১৮৮৭ সালের ৮ মে বরাহনগর মঠে নরেন্দ্র ও প্রসন্নের মধ্যে আলাপ চলিতেছে। দয়া প্রসঙ্গে কথা উঠিল। নরেন্দ্র বলিলেন : “তিনি (ঠাকুর) তো বলতেন ‘বিশ্বাসই সার’। তিনি তো কাছেই রয়েছেন! বিশ্বাস করলেই হয়!” এই বলিয়া নরেন্দ্র গান ধরিলেন—“মোকো কাঁহা ঢুঁঢ়ো বন্দে ম্যয়তো তেরে পাশ মো” অর্থাৎ হে বান্দা (সাধক), তুমি আমাকে কোথায় অনুসন্ধান করিতেছ? আমি তো তোমার সঙ্গেই রহিয়াছি। সাধক কবীরের গাওয়া এই সংগীত।

১৮৮৭ সালের ৮ মে বরাহনগর মঠে নরেন্দ্র ও প্রসন্নের মধ্যে আলাপ চলিতেছে। দয়া প্রসঙ্গে কথা উঠিল। নরেন্দ্র বলিলেন : “তিনি (ঠাকুর) তো বলতেন ‘বিশ্বাসই সার’। তিনি তো কাছেই রয়েছেন! বিশ্বাস করলেই হয়!” এই বলিয়া নরেন্দ্র গান ধরিলেন—“মোকো কাঁহা ঢুঁঢ়ো বন্দে ম্যয়তো তেরে পাশ মো” অর্থাৎ হে বান্দা (সাধক), তুমি আমাকে কোথায় অনুসন্ধান করিতেছ? আমি তো তোমার সঙ্গেই রহিয়াছি। সাধক কবীরের গাওয়া এই সংগীত। আমাদের যাহা অতি আকাঙ্ক্ষিত বস্তু তাহা আমাদের সবচাহিতে নিকটেই রহিয়াছে। রহিয়াছে আমাদের অন্তরে। কবীরের গাওয়া এই সংগীতে আরো রহিয়াছে—যে-সাধকের হৃদয়ে ভগবদ্বিশ্বাস দৃঢ় হইয়াছে, সেখানেই তিনি নিয়ত বাস করেন। হৃদয়ই তাঁহার কুঠি। বাহিরের সংসারের সমস্ত কিছুর অন্তরালে একটি স্থান রহিয়াছে মানুষের হৃদয়ে—যেখানে অন্তরের দেবতা বাস করিয়া থাকেন। তাঁহাতে বিশ্বাস রাখিয়া ডুব দিতে পারিলেই হইল। এই সহজ সত্যকেই কবীর সরল কথায় বলিয়া গিয়াছেন। কবীরের মন্ত্রপ্রাপ্তি ও সাধনও এই বিশ্বাসের উপর নির্ভর করিয়া হইয়াছে। বারাণসীতে এক মুসলিম তাঁতির ঘরে তাঁহার জন্ম। ছেলেবেলা হইতেই তাঁহার অন্তরে বৈরাগ্য, সংস্কারমুক্ত উদারতা এবং সাধনভজনে দিনাতিপাত করিবার ইচ্ছা। বহু সাধুসন্তের বাস বারাণসীতে। এইসব সাধুসন্তের সংস্পর্শে আসিয়া সাধনভজনের আগ্রহ তাঁহার তীব্র হইল। স্থির করিলেন, ইঁহাদের কাহারো নিকট হইতে মন্ত্র গ্রহণ করিবেন। ভাল লাগিল রাম-মন্ত্রের উপাসক আচার্য রামানন্দকে, কিন্তু সন্দেহ হইল—আচার্য তাঁহাকে দীক্ষা দিতে সম্মত নাও হইতে পারেন। তিনি এক অদ্ভুত উপায় অবলম্বন করিলেন। কথিত আছে, রাত্রি একপ্রহর বাকি থাকিতে আচার্য মণিকর্ণিকার ঘাটে স্নান করিতে আসেন। এক রাত্রিতে কবীর ঘাটে যাইয়া সিঁড়িতে শুইয়া থাকিলেন। অন্ধকারাচ্ছন্ন রাত্রি। কিছুই স্পষ্ট দেখা যাইতেছে না। রামানন্দ স্নান করিতে আসিয়াছেন। তাঁহার পায়ের কাষ্ঠ পাদুকা আঘাত করিল কবীরের মস্তকে। আচার্য মৃতদেহ স্পর্শ করিয়াছেন ভাবিয়া বলিয়া উঠিলেন : “রাম কহো, রাম কহো।” কবীর গুরুমুখে এই মহামন্ত্র শুনিয়া ‘রাম’ ‘রাম’ বলিয়া আনন্দে চিৎকার করিয়া উঠিলেন। কাশীর রাজপথ দিয়া ‘রাম’ ‘রাম’ বলিতে বলিতে ছুটিতে লাগিলেন। বিশ্বাস ও শরণাগতিকে আশ্রয় করিয়া শুরু হইল তাঁহার সাধনা। দীর্ঘ সাধনার পর তাঁহার...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in