জনৈক যুবক-ভক্ত কলকাতার কোনো কলেজে পড়িবার কালে অসুস্থ হওয়ায় দীর্ঘকাল তাহার পড়াশোনা বন্ধ থাকে। মাস্টারমশাইয়ের (শ্রীম) নির্দেশে

জনৈক যুবক-ভক্ত কলকাতার কোনো কলেজে পড়িবার কালে অসুস্থ হওয়ায় দীর্ঘকাল তাহার পড়াশোনা বন্ধ থাকে। মাস্টারমশাইয়ের (শ্রীম) নির্দেশে অসুস্থ দেহের নিরাময় ও শান্তির জন্য সে প্রতিদিন গঙ্গাস্নানান্তে চণ্ডীপাঠ করিত। একদিন বাগবাজারে গঙ্গার ঘাটে চণ্ডীপাঠকালে তাহার দৃষ্টিতে আসিল—শ্রীশ্রীমা ঘাটের একেবারে নিচের সোপানে তন্ময় হইয়া বসিয়া রহিয়াছেন। যুবকটি মায়ের অনেকখানি উপরের দিকের সিঁড়িতে দাঁড়াইয়া মৃদুস্বরে আপনমনে শ্রীশ্রীচণ্ডী হইতে পাঠ করিতেছিল। পাঠ করিতে করিতে যখন বলিল : “সৌম্যাসৌম্যতরা-শেষসৌম্যেভ্যস্ত্বতিসুন্দরী।/ পরা পরাণাং পরমা ত্বমেব পরমেশ্বরী।।”—ধ্যানরতা মা সহসা পিছন ফিরিয়া যুবকের দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া তাহাকে দুহাত তুলিয়া আশীর্বাদ করিলেন। তাঁহার এই চাহনিতে বরাভয় ও অপার করুণার পাশাপাশি রহিয়াছে এক মৌন সম্মতি—তিনি ‘অশেষসৌম্যেভ্যঃ তু অতিসুন্দরী’। ত্রিসংসারে যত প্রকার রূপের কথা জানা যায়, মায়ের রূপ সেই সকলকে ছাড়াইয়া যায়। তিনি ‘সৌম্যা’। তিনি ‘অতিসুন্দরী’। তাঁহার এই রূপ আমাদের মনকে প্রশান্ত আনন্দে ভরপুর করিয়া তোলে। শ্রীশ্রীমা সৌন্দর্যের আকর। সৌন্দর্য কী? যাহা আমাদের মনকে আকর্ষণ করে, মনোহর। ভারতীয় দর্শন ও সাহিত্যে সৌন্দর্য লইয়া বিবিধ ভাবনার পাশাপাশি স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখের সৌন্দর্য-চিন্তা আমাদের ঋদ্ধ করে। পাশ্চাত্য ভাবধারায় সৌন্দর্যসৃষ্টির মূলে রহিয়াছে বাহ্য প্রকাশ। প্রখ্যাত ইতালীয় দার্শনিক ক্রোচে ইহার উপর জোর দিয়াছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই প্রকাশকে সৌন্দর্যসৃষ্টির প্রথম শর্ত বলিয়া মানিলেও তাহাকে একমাত্র বলিয়া স্বীকার করেন নাই। তাঁহার মতে—কী প্রকাশ হইল, কতখানি প্রকাশ হইল এবং প্রকাশের পশ্চাতে কী ভাব রহিয়াছে তাহা অধিক গুরুত্বপূর্ণ; মানব-স্বভাবের মহনীয় দিক ও হৃদয়বৃত্তিগুলি যেন সৌন্দর্যসৃষ্টির মূলে থাকে। স্বামী বিবেকানন্দ বলিয়াছেন : “মানুষের মুখে, আকাশে, তারায় অথবা চন্দ্রে যে সৌন্দর্যের বিকাশ দেখা যায়, তাহা কোথা হইতে আসিল? উহা সেই ভগবানের সর্বব্যাপী সৌন্দর্যের আংশিক প্রকাশ মাত্র।” আমাদের শাস্ত্রমতে বস্তুস্বরূপ নির্ণয়ের দুই পথ—ইতি ইতি ও নেতি নেতি। অর্থাৎ একদিকে সুন্দর কী তাহার আলোচনা এবং সৌন্দর্যনিলয়া শ্রীশ্রীমায়ের জীবনে তাহা কীভাবে ফুটিয়া উঠিয়াছে দেখা। অপরদিকে অসুন্দরের বিপরীত রূপে সুন্দর কীভাবে প্রকাশমান, তাহাও মায়ের জীবনের আলোকে বিবেচনা করা যায়। আমরা দেখিতে চেষ্টা করিব...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in