মাঝে মাঝে আমি এইরকম ভাবি। দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুর তাঁর ঘরটিতে বসে আছেন। আর আমি গুটিগুটি একটা
মাঝে মাঝে আমি এইরকম ভাবি। দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুর তাঁর ঘরটিতে বসে আছেন। আর আমি গুটিগুটি একটা শামুকের মতো তাঁর সামনে গিয়ে হাজির হয়েছি। সময়টা ধরা যাক সকাল নটা। শরৎকাল। আকাশের রং জলে ধোওয়া ঝকঝকে নীল। তাকালে যেন অনেক গভীর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে তুলোর মতো তুলতুলে টুকরো টুকরো সাদা মেঘ মহানন্দে ফুল্ল কুসুমের মতো ভেসে ভেসে চলেছে। কাঁচা হলুদের মতো রোদ। চারিদিকে যেন আনন্দের ধারা বইছে। ‘বহে নিরন্তর অনন্ত আনন্দধারা’—রবীন্দ্রনাথের এই কলিটি আমি গুনগুন করছি। ঠাকুর বসে আছেন তাঁর ঘরে। তাঁর ধবধবে বিছানার ওপর। পা-দুটি ঠেকে আছে মেঝেতে। পাদুকা-দুটি কিছু দূরে অপেক্ষা করে আছে কখন তারা স্পর্শ পাবে। পশ্চিমের বারান্দার দিকের দরজাটি খোলা। পূর্বদিকের দরজাটি খোলা। উত্তরদিকের দরজাটিও খোলা। ঘরের মধ্যে আকাশ ঢুকে পড়েছে। আমার দিকে তাকালেন। তাঁর ঠোঁটে একটুকরো হাসি খেলে গেল। ইশারায় আমাকে বসতে বললেন। ঠাকুর আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। মৃদু গলায় জিজ্ঞেস করলেন—কী চাই? তাঁর তাকানোর মধ্যে এমন একটা তীক্ষ্ণতা ছিল, যেন লেজার বিম! কিছুই বলেননি। কিন্তু তাকিয়ে থেকেছেন কিছুক্ষণ। আমার মনে হলো আমার ভেতরের আঁটসাঁট বাঁধনটি, এতকালের গঠনটি যেন আলগা হয়ে গেছে। আমার সমস্ত গোপনীয়তা, রাখঢাক, চালাকি সব যেন প্রকাশিত হয়েছে। নিজেকে মনে হচ্ছে বেশরম। তিনি বললেন—কেন এসেছ? তোমার আধার আমি দেখে নিয়েছি। তুমি যা হতে চাইছ, তা তো হতে পারবে না। তুমি তো ঈশ্বরকে চাও না, তুমি তো প্রকৃত জ্ঞানী হতে চাও না, তোমার ভেতরটা তো আকাঙ্ক্ষায় ভরা। আধুনিক কালে তোমাদের বয়ানে দুটো শব্দ ঘোরাফেরা করে। ‘ম্যান’ আর ‘গডম্যান’। তুমি আছ ম্যান, হতে চাইছ গডম্যান। আদায় করতে চাইছ বাড়তি খাতির। তোমার ল্যাজটা আমি দেখে নিয়েছি। আমার ল্যাজ! হ্যাঁ, তোমার ল্যাজ! কাবুলি বেড়ালের মতো একটি মোটাসোটা ল্যাজের অধিকারী তুমি। তুমি সেইটিকেই আরো একটু ফোলাতে চাইছ। তোমার দীক্ষা হয়েছে? আজ্ঞে হ্যাঁ। রোজ নিয়ম করে জপ কর? মাঝে মাঝে ফাঁক পড়ে যায়। আমার একটা হিসেবের খাতা আছে।...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹100/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in