প্রায় আড়াইশো বছর আগে এটি লিখেছিলেন কবি বিজয়রাম সেন। ঘরে বসে তিনি প্রয়াগ-মাহাত্ম্য
“প্রয়াগখণ্ডে মুনিগণ কহিয়াছেন কথা।প্রয়াগে মুণ্ডিয়া মাথা মরুক যথাতথা।।প্রয়াগেতে মাঘ মাসে যেবা করে স্থিতি।অবশ্য হইবে তার নির্ব্বাণ-মুকতি।।”১ প্রায় আড়াইশো বছর আগে এটি লিখেছিলেন কবি বিজয়রাম সেন। ঘরে বসে তিনি প্রয়াগ-মাহাত্ম্য রচনা করেননি। বছর খানেক ধরে তিনি মূলত গয়া, কাশী এবং এলাহাবাদ পরিদর্শন করে সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লেখেন তীর্থ-মঙ্গল কাব্য। কাব্যাংশটি সেখান থেকেই গৃহীত।প্রয়াগ-কুম্ভ সম্পর্কে সাহিত্যের সম্ভার কিংবা পুরাণের কাহিনি সংগমের ঊর্মিমালার মতোই অগণিত। সাহিত্যসম্ভারের সামান্য কিছু আমরা আস্বাদন করব। তবে তার পূর্বে তীর্থ-মঙ্গল সম্পর্কে দু-চারটি কথা বলে নেওয়া প্রয়োজন। জয়রাম ছিলেন একাধারে কবি ও কবিরাজ। খিদিরপুরের জমিদার কৃষ্ণচন্দ্র ঘোষালের সঙ্গী হয়ে তিনি তীর্থযাত্রা করেছিলেন। ১৭৬৯ সালের প্রথম দিকে এই তীর্থযাত্রার সূচনা। এর বছর কয়েক আগে ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা-বিহার-ওড়িশার দেওয়ানি লাভ করেছে। সেই হিসাবে, প্রশাসনিক পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে তীর্থ-মঙ্গল এক সামাজিক দলিল। বিজয়রামের পৃষ্ঠপোষক কৃষ্ণচন্দ্রের পুত্র ‘ভূ-কৈলাস’ জয়নারায়ণ ঘোষাল পরে কাশীবাসী হন। কাশীতে শিক্ষাপ্রসার এবং কাশীখণ্ড-এর অনুবাদ জয়নারায়ণের উজ্জ্বল কীর্তি। বিজয়রামের আমলে বেশ কিছুটা সময় নিয়ে মানুষ তীর্থযাত্রা করত। বাঙালির কাছে কাশী, এলাহাবাদ ছিল দূরদেশ। একবার তীর্থযাত্রায় বের হলে যাত্রীরা বেশ কয়েকটি তীর্থ দর্শন করে তবে বাড়ি ফিরত। দেবদর্শন, পুণ্যসঞ্চয়ের পাশাপাশি অনেকের লক্ষ্য থাকত স্বাস্থ্য-উদ্ধার। বিজয়রামের কাব্য অনুযায়ী, এক স্বপ্নদর্শনের সুবাদে তীর্থযাত্রায় উদ্যোগী হয়েছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র। কাব্যরচনার প্রায় একশো বছর পর তীর্থ-মঙ্গল গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হওয়ার সময় সম্পাদনা করেছিলেন বাংলা বিশ্বকোষ-এর সংকলক নগেন্দ্রনাথ বসু। তাঁর পর্যবেক্ষণ—শুধু স্বপ্নদর্শন নয়, এই তীর্থযাত্রার নেপথ্যে কিঞ্চিৎ রাজধর্মের অনুজ্ঞা ছিল। প্রয়াগ তীর্থরাজ। মাঘ মাসে, বিজয়রামের ভাষায়, ‘নির্ব্বাণ-মুকতি’র আশায় লক্ষ লক্ষ মানুষ স্নান করে ত্রিবেণীসংগমে। মেলা বসে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে সাধু-সমাগম হয়। বহুবর্ণ ভারতের এক বৈচিত্রময় খণ্ড সংস্করণ মাঘ মেলা তথা অর্ধকুম্ভ এবং পূর্ণকুম্ভে ফুটে ওঠে গঙ্গা-যমুনার সংগমস্থলে। পুণ্য সঞ্চয়ের পাশাপাশি অনেকে যান মানুষ দেখতে। কারো কাছে মেলা মানে বাণিজ্য, কারো কাছে কর্মস্থল। লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় সামলাতে হাজির থাকে সহস্র পুলিশ, সরকারি কর্মী, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য।...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹100/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in