শ্রীক্ষেত্রের পুরুষোত্তম জগন্নাথ। তিনি প্রাত্যহিক পূজামন্ত্র অনুসারে
শ্রীক্ষেত্রের পুরুষোত্তম জগন্নাথ। তিনি প্রাত্যহিক পূজামন্ত্র অনুসারে—‘প্রণবতনুধরং… নীল শিলাধিনাথঃ’। সুনীল আকাশ যেখানে নেমেছে নীলসমুদ্রের বুকে—করুণাবায়ের লীলালহরিতে তা আছড়ে পড়ে নীলসুন্দর অচলে। অচল অর্থাৎ পর্বত। সেখানেই, নাকি সেখান থেকেই কলিকলুষহারী দারুব্রহ্মের অবতারণা—নেমে আসা। ঋগ্বেদ-এর দশম মণ্ডলে সমুদ্রপৃষ্ঠে কাষ্ঠখণ্ডের পুরাবৃত্তে অথবা মালবরাজ ইন্দ্রদ্যুম্নের পৌরাণিক যুগে—আজকের ইতিহাস যে-কালে মূক, মাদলাপঞ্জি—মাদলাকৃতির তালপাতার পুঁথির লোককাহিনি সেথায় বাঙ্ময়। অনেকের ধারণা, সুন্দর-সবুজে ঘেরা শবর-পুলিন্দদের সেই গিরিগুহাবাসী ‘জগনাইলো’ বা ‘জগন্ত’ সর্বলোকৈকনাথ হয়ে শ্রীমন্দিরের গর্ভগৃহে রত্নসিংহাসনে আসীন। জনশ্রুতি যে, কালো মুগনি পাথরের ঐ রত্নবেদির নিচে একলক্ষ শালগ্রাম শিলা আর ওপরে শ্রীযন্ত্র অঙ্কন করে শ্রীবিগ্রহ স্থাপিত। সেখানে জগন্নাথ একা নন, বরং তিনি স্বজন-পরিবৃত। তাঁর ডানপাশে সুভদ্রা ও বলভদ্র ছাড়াও বসলেন ভূদেবী আর বামপাশে সুদর্শন, শ্রীদেবী এবং শ্রীদেবীর পিছনে জগন্নাথ-প্রতিরূপ নীলমাধব। সাত বিগ্রহ যদি কোনোদিন এই শঙ্খক্ষেত্রে আগত অনভিজ্ঞ পরদেশি তথা জগন্নাথ-অপরিচিতের নয়নপথগামী হন, তবে অজ্ঞাতসারে তিনি পুরুষোত্তমক্ষেত্রের এই পবিত্রতম স্থানে মধ্যমণি বা মধ্যাসীনারূপে দেখবেন কাঠের এক শ্রীমূর্তিকে—সুভদ্রাকে। যাজপুর, কোণারক, ভুবনেশ্বর ও পুরী—চার ক্ষেত্রে বিভক্ত উৎকলের এই জগন্নাথপুরীকে শঙ্খক্ষেত্র, নীলাচলক্ষেত্র, পুরুষোত্তমক্ষেত্র, জগন্নাথক্ষেত্র ইত্যাদি যে-নামেই অভিহিত করা হোক না কেন—কী ক্ষেত্রমাহাত্ম্যে কিংবা লক্ষ্মীশ্রীতে তা ছিল একইসাথে শ্রীক্ষেত্র; সংক্ষেপে শুধু ‘ক্ষেত্র’ নামেও অভিহিত হতো। নামানুসারী ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মধ্যে না গিয়েও দেখি, একদিন এখানকার ক্ষেত্রবাসীর মঠে ‘কথা’ দেওয়া হয়েছিল। পাণ্ডা এসে প্রাচীন পুঁথি অবলম্বনে জগন্নাথের ইতিহাস ও মাহাত্ম্য শুনিয়েছিল। সেটি ১৯০৪ সাল। তখন পুরী পর্যন্ত বেঙ্গল-নাগপুর রেললাইন প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে। তার বহু পূর্বে বঙ্গদেশের শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য নদীপথে বয়ে এসেছিলেন রাজা প্রতাপরুদ্রের সময়ে (১৫০৯ খ্রিস্টাব্দ) পুরুষোত্তম সাগরে। তবে শুধু উৎকল-বঙ্গের শ্রীচৈতন্যই নন, এই পুণ্যক্ষেত্রে একদিকে যেমন মাথরাস-বংশীয়, গঙ্গা-বংশীয়, শৈলোদ্ধব-বংশীয়, ভৌম-বংশীয়, সোম-বংশীয়, সূর্য-বংশীয়, চালুক্য-বংশীয়, ভোই-বংশীয়, মোগল, মারাঠা রাজশক্তি এসেছে ১৮০৩-এ ইংরেজদের ওড়িশা অধিকারের আগে—তেমনি বৌদ্ধধর্মাবলম্বী, জৈনধর্মের মহাবীর, শঙ্করাচার্যপন্থী, রামানুজাচার্য, মধ্বাচার্য, শিখধর্মগুরু নানক, বল্লভাচার্য, মীরাবাঈ, বৈষ্ণবকবি জয়দেব এসেছেন তাঁদের অনুগামী, সহচর, পার্ষদ-পরিকর সঙ্গে। ১৮১২-তে পুরী থেকে মেদিনীপুর পর্যন্ত তিনশো মাইলের এক নতুন রাস্তা—‘জগন্নাথ রোড’ তৈরির কাজ শুরু হয়।...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹100/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in
