কিংবদন্তি অনুসারে এ অনেক কালের কথা। মালব্য দেশের অবন্তী নগরীর বিষ্ণু-উপাসক
“ওঁ নীলাচলনিবাসায় নিত্যায় পরমাত্মনে।বলভদ্রসুভদ্রাভ্যাং জগন্নাথায় তে নমঃ।।” কিংবদন্তি অনুসারে এ অনেক কালের কথা। মালব্য দেশের অবন্তী নগরীর বিষ্ণু-উপাসক রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন দৈববাণী শুনেছিলেন—স্বয়ং বিষ্ণু নীলমাধবরূপে এই মর্তধামেই কোথাও গুপ্তভাবে অবস্থান করছেন। তিনি রাজার পূজা পেতে আগ্রহী। বৃহত্তর জনসাধারণের স্বার্থে তাঁকে খুঁজে বের করে তাঁর সেবাপূজার প্রবর্তন করতে হবে। রাজার আদেশ পালন করতে নীলমাধবের সন্ধানে ব্রাহ্মণদের অভিযান শুরু হয়েছিল রাজ্যের চতুর্দিকে। কিন্তু লোকালয়ে, অরণ্যে, দেবালয়ে, ধনীর প্রাসাদে, শস্যক্ষেত্রে, পর্বতগুহায়, সমুদ্রসৈকতে—কোথাও নীলমাধবকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। একমাত্র রাজপুরোহিত বিদ্যাপতি ছাড়া বাকি সকল ব্রাহ্মণ ব্যর্থমনোরথ হয়ে মাথা নিচু করে ফিরে এসেছিলেন রাজপ্রাসাদে। কিন্তু বিদ্যাপতি পথভ্রষ্ট হওয়ায় ঘটনাক্রমে নীলগিরি পর্বতের অরণ্যে শবরপতি বিশ্বাবসুর কুটিরে এসে আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন। বিশ্বাবসুর একমাত্র কন্যা ললিতার সঙ্গে তাঁর শুভপরিণয় সম্পন্ন হলে নববধূ শবরপল্লিতেই সুখে কালযাপন করতে থাকেন। ক্রমে বিদ্যাপতি জানতে পারলেন, তাঁর অভীষ্ট নীলমাধব এই শবরবংশেরই বহুকাল ধরে পূজিত ইষ্টদেবতা এবং প্রতিদিন গভীর রাতে শবররাজ বিশ্বাবসু অরণ্যে লুক্কায়িত নীলমাধবের রহস্যপূজা করতে যান। নববধূ ললিতার মাধ্যমে বিদ্যাপতি নীলমাধবকে দর্শনের জন্য শবররাজের কাছে প্রার্থনা জানান। প্রস্তাব শুনে প্রথমে ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে উঠলেও কন্যার খাতিরে তাঁকে রাজি হতেই হলো, কিন্তু একটি শর্তে—মধ্যরাতে অরণ্যপথে নীলমাধবের কাছে যাওয়ার সময় বিদ্যাপতির দুই চোখ কালো কাপড়ে বাঁধা থাকবে, যাতে পথের নির্দেশ তাঁর বোধগম্য না হয়। শবররাজের পায়ের শব্দ শুনে তঁাকে পথ অনুমান করে চলতে হবে। বিদ্যাপতি শর্ত মেনে চোখবাঁধা অবস্থাতেই অরণ্যপথে শবররাজকে অনুসরণ করতে লাগলেন। অবশ্য তিনি স্ত্রীর সহায়তায় সকলের অলক্ষ্যে গোপনে একটি কাজ করেছিলেন। কোমরে বেঁধে নিয়েছিলেন ছিদ্রযুক্ত এক সরষের পুঁটলি—যাতে চলার পথে সরষের বীজ পড়তে পড়তে যায় এবং কিছুদিন পরে সরষে অঙ্কুরিত হয়ে পথনির্দেশিকা রচনা করতে পারে। যথাসময়ে বিদ্যাপতি চোখের বন্ধনমুক্ত হয়ে নীলকান্তমণির মতো উজ্জ্বল চতুর্বাহু বিষ্ণুমূর্তি নীলমাধবের দর্শন পেলেন। আরো দেখলেন— নীলমাধবের সামনের সু-উচ্চ এক বৃক্ষ থেকে এক ঘুমন্ত কাক নিকটের এক কুণ্ডের ওপর পতিত হয়ে সঙ্গে সঙ্গে সারূপ্যমুক্তি লাভ করে বৈকুণ্ঠলোকে গমন করল।...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹100/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in
