দেখো, বিচার করা, মনের নানা সংশয় দূর করা, জপ-ধ্যান ইত্যাদি করা—সব হ’ল চিত্তের শুদ্ধতা আনার জন্য, কিনা এ-সব অনিত্য জিনিস থেকে, মনের বি‌ক্ষিপ্ততা থেকে, মনকে গুটিয়ে শুদ্ধ ক’রে তাঁর সান্নিধ্যলাভের জন্য ব্যাকুল হওয়া। তারপর তাঁর কৃপা যে কিসে হবে তা তিনিই জানেন। তবে কি জানো—সবচেয়ে তিনি কিসে প্রসন্ন হন? এই যা করছ, এতেই তিনি একমাত্র প্রসন্ন হন অর্থাৎ সেবাতে। সেবায় বনের পশুপাখি থেকে স্বয়ং ভগবান পর্যন্ত, সব বশ। কাজেই এখন আর মন খারাপ না ক’রে যেমন করছ ক’রে যাও। আপনার জনদের আবার চাওয়া-চাওয়ি কি আছে?
ঠাকুরের কাজ করবে, আর সাধন-ভজন করবে; কিছু কিছু কাজ করলে মনে বাজে চিন্তা আসে না। একাকী বসে থাকলে অনেক রকম চিন্তা আসতে পারে।

কাজ করা চাই বই কি, কর্ম করতে করতে কর্মের বন্ধন কেটে যায়, তবে নিষ্কাম ভাব আসে। একদণ্ডও কাজ ছেড়ে থাকা উচিত নয়।
মানুষ স্বীয় কর্মেরই ফল ভোগ করে, এজন্য অপরকে দোষী না ক’রে ভগবানের নিকট প্রার্থনা ও তাঁর কৃপার উপর নির্ভর ক’রে ধীরভাবে সকল অবস্থায় সহ্য ক’রে যাওয়াই প্রয়োজন।

চিরদিন কেউ সুখী থাকবে না, সব জন্ম কারও দুঃখে যাবে না। যেমন কর্ম তেমন ফল, তেমন যোগাযোগ হয়।
ঈশ্বরেচ্ছা ছাড়া কিছুই হবার সাধ্য নেই, তৃণটিও নড়ে না। যখন জীবের সুসময় আসে, তখন ধ্যানচিন্তা আসে; কুসময়ে কুপ্রবৃত্তি কুযোগাযোগ হয়। তাঁর যেমন ইচ্ছা তেমনি কালে সব আসে, তিনিই তার ভেতর দিয়ে কার্য করেন। নরেনের কি সাধ্য? তিনি তার ভেতর দিয়ে সব করলেন বলে তো নরেন সব করতে পেরেছিল।

তুমি একটি সৎকার্য করলে, তাতে তোমার পাপটুকু কেটে গেল। ধ্যান, জপ, ঈশ্বরচিন্তায় পাপ কােট।
ভারী সাবধানে চলতে হয়। প্রত্যেক কর্মের ফল ফলে। কাউকে কষ্ট দেওয়া, কটু বলা ভাল নয়।
কর্ম হতেই সুখ দুঃখ সব। তাঁকেও কর্মফল ভোগ করতে হয়েছিল।

কর্মফল ভুগতে হবেই। তবে ঈশ্বরের নাম করলে যেখানে ফাল সেঁধুত, সেখানে ছুঁচ ফুটবে। জপ তপ করলে কর্ম অনেকটা খণ্ডন হয়। যেমন সুরথ রাজা ল‌ক্ষ বলি দিয়ে দেবীর আরাধনা করেছিল বলে ল‌ক্ষ পাঁঠায় মিলে তাঁকে এক কোপে কাটলে। তার আর পৃথক ল‌ক্ষ বার জন্ম নিতে হলো না। দেবীর আরাধনা করেছিল কিনা। ভগবানের নামে কমে যায়।

ভাল কাজটি করা ভাল। ভালটি করলে ভাল থাকে, মন্দটি করলে কষ্ট পেতে হয়।

গুরুর সেবা হচ্ছে—গুরুর অনুগত হ’য়ে তাঁর ইচ্ছামত কাজে সমদরদী হ’য়ে সাহায্য করা, তাঁর কাজ আসান করা, তাঁর প্রসন্নতা বিধান করাই আসল সেবা। অহঙ্কারবশে তা না ক’রে, উলটো করলে গুরু রুষ্ট হন। গুরুকে রুষ্ট করাই মহা অন্যায়। এই দুর্বল শরীরে ওঠা-বসায় কতো কষ্ট! আর কথামত ইঙ্গিতটি বুঝে নিয়ে তৎ‌ক্ষণাৎ কাজটি করলে সব হাঙ্গামা মিটে গেল। অত পণ্ডিতি হিসেবে কাজ কি?