শ্রীভগবান সা‌ক্ষাৎ পরব্রহ্ম—তিনি ‘অমূর্তম্‌’ এবং ‘অমৃতম্‌’। তথাপি তিনি আমাদেরই জন্য ‘মূর্তম্‌’ ও ‘মর্ত্যম্‌’-ও হয়ে থাকেন।

[পূর্বানুবৃত্তি : ফাল্গুন সংখ্যার পর]।।২।। শ্রীভগবান সা‌ক্ষাৎ পরব্রহ্ম—তিনি ‘অমূর্তম্‌’ এবং ‘অমৃতম্‌’। তথাপি তিনি আমাদেরই জন্য ‘মূর্তম্‌’ ও ‘মর্ত্যম্‌’-ও হয়ে থাকেন। এই কথা কাটার জো নেই। যে-কথাটি আগেও তোলা হয়েছে—‘অমূর্তম্‌’ ও ‘অমৃতম্‌’ই যাঁর ভাবসত্তা, তাঁর জন্ম-মৃত্যু কল্পনা নিতান্তই বাল্যক্রীড়া; তাঁর জন্মোৎসব, তিরোধান উদ্‌যাপনও ততোধিক হাস্যকর। অথচ যুগ যুগ ধরে এজাতীয় উৎসবাদি অধ্যাত্মজগতে চলেও আসছে—এও তো অস্বীকার করা চলে না এবং এমন উৎসব, জন্মতিথি পালন যে শাস্ত্র তথা শ্রীভগবানের অনুমোদনপ্রাপ্ত তাও আমরা জানি। ‘জন্ম’ কথাটির তাৎপর্য হচ্ছে—অরূপের রূপধারণ, অমূর্তের মূর্ত-ইব হয়ে প্রকাশ। জন্ম অর্থে তাই অযোনি যিনি, তিনি জায়মান হন—যেন সম্ভূত হয়ে প্রকাশিত হন। অর্থাৎ ‘ভাব’-এরই একটি বিশেষ ভাব—‘আবিঃ ভাব’। ‘আবিঃ’র অর্থ প্রকাশ। আমরা তাই বলে থাকি, জন্ম মানে আবির্ভাব। এই তাৎপর্যার্থকে স্মরণে রেখে জন্মতিথি উদ্‌যাপনে শ্রীভগবানের প্রকাশ-ভাবকে গভীরভাবে মনন-চিন্তন করতে, তাঁকে নিয়ে নানাভাবে আনন্দোৎসবে কোনো বাধা তো নেই-ই, পরন্তু অভাবপ্রিয় মানবের প‌ক্ষে পরম কল্যাণের নিদান—অভাবকে অ-যুক্ত করার এক শ্রেষ্ঠ পন্থা। ‘অ’ মানে অজ্ঞান—সমষ্টিতে যার নাম মায়া। ‘ভাব’—শুদ্ধ চৈতন্য যখন অজ্ঞানযুক্ত। মায়াচ্ছন্ন যখন তখনি তো ‘অভাব’। মনে রাখতে হবে, ‘অভাব’-এর মধ্যেও ‘ভাব’ বিদ্যমান। যত‌ক্ষণ পর্যন্ত এই জ্ঞান বা ‘ভাব’ আয়ত্ত না হচ্ছে, তত‌ক্ষণ পর্যন্ত অভাবের জগতের সমস্ত ভজনরীতি, জন্মোৎসব সবই ঠিক রাখতে হবে। ভগবৎ-উপদেশও তাই। শ্রীমদ্ভাগবত-এ আছে, শ্রীভগবান পরিষ্কার নির্দেশ দিেচ্ছন—যতদিন পর্যন্ত সর্বভূতান্তর্যামী আমাকে নিজ হৃদয়ে না উপলব্ধি হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত পূজা-অর্চনা, উৎসবাদি ঠিক ঠিক পালন করবে—প্রতিমা, ঘট, পটাদিতে আমিই অধিষ্ঠিত জেনে বন্দনা করবে। “অর্চাদাবর্চয়েত্তবদীশ্বরং মাং স্বকর্মকৃৎ।যাবন্ন বেদ স্বহৃদি সর্বভূতেষ্ববস্থিতম্‌।।”১৯ শুধু পূজা-উৎসবাদি সাধারণভাবেই বলেননি, শ্রীভগবান তাঁর জন্মলীলা স্মরণ করেও পর্বাদির অনুমোদন জ্ঞাপন করেছেন—এমন কথাও ভাগবতে পাই আমরা। মহাজ্ঞানী উদ্ধবের মতো ব্যক্তিকেও তিনি উপদেশ দিয়েছেন : “আমার মন্দিরাদিতে ভক্তগণ সমবেত হয়ে আমারই প্রীতিসাধনে আমার জন্ম-কর্ম-লীলা বিষয়ক কথা-কীর্তন, আমাকে নিয়ে নানাবিধ উৎসব-পর্ব, গীতবাদ্য, সভা ইত্যাদি করে থাকে।” “মজ্জন্ম কর্ম কথনং মম পর্বানুমোদনম্‌।গীততাণ্ডববাদিত্রগোষ্ঠীভির্মদ্‌গৃহোৎসবঃ।।”২০ তাছাড়া অভাবক্লিষ্ট এই সংসারের মধ্যে থেকেও কীভাবে শ্রীভগবানের ভাবে নিজেকে পরিপূরিত রাখা যায়, তারও...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in