স্বামী বিদ্যারণ্য বা বিদ্যারণ্য মুনি (১২৯৬—১৩৮৬)
শ্রীমৎ বিদ্যারণ্য স্বামী উপক্রমণিকা স্বামী বিদ্যারণ্য বা বিদ্যারণ্য মুনি (১২৯৬—১৩৮৬) ছিলেন অপূর্ব মনীষা, গভীর পাণ্ডিত্য এবং প্রজ্ঞাসমুজ্জ্বল সাধনজীবনের অধিকারী। পূর্বাশ্রমে ‘মাধব’ নামে পরিচিত ছিলেন।১ বিদ্যারণ্য-কৃত পরাশর-মাধব গ্রন্থ থেকে জানা যায়, তাঁর গোত্র ছিল ভরদ্বাজ, পিতা মায়ণ, মাতা শ্রীমতী এবং অন্য দুই ভাই হলেন প্রসিদ্ধ বেদভাষ্যকার সায়ণাচার্য এবং ভোগনাথ। মাধব শুধু অসামান্য পণ্ডিত এবং কর্মনিষ্ঠ সন্ন্যাসীই ছিলেন না, সেইসঙ্গে ছিলেন ধুরন্ধর কূটনীতি-বিশারদ। প্রধানত নিজ প্রতিভার বলে ১৩৩৫/৩৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি দাক্ষিণাত্যে বিজয়নগর রাজ্য স্থাপন করে প্রায় তিরিশ বছর যাবৎ সেখানকার রাজা হরিহর-১, বুক্ক এবং হরিহর-২-এর প্রধানমন্ত্রীর পদ অলংকৃত করেছিলেন জানা যায়।২ এরই কোনো এক সময়ে তিনি রাজার নির্দেশে কিছুদিন জয়ন্তীপুরে রাজত্বও করেছিলেন। পরবর্তিকালে তিনি শৃঙ্গেরী মঠের পীঠাধীশের কাছে সন্ন্যাসগ্রহণ করে ‘বিদ্যারণ্য মুনি’ নামে পরিচিত হন এবং ১৩৭৫ থেকে ১৩৮৬ অর্থাৎ মহাসমাধি লাভ করা পর্যন্ত শৃঙ্গেরী মঠের পীঠাধীশ ছিলেন। ভারতীর বরপুত্র, পণ্ডিতকুল-শিরোমণি বিদ্যারণ্য স্বামী দর্শন, স্মৃতি, জ্যোতিষ, ব্যাকরণ প্রভৃতি বিষয়ে গ্রন্থ রচনা করে বাণীর পাদপীঠের শোভাবর্ধন করেছিলেন। তাঁর বিরচিত গ্রন্থাবলির মধ্যে পঞ্চদশী, জীবন্মুক্তিবিবেকঃ, অনুভূতি প্রকাশ, অপরোক্ষানুভূতির টীকা, ঐতরেয়োপনিষদ্-দীপিকা, ছান্দোগ্যোপনিষদ্-দীপিকা, তৈত্তিরীয়োপনিষদ্-দীপিকা, শঙ্করদিগ্বিজয়, সর্বদর্শন-সংগ্রহ, জৈমিনীয় বৃহদারণ্যক-বার্তিকসার, পরাশর-মাধব, কাল-মাধব প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।৩ সর্বশাস্ত্রে অসাধারণ ব্যুৎপত্তির জন্য তাঁকে ভগবৎ-পাদ শ্রীশঙ্করাচার্যের অবতার বা দ্বিতীয় শঙ্করাচার্যও বলা হয়। বিদ্যারণ্য মুনির বিরচিত আরেকটি অনবদ্য উল্লেখযোগ্য স্তোত্র শার্দূলবিক্রীড়িত ছন্দে রচিত এবং দশটি স্তবকে বিন্যস্ত—‘দুর্বাসনা-প্রতিকারদশকম্’।৪ দুর্বাসনা হলো কাম, ক্রোধ, লোভ প্রভৃতি দুষ্টবাসনাসমূহ, যা আত্মজ্ঞান বা ভগবানলাভের পথে প্রতিবন্ধক। আলোচ্য বেদান্ত-স্তোত্রটিতে দুষ্টবাসনাসমূহের স্বরূপ, দুষ্টবাসনা প্রতিকারের উপায়, মানবজন্ম সফল করে তোলার রহস্য ইত্যাদি থেকে শুরু করে একজন মুমুক্ষুর আদর্শ জীবনচর্যা কীরকম হবে ইত্যাদি সাধন-জীবনের অত্যাবশ্যক বিবিধ দিশা প্রসন্ন-গম্ভীর ভঙ্গিতে সূত্রাকারে উল্লিখিত হয়েছে। প্রথম শ্লোক : মুমুক্ষুর দিন-রাত্রির জীবনচর্যা কীরকম হবে, সেসম্পর্কে বলা হচ্ছে— প্রাতর্বৈদিককর্মতস্তদনু সদ্বেদান্তসঞ্চিন্তয়াপশ্চাদ্ ভারতমোক্ষধর্মকথয়া বাসিষ্ঠরামায়ণাৎ।সায়ং ভাগবতার্থতত্ত্বকথয়া রাত্রৌ নিদিধ্যাসনাৎকালো গচ্ছতু নঃ শরীরভরণং প্রারব্ধকণ্ঠার্পিতম্।১ অন্বয়—[মুমুক্ষু সাধক] প্রাতঃ (প্রাতঃকালে) বৈদিক কর্মতঃ (সন্ধ্যাবন্দনা, উপাসনাদি শাস্ত্রনির্দিষ্ট কর্ম করার মধ্য দিয়ে) তৎ অনু (তারপর) সদ্ বেদান্ত সদ্ চিন্তয়া (গীতা, উপনিষদ...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹120/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in
