আবহমান বাঙালি-মনের যে-রাগ কার্তিকের কুয়াশায় ফিকে হয়ে গিয়ে অঘ্রানের ধানে আবার সোনালি রঙে ফুটে ওঠে, তার নাম হেমন্ত। হেমন্তে গতি পায় বাংলার দৈনন্দিন স্বপ্নার্দ্র জীবন। মেদুর শিশিরকণার মন্দাক্রান্তা ছন্দে কার্তিকের সকাল আলসে চোখে চেয়ে থাকে।

আবহমান বাঙালি-মনের যে-রাগ কার্তিকের কুয়াশায় ফিকে হয়ে গিয়ে অঘ্রানের ধানে আবার সোনালি রঙে ফুটে ওঠে, তার নাম হেমন্ত। হেমন্তে গতি পায় বাংলার দৈনন্দিন স্বপ্নার্দ্র জীবন। মেদুর শিশিরকণার মন্দাক্রান্তা ছন্দে কার্তিকের সকাল আলসে চোখে চেয়ে থাকে। আবার পড়ন্ত বিকেলের উন্মনা বুক যখন আলাপী দিগন্তের নীলচে প্রেম থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নেয়, তখন কুয়াশার চাদরে স্মৃতির তোলা-পাড়া আলপনা বুনে চলে একমনে। সন্ধ্যাদীপের এক টুকরো আলোয় অচেনা পূর্বপুরুষদের মুখশ্রী—সব গৃহবধূর দৃষ্টিপথে আবছা রঙে আশিস রেখে যায়। কার্তিক তাই স্মৃতিবিধুর রোমন্থনের মাস এবং শুভ-প্রতীক্ষার অবকাশ। গৃহস্থের শূন্যপ্রায় মরাইকে ভরিয়ে দিতে এরপর অগ্রহায়ণ আসে। দিগন্তব্যাপী ধান্যের স্বর্ণবিস্তার কৃষিপুষ্ট বঙ্গচেতনার অঙ্গলগ্ন হয়ে শ্রী বিতরণ করে চলে। জৈবিক পূর্ণতায় উদ্ভাসিত জনজীবন নবপ্রাণে স্পন্দিত হয়। উজ্জ্বল রবিকর কুল-ললনাদের নিকানো উঠানে গড়াগড়ি দিয়ে শিশু হয়ে নিতে চায়। হেমন্তের স্বর্ণগোধূলি জগতের সকল গুপ্তধনকে ফ্যাকাসে করে দিয়ে যে জাফরানি হাতছানিতে কাছে ডেকে নিতে থাকে, সে অপূর্ব বিভঙ্গের প্রতিরূপ নেই। শোভা ও সৌন্দর্যের মূর্তি ধরে হেমন্তলক্ষ্মী নবান্ন-গ্রহণ করে যান ঘরে ঘরে; রেখে যান তাঁর পেলব চরণ-যুগলের স্নিগ্ধ পরশ। শরীর না থাকলে যেমন প্রাণকে ধরা যায় না, তেমনই কার্তিকের শিশিরে সুরায়িত এক কবিকে না পেলে বাঙালির হেমন্ত-যাপন হয় না। ধানসিঁড়ির বুকে কুয়াশার অক্ষরে লেখা তাঁর ‘জীবনানন্দ’ নাম বাংলা কবিতায় হেমন্ত গেয়ে চলেছে অবিরাম। বাংলা-মায়ের স্নেহহস্ত-পরিবেশিত একমুঠো নবান্নের স্বাদ নিতে আজও যেন তিনি শঙ্খচিলের স্বাধীনতা নিয়ে পেঁচার ডানার ধূসরতা মেখে রাত-জাগা মাঠে নেমে এসে মেঠো ইঁদুরদের বন্ধু পাতান। তাঁর যেসব কবিতায় হেমন্ত বারে বারে অনুষঙ্গ ফুটিয়ে তুলেছে, সেসবের মধ্যে ‘অবসরের গান’ অন্যতম। কার্তিকের কোমল রোদ্দুরে নাচতে নাচতে আহ্লাদে অবসন্ন হয়ে এসেছে কবির শরীর। হেমন্তপ্রকৃতিকে তিনি দেখছেন এক শস্যগর্ভা রূপসীর মতো। নিসর্গের অন্যান্য আয়োজন সব তাঁর নৃত্যসঙ্গী। জাগতিক সমৃদ্ধি ভুলে আলস্যের উদ্‌যাপনে তিনি নিজেকে মিশিয়ে দিতে চাইছেন কার্তিকের কণায় কণায়। কিন্তু শীত এলেই নিয়ে যাবে অঘ্রানের সবটুকু আঘ্রান। ধানকাটা মাঠের রিক্ততায় ভরে থাকবে ‘চোখের সকল...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in