প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার মূল লক্ষ্য ছিল নৈতিক, আধ্যাত্মিক ও বৌদ্ধিক উন্নতির মাধ্যমে

প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার মূল লক্ষ্য ছিল নৈতিক, আধ্যাত্মিক ও বৌদ্ধিক উন্নতির মাধ্যমে ব্যক্তির সামগ্রিক বিকাশসাধন। বেদে নিহিত ও গুরু-শিষ্য পরম্পরায় অনুশীলিত এই বিদ্যাচর্চার অভিমুখ প্রথম সুসম্বদ্ধ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পরিগ্রহ করেছিল তক্ষশিলা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পাকিস্তানের বিশিষ্ট প্রত্নতাত্ত্বিক-ইতিহাসবিদ আহমেদ হাসান দানির মতে, অবিভক্ত ভারতের প্রাচীনতম ও প্রথম সংগঠিত তক্ষশিলা শিক্ষাকেন্দ্রের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য প্রায় সব রাজ্যের রাজাই প্রয়াসী হয়েছিলেন।১ বৈদিক শিক্ষার সাথে বৌদ্ধ ধর্মীয় শিক্ষার পীঠস্থান তক্ষশিলার অমোঘ আকর্ষণে শুধু ভারতই নয়, ব্যাবিলন, গ্রিস, সিরিয়া, আরব, ফেনিসিয়া এবং চীন-সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জ্ঞানপিপাসু মানুষ সেকালে ছুটে এসেছিল। প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্র, সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতিতে তক্ষশিলার বৌদ্ধিক অবদান অনন্য ও অপরিসীম। ‘বিশ্ববিদ্যালয় নগরী’ তক্ষশিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষান্তর ‘University’ শব্দটির উৎপত্তি ল্যাটিন ‘Universitas’ থেকে, যার অর্থ—‘এক সমগ্র’। ল্যাটিন শব্দবন্ধ ‘universitas magistrorum et scholarium’-এ ‘University’ সেই পরিসর, যেখানে বিদ্বান ও বিদ্যার্থী গোষ্ঠী সারস্বত অনুশীলনে রত। সুদূর অতীতে তক্ষশিলার জ্ঞানাঙ্গনে এই আদি ল্যাটিন অনুষঙ্গে University-র বিশিষ্টতা প্রতিভাত হয়। কিন্তু আধুনিক ধারণায় পেশাদার ডিগ্রিপ্রদানকারী কেন্দ্রীয় প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্ববিদ্যালয় বলতে যা বোঝায়, তক্ষশিলাতে কিন্তু তার দেখা মেলে না। প্রাক্‌-বুদ্ধ পর্বে এখানে এমন কোনো বৃহদাকার ভবনের প্রত্নতাত্ত্বিক উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয় না, যেখানে বিপুল সংখ্যক ছাত্র একত্রবাস বা একত্রে অধ্যয়ন করতে পারত। বৃহদাকার কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে তক্ষশিলাতে উচ্চশিক্ষার একগুচ্ছ বৌদ্ধিক চর্চাকেন্দ্র গড়ে উঠেছিল। এই পর্বে রচিত প্রাচীন বৌদ্ধ ধর্মীয় ও সাহিত্যিক উপাদানেও বিষয়টি সমর্থিত হয়। খ্যাতনামা শিক্ষকরা আচার্যরূপে এই চর্চাকেন্দ্রগুলির পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণ ও সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিলেন। এই উৎকর্ষ-সমন্বিত বৌদ্ধিক চর্চাকেন্দ্রগুলির উপস্থিতি তক্ষশিলাকে ‘বিশ্ববিদ্যালয় নগরী’র মর্যাদা দিয়েছিল। বৌদ্ধ জাতক গ্রন্থে তক্ষশিলাকে ‘বিশ্ববিদ্যালয় নগরী’ বলা হয়েছে; শিল্পকলা ও বিজ্ঞান চর্চার জন্য এর খ্যাতির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।২ মহাভারতে তক্ষশিলার মর্যাদার উল্লেখ পাই যখন রাজা জনমেজয় অপরাজেয় হয়ে তক্ষশিলা থেকে ফিরে আসেন।৩ খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ভারতীয় উপমহাদেশে পারসিক বিজয়ের পর জ্ঞানচর্চার পীঠস্থানরূপে তক্ষশিলার উদ্ভব। এখানে অবশ্যই পারসিকদের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়পর্বে অন্যান্য বিদেশি জাতিগোষ্ঠীর, যথা—ইন্দো-ব্যাকট্রিয় (খ্রিস্টপূর্ব...

Read the Digital Edition of Udbodhan online!

Subscribe Now to continue reading

₹100/year

Start Digital Subscription

Already Subscribed? Sign in