পুরুষোত্তমধাম সর্বভারতীয় তীর্থ। তথাপি বাঙালি জাতির এটি একটি প্রধান তীর্থ। কারণ, মহাপ্রভু
পুরুষোত্তমধাম সর্বভারতীয় তীর্থ। তথাপি বাঙালি জাতির এটি একটি প্রধান তীর্থ। কারণ, মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য জীবনের শেষ কিছু বছর পুরুষোত্তমধামেই অবস্থান করেছিলেন। তাঁর আবির্ভাব নবদ্বীপে। গঙ্গার ভাঙনের জন্য তাঁর লীলা-স্থানের কোনো স্মৃতিই আজ প্রায় নেই। কিন্তু পুরীধামে তাঁর অগণিত স্মৃতিধন্য স্থান আজও রয়েছে। যে নির্জন ক্ষুদ্র কক্ষে তিনি অবস্থান করতেন, তার নাম ‘গৌরগম্ভীরা’। যে-সড়কপথে প্রতিদিন তিনি সমুদ্রস্নানে যেতেন, তার নাম ‘গৌরবাটসাহি’। যে-স্থানে তিনি ভক্তদের নিয়ে বসতেন, তার নাম ‘চৈতন্যচত্বর’। যাঁরা পুরীদর্শনে আসেন, তাঁরা শুধু জগন্নাথ-দর্শনই করেন না—শ্রীচৈতন্যের লীলাস্থল-সহ, হরিদাস ঠাকুরের ভজনস্থল ‘সিদ্ধবকুল’, সমাধিস্থানও দর্শন করেন। শ্রীচৈতন্যের পুরীযাত্রা শ্রীচৈতন্য কোনো এক শুক্লপক্ষে, মাঘ মাসের সংক্রান্তির দিন কাটোয়াতে কেশবভারতীর কাছে সন্ন্যাসগ্রহণ করে ‘শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য’ নাম ধারণ করেন। সন্ন্যাসগ্রহণের পর কৃষ্ণবিরহে অধীর হয়ে তিনি বৃন্দাবনের দিকে ধাবিত হন। কিন্তু নিত্যানন্দ গঙ্গাকে যমুনাভ্রম করিয়ে তাঁকে শান্তিপুরে অদ্বৈত আচার্যের গৃহে নিয়ে এলে নবদ্বীপে খবর ছড়িয়ে পড়ে—নিমাই সন্ন্যাসগ্রহণ করে শান্তিপুরে এসেছেন। পরের দিন সকালে চন্দ্রশেখর আচার্য পালকিতে করে শচীমাতাকে শান্তিপুরে নিয়ে আসেন। শ্রীচৈতন্যের আগমনে, নদিয়ার বহু ভক্তের সমাগমে এবং সকলের মুখে অবিরাম ‘হরিনাম’ ধ্বনিতে অদ্বৈত আচার্যের গৃহ বৈকুণ্ঠপুরীর মতো আনন্দময় হয়ে ওঠে। কয়েকদিন শান্তিপুরে থাকার পর শ্রীচৈতন্য নদিয়াবাসীকে বলেন যে, সন্ন্যাসগ্রহণ করে নিজের জন্মস্থানে আত্মীয়পরিজনদের সঙ্গে থাকা সন্ন্যাস আশ্রমের নীতিবিরোধী—“সন্ন্যাসীর ধর্ম নহে সন্ন্যাস করিয়া।/ নিজ জন্মস্থানে রহে কুটুম্ব লইয়া।।”১ অদ্বৈত আচার্যকে দিয়ে চৈতন্যদেব জননীর কাছে এই বার্তা পাঠালেন এবং তাঁর আদেশের প্রতীক্ষায় থাকলেন। জননী শচীদেবী বিষয়টি বিবেচনা করে পুত্রের সন্ন্যাসের আদর্শ যাতে লঙ্ঘিত না হয়, তাই নিমাইকে নীলাচলে থাকার আদেশ করলেন : “নীলাচলে নবদ্বীপে যেন দুই ঘর।/ লোক গতাগতি—বার্তা পাব নিরন্তর।।”২ নিত্যানন্দ, জগদানন্দ, দামোদর পণ্ডিত ও মুকুন্দ দত্ত—এই চারজনের সঙ্গে শ্রীচৈতন্য শান্তিপুর থেকে পুরুষোত্তমক্ষেত্র নীলাচলে যাত্রা করলেন। গঙ্গাতীরপথে চলতে চলতে ছত্রভোগ পেরিয়ে, রেমুনায় গোপীনাথ দর্শন করে, জাজপুর পেরিয়ে, কটকে সাক্ষিগোপাল দর্শন করে, ভুবনেশ্বর হয়ে তাঁরা কমলপুরে আসেন। এরপর শ্রীচৈতন্য প্রবল ব্যাকুলতায় একাকী দ্রুত পুরী-অভিমুখে যাত্রা করেন। জগন্নাথের সামনে শ্রীমন্দিরে জগন্নাথ-দর্শন...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹100/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in
