জয়রামবাটীতে মায়ের বাড়ির উঠান ঝাড়ু দিয়ে একজন ঝাঁটাটি ছুঁড়ে একদিকে ফেলে

জয়রামবাটীতে মায়ের বাড়ির উঠান ঝাড়ু দিয়ে একজন ঝাঁটাটি ছুঁড়ে একদিকে ফেলে রেখেছিলেন। বারান্দায় রোদে বসে তেল মাখতে মাখতে মা সেটি লক্ষ্য করে বলেন : “ঝাঁটাটিকেও মান্যি করে রাখতে হয়, সামান্য কাজটিও শ্রদ্ধার সহিত করতে হয়।” স্বামী চেতনানন্দ তাঁর ধ্যানলোকে শ্রীমা সারদা দেবী বইতে ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন ‘ঝাঁটা ও চুপড়ির আত্মকথা’ অধ্যায়ে। মহারাজের লিখনশৈলীতে মনে হয়, ঝাঁটাও যেন স্মরণ করছে মাতৃস্নেহের স্পর্শটুকু। মা যেন শেখাতে চেয়েছেন—সম্মান, শ্রদ্ধা জড়পদার্থের মধ্যেও অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। আমি লিখতে বসেছি। সামনে খোলা ল্যাপটপ, আমার চিন্তাগুলিকে কি-বোর্ডের রিড দিয়ে অনুলিখন করে স্ক্রিনে ফুটিয়ে তোলাই আপাতত আমার কাজ। চিন্তাগুলি গুছিয়ে ফেলেছি, হঠাৎ কানে এল দূরের কোনো গাছে কোকিল ডাকছে। আজকাল এই শহরে কোকিলের ডাকও কেমন কর্কশ হয়ে গেছে! কিন্তু মধ্য-বৈশাখের কুহুধ্বনিটি বেশ মিষ্টি। মন দিয়ে শুনতে লাগলাম। অনেক দূরের যে-শব্দ এতক্ষণ অস্পষ্ট ছিল, এখন তা যেন স্পষ্ট হয়ে উঠল। সত্যিই কি কোকিল একটু জোরে ডাকছে এখন, না কি আমি মন দিয়ে শুনছি বলে জোরালো লাগছে? অবিলম্বে কোকিলের সংগীতসাধনার ফল মিলল। দ্বিতীয় একটি কোকিলের স্বরও তার সঙ্গে যোগ দিল। দুজনে কী ভাববিনিময় হলো জানি না, কিছু পরে দুজনেই চুপ করে গেল। উড়েই গেল বুঝি বা। আমি ফিরে এলাম লেখায়। হায় রে! দেখলাম ভাবনার সুতো ছিঁড়ে গেছে। আবার চিন্তাগুলি গাঁথতে হবে নতুন করে। অনুসরণ করা যাক আমার মনকে। লেখার বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত থেকে সে যে-ভাবনাগুলি চয়ন করেছিল, অন্য এক সুখের অনুভূতিকে উপভোগ করতে গিয়ে তা হারিয়ে ফেলল। এক্ষেত্রে ক্ষতি হয়তো তেমন বড় নয়, লাভও তেমন লোভনীয় নয়। তাই ভাবতেই পারি যে, সাময়িক ভাললাগার জন্য আরেকবার ভাবার সময় ও চেষ্টাটুকু দেওয়াই যায়। এতে এত কথার দরকার কী? কিন্তু যদি সততার সঙ্গে তাকিয়ে দেখি আমার অপরাধটি, যদি ভাবি শ্রীশ্রীমার আদেশ কোথায় লঙ্ঘন করলাম তাহলে খুব স্পষ্ট যে, আমার লেখার কাজটিকে আমি যথাযোগ্য ‘মান্যি’ করিনি। মায়ের কথা শুনে ঐ মহিলা ঝাঁটাটি এনে শ্রদ্ধাভরে যথাস্থানে...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹120/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in