আমাদের কাহিনির শুরু গাড়োয়াল হিমালয়ের এক গহন উপত্যকায়। তখন শরতের শেষ, পাতাঝরার মরশুম আগতপ্রায়। ঝরে পড়ার আগে পাতারা শেষবারের মতো বাহারি রঙে সেজে উঠেছে।

চীরবাসার পথে আমাদের কাহিনির শুরু গাড়োয়াল হিমালয়ের এক গহন উপত্যকায়। তখন শরতের শেষ, পাতাঝরার মরশুম আগতপ্রায়। ঝরে পড়ার আগে পাতারা শেষবারের মতো বাহারি রঙে সেজে উঠেছে। দুদিকের পাহাড়ের গায়ে যেন লাল-হলুদ-বাদামির মেলা। রঙিন সেই উপত্যকার গভীর খাদ বেয়ে বয়ে চলেছে গৈরিকবসনা, উদাসিনী এক নদী—ভাগীরথী। নদীর উত্তরতট বেয়ে উজানে চলেছে এক শীর্ণকায় পথরেখা। পথের গন্তব্য ভাগীরথীর উৎসমুখ—গোমুখ। আমাদের গন্তব্য আরো দূরে; গোমুখ ছাড়িয়ে, গঙ্গোত্রী হিমবাহ পেরিয়ে, শিবলিঙ্গ পর্বতের পাদদেশে আছে এক নিভৃত উপত্যকা—‘তপোবন’। আমরা চলেছি সেই তপোবনের উদ্দেশে। পিছনে পড়ে রয়েছে গঙ্গোত্রী জনপদ। ঐ দূরে দেখা যায় মা গঙ্গার শ্বেতশুভ্র মন্দির। যাত্রিদল ধ্বনি তোলে—‘গঙ্গা মাঈয়া কী জয়’! গঙ্গোত্রী থেকে দুই কিলোমিটার এগিয়ে অমৃতঘাট-গঙ্গোত্রী ন্যাশনাল পার্কের প্রবেশদ্বার। এখানে এসে বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ ফুরোয়। কারণ, এরপর সারাটা পথে আর মোবাইল নেটওয়ার্ক মিলবে না। বনদপ্তরের অফিসে পারমিট দেখিয়ে পা বাড়ালাম অন্দর-হিমালয়ের পথে। প্রথম লক্ষ্য চীরবাসা। দূরত্ব আট কিলোমিটার। রাস্তা এগিয়ে চলেছে প্রথমে পুবে, পরে খানিক দক্ষিণে বাঁক নিয়েছে। বাঁদিকে খাড়া পাথরের দেওয়াল, ডানদিকে খাদের মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে ভাগীরথী। আর সামনে থেকে দিশা দেখাচ্ছে হিমালয়ের সব তুষারশৃঙ্গ—সুদর্শন, থেলু, চতুর্ভুজ।ঘণ্টা দেড়েক চলার পর একজায়গায় বাঁদিকের পাহাড়ের গা থেকে একটি জলধারা নেমে এসে মিশে গিয়েছে ভাগীরথীর গর্ভে। জলধারার ওপর অস্থায়ী সেতু। দুখানা পাথরের ওপরে লম্বালম্বিভাবে শোয়ানো খান পাঁচ-ছয় ভুজগাছের গুঁড়ি। পা রাখলে সেতু মচমচ করে ওঠে। এজায়গার নাম ‘দেওঘাট’—অবস্থান গঙ্গোত্রী আর চীরবাসার ঠিক মাঝামাঝি। দেওঘাটের পর পথ কিছুটা অন্যরকম। ভাগীরথী যেন অনেকটা কাছে সরে এসেছে। পথ যেন আরো সংকীর্ণ হয়ে খাড়া পাহাড়ের গায়ে উঠে পড়েছে। মাঝে-মধ্যে দু-চারজন যাত্রীর সঙ্গে দেখা হয়। ক্বচিৎ দু-একটা মালবাহী খচ্চর। তাদের গলায় বাঁধা ঘণ্টির টুংটাং শব্দ পাহাড়ের গায়ে প্রতিধ্বনিত হয়ে মিলিয়ে যায় ধীরে ধীরে। তারপর আবার শুনশান। শুধু ভাগীরথীর একটানা ঝমঝম গর্জন। চলতে চলতে হঠাৎই এক পথের বাঁক থেকে দেখা যায়, বহু দূরে উঁকি দিচ্ছে ভাগীরথী পর্বতের তুষারশুভ্র তিনটি চূড়া।...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in