কলকাতা থেকে যখন পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়্যারশ এয়ারপোর্টে পৌঁছাই, সেই থেকেই এক বিস্ময় কাজ করছিল। পৃথিবীর নানা প্রান্তের বিমানবন্দর

তবুও তোমার কাছে আমার হৃদয় কলকাতা থেকে যখন পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়্যারশ এয়ারপোর্টে পৌঁছাই, সেই থেকেই এক বিস্ময় কাজ করছিল। পৃথিবীর নানা প্রান্তের বিমানবন্দর চিহ্নিত আছে রাষ্ট্রনায়ক বা নানা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নামে। কিন্তু পোল্যান্ডের রাজধানীর বিমানবন্দর সেদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান ফ্রেডরিক ফ্রাঁসোয়া শপ্যাঁ-র নামে নামাঙ্কিত। সংগীতের এত বড় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির উদাহরণ মেলে খুব কমই। কিন্তু কিংবদন্তি হয়েও শপ্যাঁ না বানিয়েছিলেন কোনো সিম্ফনি, অপেরা কিংবা ওরাতোরিওস, অথচ তিনি উনিশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এবং স্বনামধন্য সংগীত-সৃষ্টিকার। মাত্র উনচল্লিশ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবন, সেই জীবনে তিনি ট্র্যাজিক এবং রোম্যান্টিক শিল্পীর মর্যাদা পেয়েছিলেন। তাঁকে অনেকেই ‘মিনিয়েচেয়ারিস্ট’-এর তকমা দেন, কিন্তু তাঁর বাজনার যে-ধরন, সংগীত-সৃষ্টির কাঠামো এবং ব্যাকরণের মধ্যে অনুভূতি ও কল্পনার যে-মিশেল, সেটিকে কুর্নিশ করা ছাড়া আমাদের আর উপায় থাকে না। আজন্ম কেমন একটা বিভ্রম ছিল—তিনি বোধহয় ফরাসি। পরে জানতে পারি, শপ্যঁার বাবা ছিলেন ফরাসি, মা ছিলেন পোলিশ। কুড়ি বছর পর্যন্ত শপ্যঁা ছিলেন পোল্যান্ডের ওয়্যারশতে। তিনি ছিলেন ‘চাইল্ড প্রডিজি’। পোলিশ ইতিহাসের বিখ্যাত ঘটনা ‘নভেম্বর ১৮৩০ আপরাইজিং’-এর মাত্র এক মাস আগে তিনি প্যারি চলে যান। অতঃপর সেখানেই জীবনের পরবর্তী আঠারো বছর কাটান। সেখানে তিনি যাবতীয় খ্যাতি পেয়েছিলেন। এই আঠারো বছরে তিনি পাবলিক পারফর্মেন্স করেছিলেন মাত্র তিরিশটি। শপ্যাঁর তৈরি সুরগুলির মধ্যে ‘নকটার্ন’-এর খ্যাতি আবিশ্ব। আমি ‘ওয়েস্টার্ন ক্ল্যাসিকাল’-এর বোদ্ধা নই, তবে এই সুরগুলি শুনে খুবই আশ্চর্য লাগে। এমনিতেই নকটার্নের পাঁচ আর সাত নম্বর সুর খুবই বিখ্যাত। শপ্যাঁর সময়কালে ওয়েস্টার্ন ক্ল্যাসিকালের ‘রোম্যান্টিক পিরিয়ড’-এর মধ্যে তাঁর বাজনাকে সূচিত করা হয়। ঘুরতে গিয়ে দেখলাম, পোল্যান্ডের ঐ শহরে শপ্যাঁ যেন আজও একজন নেপথ্যচারী অদৃশ্য নাগরিক! তিনি যেন সবখানেই ক্ষণিক উপস্থিত, আবার অনুপস্থিতও—এইরকম একটা খেলার মধ্যে তিনি দৃশ্যমান। আমাদের এখানে যেমন রবীন্দ্রনাথের মূর্তি ভর্তি; যেমন দিন নেই রাত নেই, সময়ের সঙ্গে সাযুজ্য না রেখেই ট্র্যাফিক সিগন্যালে বাজে রবীন্দ্রসংগীত—ঠিক এরকম শ্রদ্ধার বিপুল বহর এই দেশে নেই। যেমন, শহরে রাস্তার ধারে ধারে এক একটি বেঞ্চ শপ্যাঁর নামাঙ্কিত।...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in