রামকৃষ্ণ মঠ, ম্যাঙ্গালুরু : গত ৩-৪ জুন ২০২২ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্ল্যাটিনাম জয়ন্তী উৎসব পালিত হয়। নবনির্মিত প্রধান প্রবেশদ্বার ও সাধুনিবাসের দ্বারোদ্ঘাটন করেন রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের সহাধ্যক্ষ পূজনীয় শ্রীমৎ স্বামী গৌতমানন্দজী মহারাজ। এই উপলক্ষে একটি ভিডিও তথ্যচিত্র, একটি প্রথম দিবসীয় ডাকবিভাগের স্মারক পোস্টাল কভার ও একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়। সর্বসমেত ৭৫জন সন্ন্যাসী ও ব্রহ্মচারী এবং ১৫০০ ভক্তের উপস্থিতিতে আয়োজিত হয় একটি ভক্তসম্মেলন ও বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
রামকৃষ্ণ মিশন সেবাশ্রম, বৃন্দাবন : গত ৬ জুন ২০২২ Catheterization Laboratory-র উদ্বোধন করেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মাননীয় যোগী আদিত্যনাথ। বহু বিশিষ্ট অতিথি, সাধু ও ব্রহ্মচারী এবং ভক্ত ছাড়াও ৮০০ ডাক্তার ও নার্স এদিন উপস্থিত ছিলেন।
রামকৃষ্ণ মিশন স্টুডেন্টস হোম, চেন্নাই : গত ২৬ জুন ২০২২ ছাত্রাবাসের প্রধান ভবন ‘Palace for the Poor’ এবং আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবার্ষিক অনুষ্ঠান উদ্যাপিত হয়। উপস্থিত ছিলেন তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল মাননীয় অার. এন. রবি, পূজনীয় শ্রীমৎ স্বামী গৌতমানন্দজী মহারাজ এবং অনেক বিশিষ্ট অতিথি। ১৯১৭ সালে শ্রীমৎ স্বামী ব্রহ্মানন্দজী এই প্রধান ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। সেই ঘটনা স্মরণ করে তাঁর উদ্দেশে উৎসর্গীকৃত একটি স্মারকের আবরণ উন্মোচন করা হয়।
রামকৃষ্ণ মঠ, বেলুড় মঠ : গত ২১ জুন ২০২২ আন্তর্জাতিক যোগদিবস উপলক্ষে বেলুড় মঠ ও RKMVERI (ডিম্ড বিশ্ববিদ্যালয়)-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ প্রদর্শন করেন ভারত সরকারের শিক্ষা মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ সুভাষ সরকার, বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগের প্রবীণ আধিকারিক-সহ দশটি প্রতিষ্ঠানের ৫০০ প্রতিনিধি।
রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম, মোরাবাদি, রাঁচি : গত ২১ জুন ২০২২ ঝাড়খণ্ড রাজ্যের খুন্তিতে আশ্রমের পরিচালনায় আয়োজিত এক যোগানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন আদিবাসী উন্নয়ন মন্ত্রকের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাননীয় অর্জুন মুণ্ডা ও ৮৫০০ প্রতিনিধি। এছাড়াও যোগ বিষয়ক কুইজ ও সূর্যপ্রণাম প্রতিযোগিতায় যোগদান করে ৪০০০ প্রতিযোগী।
রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের চেন্নাই বিদ্যাপীঠ, গুড়াপ, মাদুরাই, নাওরা, নারায়ণপুর ও তাঞ্জাভুর কেন্দ্র আন্তর্জাতিক যোগদিবস পালন করেছে।
রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম, আসানসোল : গত ২৫ জুন ২০২২ এক অনুষ্ঠানে পশ্চিম বর্ধমান জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১০০ জন ছাত্রছাত্রীর প্রত্যেককে মেধাবৃত্তি হিসাবে ৩০০০ টাকা আর্থিক অনুদান, একটি স্কুলব্যাগ, চারটি খাতা ও একটি শংসাপত্র প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সহকারি সাধারণ সম্পাদক স্বামী সত্যেশানন্দ, তাপস ব্যানার্জি, ভাস্কর কুমার প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও শিক্ষকবৃন্দ।
সেবাব্রত
বন্যাত্রাণ : গত মে ২০২২ অসমে ধারাবাহিক প্রবল বর্ষণে বহু মানুষের বিপুল ক্ষতি হয়। ঐসব এলাকায় ২টি কেন্দ্রের ত্রাণকার্য নিম্নরূপ :
করিমগঞ্জ কেন্দ্র গত ২০—২৩ মে করিমগঞ্জ জেলার ৫৪২টি পরিবারের মধ্যে ২২০০ থালা খাবার, ৫৪০ কেজি ডাল, ২৮০ কেজি সোয়াচাঙ্ক, ১২৯৮ কেজি আলু, ৫৪৪ কেজি পিঁয়াজ, ২৭০ লিটার ভোজ্যতেল, ৫৫০ কেজি লবণ, ১১২ কেজি গুঁড়ো দুধ ও ১০৬০ প্যাকেট বিস্কুট বিতরণ করেছে।
শিলচর কেন্দ্র গত ২৩ মে কাছাড় জেলার ৬৭৫টি পরিবারের মধ্যে ১৩৫০ কেজি আটা, ৬৭৫ কেজি ডাল, ৩৩৭৫ কেজি আলু, ১৬৯ কেজি সোয়াচাঙ্ক, ৬৮ কেজি গুঁড়ো হলুদ, ৩৩৮ কেজি লবণ, ৩৩৮ লিটার ভোজ্যতেল ও ৬৭৫টি বারসাবান বিতরণ করেছে। এছাড়া বিভিন্ন শিবিরে আশ্রয়প্রাপ্ত ১১২১ জন মানুষের চিকিৎসা করেছে।
দুঃস্থত্রাণ : গত মার্চ—মে ২০২২ আমেদাবাদ কেন্দ্র ১২৫ প্যাকেট খাবার, ৩৭৫ কেজি আটা, ২৫০ কেজি ডাল, ১২৫ লিটার ভোজ্যতেল, ১২৫ কেজি করে লবণ, চিনি ও গুড়, ৭৫ কেজি বিভিন্ন মশলা, ১৩ কেজি গুঁড়ো চা ও ১২৫টি তোয়ালে; আলমোড়া কেন্দ্র ২২৫ কেজি ডাল, ১৫ কেজি করে সোয়াচাঙ্ক, লবণ ও চিনি, ৩০ লিটার ভোজ্যতেল, ১৫ সেট বাসন, ১৫টি করে প্যান্ট, জামা, শাড়ি ও কম্বল, ১১ কেজি বিভিন্ন মশলা; বাঁকুড়া কেন্দ্র ১২৫ কেজি চাল, ৬০ কেজি ডাল, ২৫ কেজি করে সোয়াচাঙ্ক ও লবণ, ১০০ কেজি আলু, ২৫ লিটার ভোজ্যতেল, ৩ কেজি গুঁড়ো হলুদ, ১৬ প্যাকেট বিস্কুট, ২৫টি তোয়ালে ও ২২টি ত্রিপল; দার্জিলিং কেন্দ্র ৮৪০ কেজি চাল, ৬০ কেজি সেমোলিনা, ২৪০ কেজি ডাল, ১২০ কেজি করে সোয়াচাঙ্ক, লবণ ও চিনি, ১২০ লিটার ভোজ্যতেল, ৩০ কেজি বিভিন্ন মশলা, ৬ কেজি তেঁতুল, ৪৮ কেজি আচার, ৯২৮ শিশি মধু, ৪৮ শিশি হার্বাল মিক্সচার, ৬৫২ কেজি গ্লুকোজ, ১৩১৯ লিটার পানীয় জল, ১৫ টিউব টুথপেস্ট, ৪০৮ শিশি মাথার তেল, ১২০টি করে কাপড় কাচা, বাসন ধোয়া ও স্নানের সাবান; দেওঘর কেন্দ্র ৫০০ কেজি চাল, ১০০ কেজি করে ডাল ও লবণ, ২০০ কেজি আলু, ১০০ লিটার ভোজ্যতেল, ১০০ সেট বাসন, ১০০ শিশি মাথার তেল, ৩০টি ধুতি ও ৭০টি শাড়ি; হাটমুনিগুড়া কেন্দ্র ৩০টি লুঙ্গি, ২৭টি শাড়ি, ৩৩টি গেঞ্জি, ২১টি ট্রাউজার, ৯টি জামা, ১৪টি মহিলা-পোশাক, ৩০টি করে বিছানার চাদর ও তোয়ালে এবং ৩০ শিশি মধু; জয়রামবাটী কেন্দ্র ২০০ কেজি ডাল, ১০০ লিটার ভোজ্যতেল, ৩০ কেজি বিভিন্ন মশলা, ১০০ শিশর মাথার তেল, ১০০টি করে স্নান ও কাপড় কাচার সাবান, ১০০ কেজি গুঁড়ো সাবান, ১০০টি করে শাড়ি, তোয়ালে ও মাস্ক; শিকড়া-কুলিনগ্রাম কেন্দ্র ৩৪০ কেজি হরলিক্স, ১৭ কেজি ছাতু, ৫২৬ প্যাকেট বিস্কুট, ২৬৩ কেজি গুঁড়ো দুধ, ১৮৩৪টি খাতা, ৫০টি জ্যামিতি বাক্স, ১৫৩টি ডিক্সনারি, ৫৪৯টি করে স্কেল ও পেন, ৪৩৪ লিটার ফিনাইল ও ৪৩৪ কেজি ব্লিচিং পাউডার; বৃন্দাবন কেন্দ্র ৪৩০ কেজি করে চাল ও আটা, ১০৮ কেজি করে ডাল, চিনি ও লবণ, ১০৮ লিটার ভোজ্যতেল, ২২ কেজি চা, ৪৩ কেজি গুঁড়ো দুধ, ২১৫টি করে কলা ও স্নানের সাবান দুঃস্থ মানুষের মধ্যে বিতরণ করেছে।
ছাত্রকৃতিত্ব
২০২২ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় রামকৃষ্ণ মিশনের বিদ্যালয়গুলির ফলাফল নিম্নরূপ :
বিদ্যালয় | শ্রেণি | পরীক্ষার্থী | ১ম বিভাগ | স্টার মার্কস |
ভোপাল (মধ্যপ্রদেশ বোর্ড) | ১০ম ১২শ | ১০১ ৮২ | ৭৬ ৬৯ | ৩৮ ১৯ |
গোয়ালিয়র (মধ্যপ্রদেশ বোর্ড) | ১০ম ১২শ | ১৪ ৩৬ | ৬ ২২ | ৩ ২১ |
ইন্দোর (মধ্যপ্রদেশ বোর্ড) | ১০ম ১২শ | ১১০ ১০১ | ৮৮ ৯০ | ৩১ ৪০ |
মাইসুরু বিদ্যাশালা (কর্নাটক বোর্ড) | ১০ম | ১০৬ | ১০৬ | ১০৬ |
নারায়ণপুর (ছত্তিশগড় বোর্ড) | ১০ম ১২শ | ১৯৭ ১৪৮ | ১২০ ১১৩ | ৫০ ২৬ |
রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের নিম্নলিখিত কেন্দ্রগুলি আবৃত্তি, ভজন, যোগাসন, মূল্যবোধ শিক্ষা প্রভৃতির মাধ্যমে গ্রীষ্মকালীন শিবিরের আয়োজন করে :
কেন্দ্র | শিবিরের সময় | অংশগ্রহণকারী |
বাসবনগুড়ি, বেঙ্গালুরু | ১৭ এপ্রিল—১ মে | ১২০ |
মদিহল্লি | ২৪ এপ্রিল—১ মে | ১৩০ |
রাজকোট | ১৫—২২ মে | ১৫৫ |
রামনাথপুরম | ৩—১৩ মে | ৭০ |
থাঞ্জাভুর | ২২—২৮ মে | ৭০ |
ভদোদরা | ৫—১৫ মে | ১২৫ |
বিশাখাপত্তনম | ২—১৬ মে | ১২০ |
বহির্ভারত
বন্যাত্রাণ : গত এপ্রিল ২০২২ ক্বাজুলু-নাটাল প্রদেশে প্রবল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার দুটি কেন্দ্রের ত্রাণকার্য নিম্নরূপ : ডারবান কেন্দ্র ১৪০ জন মানুষের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ করেছে। এছাড়াও চ্যাটসওয়ার্থ ও লেডিস্মিথের ২০০ পরিবারের মধ্যে ৭০০ কেজি চাল, ৫৯০ কেজি ভুট্টা, ২৫০ কেজি আটা, ৭০ কেজি ডাল, ৪০ কেজি সবজি, ৫০ কেজি করে পাস্তা ও পেরিজ, ১৩৮ লিটার ভোজ্যতেল, ১০০ কেজি লবণ, ২৯০ কেজি চিনি, ৩৯০ ক্যান বিন, ৫ শিশি মাখন, ৬ লিটার দুধ, ১৫০০০ টি-ব্যাগ, ৪০টি করে পাউরুটি, বারসাবান ও প্যাড, ২০০ লিটার পানীয় জল, ১০০ কাগজের থালা, ৩ কেজি গুঁড়ো সাবান, ২০০ লিটার জীবাণুনাশক, ১০০টি ব্যাগ ও ৩০০ মোমবাতি; ফিনিক্স কেন্দ্র ৩২০টি পরিবারের মধ্যে ২৬০০ কেজি চাল, ৫২০ কেজি ভুট্টা, ২০০ কেজি শস্য, ২৪১০ কেজি ডাল, ১০০ কেজি সোয়াচাঙ্ক, ৩৮৮৫ কেজি সবজি, ১২০ কেজি মশলা, ৫৫৫ কেজি লবণ, ৮২৫ লিটার ভোজ্যতেল, ৭৩৮ ক্যান টিন্ড ফুড, ৫০ কেজি স্যুপ পাউডার, ৮৯৪৬ প্যাকেট প্রাতরাশের খাবার, ১৪৭৮ প্যাকেট বিস্কুট, ১৫২টি কেক, ৪০৫০০ টি-ব্যাগ, ৩৩৮ লিটার দুধ, ৫৬০ কেজি চিনি, ৪ কেজি গুঁড়ো দুধ, ১১১ কেজি পাস্তা, ১৪০ কেজি পেরিজ, ১৩০০ পাউরুটি, ৭০ লিটার ফ্রুট জুস, ১৫০০ লিটার পানীয় জল, ২৪ কেজি ফল, ৪০০টি করে দেশলাই ও স্নানের সাবান, ২০০টি করে কাপড় কাচার সাবান, টুথপেস্ট ও কম্বল, ৭২০টি রুমাল ও ৩১০টি পোশাক বিতরণ করেছে।
দেহত্যাগ
স্বামী অমরেশানন্দ (মহাবীর মহারাজ) গত ৭ জুন ২০২২ রাত্রি ৮টা ১৫ মিনিটে বারাণসী সেবাশ্রমের হাসপাতালে দেহত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। কয়েক বছর যাবৎ তিনি বার্ধক্যজনিত নানা উপসর্গে অসুস্থ ছিলেন।
মহারাজ ছিলেন শ্রীমৎ স্বামী বীরেশ্বরানন্দজী মহারাজের মন্ত্রশিষ্য। ১৯৬৬ সালে বেঙ্গালুরুর বাসবনগুড়ি কেন্দ্রে তিনি যোগদান করেন এবং ১৯৭৬ সালে নিজগুরুর কাছ থেকে সন্ন্যাসলাভ করেন। বেলুড় মঠ ছাড়াও বাসবনগুড়ি, দিল্লি, উটকামণ্ড, কালাডি, মুম্বই ও কনখল কেন্দ্রে তিনি সেবাকাজ করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিহারে খরাত্রাণে অংশগ্রহণ করেছিলেন। গত কয়েক বছর তিনি প্রধানত কনখল ও বারাণসী সেবাশ্রমে অবসর জীবনযাপন করছিলেন। মহারাজ ছিলেন তপস্বী ও শাস্ত্রানুরাগী।