আশ্বিনের শিউলি-বিছানো পথপানে চাহিয়া আমরা এখন জগজ্জননী দেবী দুর্গার আগমনের
আশ্বিনের শিউলি-বিছানো পথপানে চাহিয়া আমরা এখন জগজ্জননী দেবী দুর্গার আগমনের প্রতীক্ষায়। রূপ ও রঙের বর্ণালিতে প্রকৃতি আজ অপরূপ শোভিতা। মমতাময়ী, জ্যোতির্ময়ী মা দুর্গার চরণচিহ্ন একটি দুটি করিয়া লোকমানসে ক্রম-প্রস্ফুটিত। বাজিয়া উঠিয়াছে মাতৃপূজার বোধনশঙ্খ। আসন্ন আনন্দোৎসবের কল্পনায় আমরা আত্মহারা।শ্রীদুর্গার নাম স্মরণমাত্র আমাদের চিত্তে ফুটিয়া উঠে ত্রিনয়না, সিংহবাহিনী, মহিষমর্দিনী এক উজ্জ্বল দেবীরূপ। তিনি চতুর্ভুজা, ষড়ভুজা, অষ্টভুজা, দশভুজা, ষোড়শভুজা, অষ্টাদশভুজা—বিবিধরূপে পূজিতা হইয়া থাকেন। তবে বঙ্গদেশে দশভুজা প্রতিমার আরাধনাই সর্বাধিক প্রচলিত। শস্যশ্যামলা বঙ্গদেশের এই পূজা প্রকৃতপক্ষে শক্তিরই পূজা। বিভিন্ন সংকটময় পরিস্থিতিতে এই শক্তিরূপিণী দুর্গার শরণাগত হইবার ইতিহাস সুপ্রাচীন। মহাভারত-এর ‘বিরাটপর্ব’-এ দুর্গাস্তবের উল্লেখ রহিয়াছে। পাণ্ডবগণ দ্বাদশ বর্ষ বনবাসের পর এক বৎসর কঠিন অজ্ঞাতবাসের জন্য মহারাজা বিরাটের মৎস্য রাজ্যে যাইবেন। এই অজ্ঞাতবাস সফল করিবার জন্য ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির দেবী দুর্গার শরণাগত হইয়া স্তব করিলেন—“শরণং ভব মে দুর্গে! শরণ্যে! ভক্তবৎসলে…!”—হে শরণাগতপালিকে, ভক্তবৎসলে দুর্গে! আমি আপনার শরণাগত, আমাদের রক্ষা করুন। সন্তানের কাতর প্রার্থনায় সন্তুষ্টা দেবী দর্শন দিয়া তাঁহার মনস্কামনা পূরণের আশ্বাস দিলেন।কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর পূর্বে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে যুদ্ধে জয়লাভের জন্য জগন্মাতা দুর্গার স্তুতি করিতে বলিলেন—‘পরাজয়ায় শত্রূণাং দুর্গাস্তোত্রমুদীরয়’। শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশে অর্জুন কপিধ্বজ রথ হইতে অবতরণ করিয়া করজোড়ে শ্রীদুর্গা দেবীর স্তব করিলেন। কাতরচিত্তে তিনি প্রার্থনা জানাইলেন—“স্তুতাসি ত্বং মহাদেবি! বিশুদ্ধেনান্তরাত্মনা।/ জয়ো ভবতু মে নিত্যং ত্বৎপ্রসাদাদ্রণাজিরে।।”—হে মহাদেবি! আমি পবিত্রহৃদয়ে আপনার স্তব করিলাম। আপনার কৃপায় রণভূমিতে সর্বদাই যেন বিজয়ী হই। অর্জুনের প্রার্থনায় তুষ্টা হইয়া দেবী আবির্ভূতা হইলেন, শ্রীকৃষ্ণের সমক্ষেই আকাশ হইতে আশীর্বাদ করিয়া বলিলেন : “হে দুর্ধর্ষ অর্জুন! তুমি স্বয়ং নর-ঋষি। (কৃষ্ণরূপী) নারায়ণ তোমার সহায়।… তুমি শীঘ্রই সকল শত্রুকে সংগ্রামে পরাজিত করিবে।” মা দুর্গার আশীর্বাণী সফল হইল। কৃত্তিবাসের রামায়ণ অনুসারে রাম ও রাবণ উভয়েই ছিলেন দেবীর ভক্ত। দুর্গাপূজার মন্ত্রে স্পষ্ট রহিয়াছে—‘রাবণস্য বধার্থায় রামস্যানুগ্রহায় চ’। অর্থাৎ, অকালবোধন হইয়াছিল রামের প্রতি দেবী দুর্গার অনুগ্রহ এবং রাবণবধের নিমিত্ত। কৃত্তিবাসের গ্রন্থে রহিয়াছে—রামচন্দ্র স্বয়ং অকালবোধন করিয়া একশত আট নীলপদ্ম দিয়া দুর্গাপূজা করিয়াছিলেন। কাহিনিটি এইরূপ—শ্রীরামচন্দ্র দেবীর পূজায় অষ্টোত্তরশত পদ্ম নিবেদন করিবার...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹120/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in
