জগন্নাথ-মন্দিরের দক্ষিণ-পশ্চিম পার্শ্বে পুরুষোত্তমক্ষেত্রের পঞ্চশিব বা পঞ্চদ্বারপালের
[পূর্বানুবৃত্তি : শ্রাবণ সংখ্যার পর]।।৩।। জগন্নাথ-মন্দিরের দক্ষিণ-পশ্চিম পার্শ্বে পুরুষোত্তমক্ষেত্রের পঞ্চশিব বা পঞ্চদ্বারপালের অন্যতম যমেশ্বর শিবমন্দিরের সংলগ্ন উদ্যান ‘যমেশ্বর তোটা’ নামে অভিহিত। উৎকল ভাষায় ‘তোটা’ শব্দের অর্থ ‘উদ্যান’; যমেশ্বরের আনন্দবর্ধক এই উদ্যানটিতেই শ্রীচৈতন্যের প্রিয় পার্ষদ গদাধর পণ্ডিত থাকতেন। এই স্থানে বসেই শ্রীচৈতন্য গদাধর পণ্ডিতের ভাগবত-ব্যাখ্যা শ্রবণ করে আনন্দিত হতেন। মহাভাবে বিভোর শ্রীচৈতন্য একদিন এখানে দুহাতে বালুকারাশি সরিয়ে তাঁর প্রাণনাথের সন্ধান করতে থাকেন এবং অচিরেই অন্তরাল থেকে আবির্ভূত হন প্রস্তরময় এক শ্রীমূর্তি—মোহন গোপীনাথ। সেই থেকে গদাধর পণ্ডিতের সাধনকুটিরে মোহন গোপীনাথ নিত্যপূজিত এবং এই স্থানে প্রতিষ্ঠিত মঠ শ্রীতোটাগোপীনাথ মঠ নামে সুবিখ্যাত হয়। কথিত আছে, বৃদ্ধাবস্থায় গদাধর পণ্ডিত অতি ন্যুব্জ হয়ে পড়লে গোপীনাথের মস্তক ও মুখমণ্ডলের শৃঙ্গার করতে অসমর্থ হয়ে পড়েছিলেন। সেই দুঃখে তিনি প্রাণবিয়োগের সংকল্প করেন। তখন ভক্তবৎসল গোপীনাথ সেবকের সেবাগ্রহণের জন্য দণ্ডায়মান অবস্থা থেকে পদদ্বয় সংকুচিত করে নেন। সেই অবস্থায় এখনো তিনি বিরাজমান। শ্রীচৈতন্যের অন্যতম পার্ষদ পরমানন্দ পুরী জগন্নাথ-মন্দিরের পশ্চিমদিকে বাসেলিসাহিতে একটি মঠস্থাপন করে সাধনভজন করতেন। শ্রীচৈতন্য বহুবার এখানে এসে শাস্ত্রালোচনা করেছেন। বর্তমানে এটি শ্রীপুরীগোস্বামী মঠ। একসময় মঠের সংলগ্ন একটি কূপ অত্যন্ত কর্দমাক্ত হয়ে পড়লে শ্রীচৈতন্যের প্রার্থনায় জগন্নাথের কৃপায় সেটি গঙ্গাজলে পূর্ণ হয়ে উঠলে সপার্ষদ শ্রীচৈতন্য সেই জলে মহানন্দে স্নান করে এই মঠক্ষেত্রকে অতি পবিত্র করে দিয়েছেন। শ্রীচৈতন্য প্রথমবার শ্রীক্ষেত্রে পৌঁছে বালিসাহিতে বাসুদেব সার্বভৌমের গৃহে অবস্থান করেছিলেন, আগেই বলা হয়েছে। সার্বভৌমের আবাসস্থল জগন্নাথ-মন্দিরের দক্ষিণে পঞ্চতীর্থের অন্যতম শ্বেতগঙ্গার তীরে অবস্থিত ছিল। শ্রীচৈতন্যের লীলাবিলাসের অন্যতম ক্ষেত্র এই গৃহ পরবর্তিকালে পরিত্যক্ত অবস্থায় পতিত হলে শচীদেবী নামে এক সাধ্বী বৃন্দাবন থেকে এসে সার্বভৌমের পূজিত শালগ্রাম শিলা খুঁজে পেয়ে ক্ষেত্রটিকে শনাক্ত করেন এবং শ্রীচৈতন্যের স্মৃতিবিজড়িত স্থানটিকে সংরক্ষণ করেন। একসময় মহাবারুণী তিথিতে গঙ্গাস্নানের অভিপ্রায়ে ভগবৎপরায়ণা শচীদেবী প্রভুর কাছে কাতর প্রার্থনা জানালে গঙ্গাদেবী সাক্ষাৎ শ্বেতগঙ্গায় আবির্ভূতা হন এবং শ্রীক্ষেত্রের অনেক পুণ্যকামী নরনারী সেদিন শ্বেতগঙ্গায় গঙ্গাস্নান করে কৃতার্থ হয়। সেই থেকে শচীদেবী ‘গঙ্গামাতা’ নামে এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত মঠটি গঙ্গামাতা মঠ নামে...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹120/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in
