শ্রীরামকৃষ্ণ একবার শ্রীমায়ের সম্বন্ধে বলেছিলেন : “ও সারদা-সরস্বতী—জ্ঞান দিতে
শ্রীরামকৃষ্ণ একবার শ্রীমায়ের সম্বন্ধে বলেছিলেন : “ও সারদা-সরস্বতী—জ্ঞান দিতে এসেছে।”১ কথাটি প্রথম শুনলে অনেকের মনেই বিস্ময় জাগে। শ্রীমা সারদাদেবী তো সাধারণ গ্রামবাংলার এক ঘরের মেয়ে—যাঁর আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। তিনি কোনো টোল বা পাঠশালায় যাননি। তাহলে মা কীভাবে ‘জ্ঞান’ দেবেন? প্রশ্নটি গভীর এবং ঠাকুরের এই উক্তিটির অন্তর্নিহিত দর্শনটি অন্বেষণ করা আমাদের বিশেষ প্রয়োজন। বেদ হলো অনন্ত জ্ঞানের ভাণ্ডার। সেখানে দুইটি বিষয় প্রকাশ করা হয়েছে। একদিকে আছে ইষ্টপ্রাপ্তির উপায়—অর্থাৎ যেটি আমাদের কাম্য, সেটি কীভাবে অর্জন করা যায়। যেমন, অর্থ চাইলে তা উপার্জনের সঠিক পদ্ধতিও জানা দরকার। অন্যদিকে বেদ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়—অনিষ্ট পরিহারের উপায়। বেদ আমাদের শেখায় কীভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়ের থেকে দূরে থাকা যায়। সমগ্র বেদের বিষয়বস্তু এই দুটি। ভগবান শঙ্করাচার্য বৃহদারণ্যকোপনিষদ-এর ভাষ্যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি লিখেছেন: ‘সর্বোঽপ্যয়ং বেদঃ প্রত্যক্ষানুমানাভ্যাম্ অনবগতেষ্টানিষ্টপ্রাপ্তিপরিহারোপায়প্রকাশনপরঃ।’২ এটা তাঁর সিদ্ধান্তবাক্য। সহজভাবে বলতে গেলে—বেদের মূল উদ্দেশ্য হলো আমাদের দেখানো কীভাবে জীবনের কাম্য বস্তু লাভ করা যায় এবং কীভাবে অশুভ ও ক্ষতিকর বিষয়গুলো পরিহার করা যায়। যুগে যুগে অবতাররা আসেন এই বৈদিক ধর্ম যাতে তার প্রকৃত স্বরূপে প্রকাশিত হতে পারে তা নিশ্চিত করতে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যেমন বলেছেন—‘ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।’ শ্রীমা ছিলেন স্বয়ং সেই বেদমূর্তি। ইষ্টলাভ ও অনিষ্ট পরিহারের যে-নীতি বেদে বলা আছে, তিনি তা-ই সহজ ভাষায় মানুষের হৃদয়ে রোপণ করেছেন। ফলে তাঁর বাণীই হয়ে উঠেছে বেদজ্ঞানের জীবন্ত প্রতিধ্বনি। ইষ্টপ্রাপ্তি অর্থাৎ আমরা যাকিছু চাই—তার ধরন বহু রকমের হতে পারে। অনেক সময় আমাদের চাওয়া একে অপরের পরস্পরবিরোধী বলেও মনে হয়। কেউ চায় বিদেশে গিয়ে বসবাস করতে; আবার অন্য কেউ চায় বিদেশ ছেড়ে স্বদেশে ফিরে আসতে। কেউ আকাঙ্ক্ষা করে প্রচুর অর্থ সঞ্চয় করার, আর কেউ সমস্ত অর্থ দান করে একান্ত সাধনামুখী জীবনযাপন করতে চায়। প্রথম দৃষ্টিতে এইগুলো পরস্পরের বিপরীত স্বভাবের বলে মনে হয়। কিন্তু গভীরভাবে বিচার করলে দেখা যায়, এগুলো প্রকৃত অর্থে বিরোধী নয়। কারণ সব চাওয়ার অন্তরালে যে...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹120/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in
