর মহাসরস্বতী রূপ নিখুঁত সৃজন করেন। সৃজনশক্তির সংসিদ্ধিরূপে ধৃতি আবির্ভূতা হন। ইনি বাক্রূপা; আমরা আগেও দেখেছি যে, বাকই হচ্ছেন সৃষ্টির প্রাথমিক বিকাশ। অনন্ত শব্দসম্পদ, জ্ঞান ও কলা ইনিই প্রকাশ করেন। এই শব্দজ্ঞানে হয় সৃষ্টির উৎপত্তি। মহাসরস্বতীই অরব-রবের প্রতিধ্বনি করেন, তিনি শব্দময়ী, বেদরূপা। ইনি প্রাণে এমন শক্তিকে উদ্বোধিত করেন যে, প্রাণের প্রবণতা তখন হয় সহজ সৃজনে। মহাসরস্বতীর কৃপায় জেগে ওঠে তাঁরই অপূর্ব সংসিদ্ধি, অভাবনীয় বিন্যাস। সম্ভূতির আরেক রূপ হলো মহাকালী। উচ্চতা, তীব্রতা, শক্তি, গতি হচ্ছে এঁর স্বাভাবিক বৃিত্ত। তিনি বিরাটশক্তির প্রস্রবণ। পর্বতপ্রমাণ বাধা এঁর কৃপায় চলে যায়, এঁর নৃত্যে আবার বিশ্ব কেঁপে ওঠে। সৃষ্টির সংহতি বদলে দেয়। অন্ধকার দূর করে প্রাণের গতি ও শক্তি সঞ্চার করে দেন। মহাকালীর শক্তিতে অন্তরে জেগে ওঠে বিশ্বশক্তি। মা সকলের কল্যাণ করেন, মনোরথ পূর্ণ করেন। তিনি মৃত্যুরূপা, মরণযজ্ঞের মধ্য দিয়ে দেন অনন্ত জীবন! সকল সিদ্ধি, ভুক্তি, মুক্তি তিনি ভক্তকে দেন।
সম্ভূতির আরেকটি রূপ হলো মহালক্ষ্মী। তিনি সংগতি, সৌন্দর্যের আধার। সৃষ্টির সকল শ্রী হলেন তিনি। ইনি নমনীয়, কমনীয়, সৌন্দর্যে বিভূষিত, সমৃদ্ধিদায়িনী। এঁতে কোনো তীব্র শক্তি নেই, সবটুকুতে রয়েছে নিবিড় স্ফূর্তি ও শান্তি। এরপর বলতে হয় ললিতা বা সুন্দরী-রূপা মহাশক্তির সম্ভূতির কথা। তিনি আকর্ষণ-বিভবে মহিমান্বিতা। প্রশান্ত মহিমময় তাঁর স্থিতির স্বরূপ, তবু স্তব্ধতার বদলে প্রাণমুগ্ধকর আকর্ষণে ইনি সাধককে পূর্ণ করেন, প্রাণের সরসতা দেন। মা আমার বৈরাগ্য ও জ্ঞানের, কল্যাণ ও সৌন্দর্যের অপূর্ব বিকাশ। অভিনবগুপ্ত তাই মাতৃশক্তিকে ‘চিৎপ্রতিভাং দেবীং পরাম্’১৭ বলেছেন এবং ভৈরবের স্বরূপাপন্ন অপরাদেবীকে স্তুতি করেছেন।১৮ এবং বলেছেন—সেই তিনটি দেবী নিজের অসাধারণ স্বরূপকে প্রকাশ করে আমার হৃদয়ে অবস্থান করুন—‘দেবীত্রয়মন্তরাস্তামনুত্তরং মে প্রথয়ৎ স্বরূপম্’।১৯
তথ্যসূত্র
১. ‘ন হি নির্বিমর্শঃ প্রকাশঃ সমস্তি উপপদ্যতে বা।’ (তন্ত্রালোক, ৩য় আহ্নিক, পৃঃ ২)
২. ‘স চ প্রকাশো বিমর্শসার ইতি।’ (ঈশ্বরপ্রত্যভিজ্ঞাবিমর্শিনী, পৃঃ ২১৭)
৩. ‘বিমর্শশরীর এব প্রকাশো যুক্তঃ।’ (ঐ, পৃঃ ২১৩)
৪. ‘বিমর্শ এব প্রধানম্ আত্মনো রূপম্।’ (ঐ, পৃঃ ২০০)
৫. “সর্বাঃ শক্তীঃ কর্তৃত্বশক্তিঃ ঐশ্বর্যাত্মা সমক্ষিপতি। সা চ বিমর্শরূপা।” (ঐ, পৃঃ ২১৪)
৬. ‘বিমর্শ এব দেবস্য শুদ্ধে জ্ঞানক্রিয়ে যতঃ।’ (দ্রঃ সর্বদর্শনসংগ্রহ)
৭. দ্রঃ প্রত্যভিজ্ঞাহৃদয়, পৃঃ ৬৮
৮. দ্রঃ তন্ত্রসার, পৃঃ ২৮
৯. প্রত্যভিজ্ঞাহৃদয়, পৃঃ ৩
১০. ঐ, পৃঃ ২
১১. দ্রঃ ঈশ্বরপ্রত্যভিজ্ঞাবিমর্শিনী, ১ম ভাগ
১২. তন্ত্রালোক, ১ম আহ্নিক, পৃঃ ১২১
১৩. শিবদৃষ্টি, ৩।২
১৪. তন্ত্রালোক, ১ম আহ্নিক, পৃঃ ১৯৫
১৫. ঈশ্বরপ্রত্যভিজ্ঞাবিমর্শিনী, ১ম অধ্যায়, ৩য় আহ্নিক, পৃঃ ১৪০
১৬. ঈশ্বরপ্রত্যভিজ্ঞাবিমর্শিনী, ১
১৭. তন্ত্রালোক, ১।২
১৮. ঐ, ১।৩
১৯. ঐ, ১।৫
সহায়ক গ্রন্থ
১. অভিনবগুপ্ত, ঈশ্বরপ্রত্যভিজ্ঞাবিমর্শিনী, ১ম ভাগ, কাশ্মীর সিরিজ অব টেক্সট অ্যান্ড স্টাডিজ, নং xxii, ১৯১৮; ২য় ভাগ, নং xxxiii, ১৯৩২
২. আগমবাগীশ, কৃষ্ণানন্দকৃত, বৃহৎ তন্ত্রসার, রসিকমোহন চট্টোপাধ্যায় (সম্পাদিত), নবভারত পাবলিশার্স, কলকাতা, ২০০১
৩. মিশ্র, ডাঃ পরমহংস (সম্পাদিত), তন্ত্রালোক, সম্পূর্ণানন্দ সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়, বারাণসী, ২০০০, ১ম ভাগ
৪. কবিরাজ, গোপীনাথ, তান্ত্রিক সাধনা ও সিদ্ধান্ত, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, বর্ধমান, ১৪১৬
৫. মাধবাচার্য, সর্বদর্শনসংগ্রহ, বাসুদেব শাস্ত্রী (সম্পাদিত), দি ভাণ্ডারকর ওরিয়েন্টাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট, পুনে, ১৯২৪
৬. ক্ষেমরাজ্য, রাজানক, প্রত্যভিজ্ঞাহৃদয়ম্, সুধাংশুকুমার বাগচী (সম্পাদিত), চৌখম্বা সুরভারতী প্রকাশনম্, বারাণসী, ২০১৭
৭. শিবতত্ত্বপ্রদীপিকা, মুখোপাধ্যায়, উপেন্দ্রনাথ (অনূদিত), নবভারত পাবলিশার্স, কলকাতা, ১৪২০
৮. ‘শ্রীশিবদৃষ্টি’, কাশ্মীর সংস্কৃত গ্রন্থাবলী, গ্রন্থাঙ্ক ৫৪, অরোমা পাবলিশিং হাউস, দিল্লি, ১৩৯৪
‘স্বামী রঙ্গনাথানন্দ স্মারক রচনা’রূপে এটি প্রকাশিত হলো।
বেদান্ত বিভাগ, সংস্কৃত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়