স্বামীজীর কাছে নিজের স্বরূপ প্রকাশ করেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ। একবার তাঁকে বলেন : “নদের গৌরের কথা

[পূর্বানুবৃত্তি : জ্যৈষ্ঠ সংখ্যার পর]।।৩।। স্বামীজীর কাছে নিজের স্বরূপ প্রকাশ করেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ। একবার তাঁকে বলেন : “নদের গৌরের কথা শুনিস্‌ নি? সেই গৌর আমি।”৫৭ পরে নরেন্দ্রনাথ যখন অনুভব করেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণের দিব্য সত্তা, তখন ‘নব-গৌরাঙ্গ’রূপে তাঁকে মেনে নেন। তাঁর জীবনে ঠাকুরের কৃপায় যে-সমস্ত আধ্যাত্মিক অনুভূতি হয়েছে, সেসব কথা স্বামী সারদানন্দজীকে বলতে বলতে তিনি হঠাৎ মগ্ন হয়ে গান ধরেছিলেন—‘প্রেমধন বিলায় গোরা রায়!’ তারপর স্বগতোক্তি করে বলেন : “সত্য সত্যই বিলাইতেছেন!… কি অদ্ভুত শক্তি!… সব করিতে পারেন—দক্ষিণেশ্বরের গোরা রায় সব করিতে পারেন!”৫৮ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর প্রসঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দ উচ্ছ্বসিত হতেন। বরানগর মঠে শ্রীচৈতন্যদেবের জীবনী পড়া হতো। একদিন কোনো গুরুভাই সুর করে একটু অন্যভাবে শ্রীশ্রীচৈতন্যচরিতামৃত পড়ছিলেন। নরেন্দ্রনাথ বিরক্ত হয়ে বই কেড়ে নিয়ে বলেন : “এইরকম করে ভাল জিনিসটা মাটি করে?” তারপর নিজেই চৈতন্যদেবের প্রেমবিতরণের কথা পড়েন। সেই গুরুভাই শুনে বলেন : “আমি বলি কেউ কারুকে প্রেম দিতে পারে না।” শুনে নরেন্দ্রনাথ জোর দিয়ে বললেন : “আমায় পরমহংস মহাশয় প্রেম দিয়েছেন।”৫৯ স্বামী অভেদানন্দজীও শ্রীচৈতন্য ও শ্রীরামকৃষ্ণকে অভেদজ্ঞান করে গৌরাঙ্গরূপী শ্রীরামকৃষ্ণকে প্রণাম জানিয়েছেন তাঁর স্তবে : “কলিমলহরনাম্নঃ কীর্তনং ঘোষয়ন্তং/ করধৃত-জলপাত্রং দণ্ডিনং হেমবর্ণম্‌।/ ভবজলনিধিপোতং কৃষ্ণচৈতন্যরূপং/ বিমল পরমহংসং রামকৃষ্ণং ভজামঃ।।”৬০ পাঁচশ্রীচৈতন্যের উত্তরসূরি শ্রীরামকৃষ্ণ শ্রীরামকৃষ্ণের মধ্যে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর ভাব প্রবল ছিল, যার ফলে কেউ কেউ তাঁকে চৈতন্যদেবের উত্তরসূরি বলে মনে করেছেন। বস্তুত, শ্রীচৈতন্য ও শ্রীরামকৃষ্ণের জীবন ও উপদেশে সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন—শক্তির উপাসনা, অসাম্প্রদায়িক ভাব, ঈশ্বরের ভাবাবেশ ইত্যাদি। শ্রীচৈতন্য-প্রবর্তিত শিক্ষাই শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তদের কাছে ‘যুগধর্ম’ বলে উল্লেখ করেছেন। কখনো যুবক ভক্তদের বলেছেন : “তোরা ত্রৈলোক্যের সেই বইখানা পড়িস—ভক্তিচৈতন্যচন্দ্রিকা।… বেশ চৈতন্যদেবের কথা আছে।”৬১ কখনো ভক্তদের শ্রীচৈতন্য-পথানুযায়ী উপদেশ দিয়েছেন : “স্মরণ মনন সেবা নাম-সংকীর্তন।/ ঈশ্বরের পথে এই কালের নিয়ম।।/ সন্ধ্যার সময় প্রভু করতালি দিয়া।/ হরি হরি বলিতেন নাচিয়া নাচিয়া।।”৬২ আবার কখনো ভক্তদের উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছেন হরিনাম করতে। তাঁকে মাঝখানে রেখে ভক্তেরা ‘হরি-হরি’ বলে নৃত্য করতেন। পুঁথিকার অ‌ক্ষয়কুমার সেন লিখেছেন : “সংসারী গৃহস্থ ভক্তে আদেশ কথন।/ চৈতন্যচরিতামৃত করিতে পঠন।।/ নিত্য নিত্য সংকীর্তন...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in