এড়োয়ালীর রায়চৌধুরীরা বীরভূম জেলার ঢেকার রাজা রামজীবন রায়ের বংশধর। সম্রাট শাহজাহান তাঁকে শায়েস্তা খাঁর অধীনে ‘রাজা’ খেতাব দিয়েছিলেন এবং সম্রাট ঔরঙ্গজেবের আমলেও তাঁর যথেষ্টই প্রতাপ ছিল। শোনা যায়, কলেশনাথের মন্দিরনির্মাণের কারণে কর দিতে না পারায় নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর আক্রমণে ঢেকা ধ্বংস হয়।
।। ৩।। খড়গ্রাম থেকে এড়োয়ালীর দূরত্ব প্রায় চার কিলোমিটার। এড়োয়ালীর ‘আঠারোপাড়া’ বিশাল গ্রাম। আঠারোপাড়া গ্রাম কথাটা বোধ হয় অনেকের কাছেই নতুন ঠেকছে। সুতরাং ব্যাপারটা সম্পর্কে দু-এক কথা বলা প্রয়োজন। জমিদারবাবুদের ভদ্রাসন যে-গ্রামে থাকত সেখানে সাধারণত স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামসমাজ গড়ে তোলা হতো। অর্থাৎ বামুন-কায়েতদের ‘বাবুপাড়া’ ছাড়াও কামার, কুমোর, তাঁতি, জেলে, ধোপা, নাপিত, বদ্যি, ঘরামি, চাষি, গোয়ালা, ময়রা, বায়েন, ডোম, মুচি, পালকি-বেহারা কাহার প্রভৃতি প্রয়োজনীয় সব বৃত্তির মানুষদের জন্য আলাদা আলাদা পাড়া থাকত। তাদের চাকরান জমি দিয়ে স্থায়িভাবে গ্রামে বসত করানো হতো। অর্থাৎ এরা ছিল জমি দিয়ে বসানো প্রজা, তারা তাদের চাকরান সম্পত্তি ভোগদখলের বিনিময়ে পুরুষানুক্রমে জমিদারবাবুদের সেবা করে যেত। মুসলমানপাড়া থাকত গ্রামের এক প্রান্তে। সব মিলিয়ে আঠারোটি পাড়া থাকত বলে এধরনের গ্রামকে বলা হতো ‘আঠারোপাড়া গ্রাম’। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে এড়োয়ালীর এলাকা ১০৪০.১৯ হেক্টর। জনসংখ্যা ৫৯১৭ জন, বাড়ির সংখ্যা ১৫৬৭টি। তবে এতদিনে অবশ্য লোকসংখ্যা এবং বাড়ির সংখ্যা দুই-ই বেড়েছে। এড়োয়ালীর আশপাশের গ্রাম হলো আয়রা, আউগ্রাম, গয়েসপুর, জটারপুর, কাঁদুরি ইত্যাদি। এড়োয়ালীর রায়চৌধুরীরা বীরভূম জেলার ঢেকার রাজা রামজীবন রায়ের বংশধর। সম্রাট শাহজাহান তাঁকে শায়েস্তা খাঁর অধীনে ‘রাজা’ খেতাব দিয়েছিলেন এবং সম্রাট ঔরঙ্গজেবের আমলেও তাঁর যথেষ্টই প্রতাপ ছিল। শোনা যায়, কলেশনাথের মন্দিরনির্মাণের কারণে কর দিতে না পারায় নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর আক্রমণে ঢেকা ধ্বংস হয়। যদিও এড়োলের রায়চৌধুরী পরিবারের অনেকেরই বক্তব্য—মুর্শিদকুলির আক্রমণে নয়, বর্গিদের হাতে সম্মানহানির ভয়ে রামজীবন সস্ত্রীক রামসাগর দিঘির জলে আত্মহত্যা করেন এবং বর্গিদের হামলায় ঢেকা ধ্বংস হয়। আবার এমন কথাও শোনা যায় যে, সিউড়ির কাছে রাজনগরের পাঠান শাসক ও নবাব আলিবর্দী খাঁর দেওয়ান আলিনকী খাঁর হাতে ঢেকা ধ্বংস হয় আর রামসাগর নয়, ঢেকাতেই অন্য একটি দিঘির জলে রামজীবন সস্ত্রীক আত্মহত্যা করেন। ঐ দিঘির মাঝখানে রামজীবন তাঁর বজরা ডুবিয়ে দিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে বর্তমানে ঐ দিঘি ‘লাডুবরি’ নামে পরিচিত। এখানে এবিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ নেই, তা সত্ত্বেও দুটি কথা বলা প্রয়োজন। প্রথমত, কলেশনাথের মন্দির...
Read the Digital Edition of Udbodhan online!
Subscribe Now to continue reading
₹100/year
Start Digital SubscriptionAlready Subscribed? Sign in