যাও যাও যত
ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ
জড়ো হয়ে আছো
বুকের ভিতর

যেভাবে দৃশ্য মুছে যায়
সেভাবে তুমি উঠে আসো
কাচের দরজার ভিতর

মৃত্যু কাছে এলে মানুষ টের পায়
তারারা টের পায় চাঁদের একধার
কে যেন খেয়ে গেছে,

তাহলে কি বিপরীত নয়? সমমেরুবাসী?
উড়ে গেছে নির্বন্ধকার মৃত কোনো শিমূলের ডালে

না হ’লে পরে আফসোস হবে, হবেই।
তাই এখনই চুলোয় যাক অপত্য জ্ঞান—
নিজেই শ্রাদ্ধ করি নিজের।

ঈশ্বর, ছুঁয়েছো যখন প্রাণ
আমার আকণ্ঠ গরলে
একফোঁটা দিয়ে যেও তোমার অমৃত।

দু-মুঠো জিরোতে যদি চাই
বলো ঠিক কার কাছে যাব?
এত এত সহচরী হাত

তোমার ছায়ায় বসি জীবনদেবতা,
তোমার বাতাসে ভাসে অমৃতকথন।
বরাভয় পার করে এ মাটির বুকে,

কাঠকয়লা পুড়িয়ে উনুনে করা অন্ন
দুহাতে বেড়ে
মা আমার
পিতা মহাদেবের সংসারে সেজে ওঠেন অন্নপূর্ণা;

কালিতে লিখেছি কালী৷ খালি মন৷ অসংবাদী জবা৷
স্বভাবে ফতুর আমি, চতুরতা, শব্দে-শব্দে হৃদি
বিধিতে নিপুণ করি৷ জয়তারা,

আমি সাঁতার কাটি—এক্কা-দোক্কা খেলি
ঘুড়ি ওড়াই আকাশে,—দেখে
তোমার ধ্যানমগ্ন ঠোঁটের কোণে ফুটে

সন্ধ্যাতারার মতন এখনো একটা তারা জ্বলে
আকাশের গৃহে
টিমটিমে আলো

মনে পড়ে ফুল
দুচোখ মেলার পারা ফুল, তার অমিতসম্ভার
সম্ভাবনায় ফুটে ওঠা

যখন খুব বৃষ্টি নামল
তখন বৃষ্টির দরকার নেই
বৃষ্টির প্রতীক্ষা করে করে

ডাক আসে, ডাক ফিরে যায়,
কেউ আজ পার হবে নদী;
তার সাথে বেঁধে দিও গান,

কবি মিথ্যে বলে কিন্তু কবিতা বলে না।
সত্যের দহন ছাড়া উনুন জ্বলে না
অমোঘ পঙ্‌ক্তির

আমার অসুখে, আমাদের খোয়া যাওয়া জমিগুলির পাশে আমি এখনও
চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকি

হাওয়া আজকাল বদল হয় কিনা জানি না,
তবে ঘুমের ভেতর দাবার চাল দিতে দিতে
অজানা মাটির গন্ধ আসে।

গাছের হয়ে কথা বলে হাওয়া
পাতা নড়ে।
নদীর হয়ে বলে জল।

বানভাসি মেঘেদের দল
গেছে আজ ভুল ঠিকানায়
শীতের সকালে

সোনালি বিকেলগুলো আজকাল
দ্রুত সন্ধ্যায় মিশে যায়।

কাশফুলের জ্যোৎস্নায় স্নাত দশদিক
সন্ধ্যাতারার মতো ঝলমলে মুখে

আমরা তো রোজ শোনা কথা বলি
সোনার কথা বলি কৈ

অন্তত পথে নেমে জেনে নেওয়া ভাল দিশা
নিরপে‌ক্ষতার সন্ধানে আত্মা অ‌ক্ষয়, অবিনাশী

যতবার নতুন রাস্তার খোঁজে পথে নামি
ততবার পুরনো রাস্তার সাথে দেখা হয়ে যায়

একবার আঁচলের সামনে মাথা নত করো
জেগে উঠবে সরোবর।
কার কোথায় ঘর?

দুটি পা মাটিেত, তবু
ধুলো তাকে মলিন করেনি,
গোপন জটার ভার
ধুয়ে দেয় জাহ্নবীর বেণী।
দুটি চোখ শূন্যে রাখা,

খেলায় মেতেছি দুহাতে আগুন দাঁড়িয়ে ঠায়
এখানে ওখানে ভরবসন্ত বৃষ্টিছায়
জানি মহারাজ বটগাছ তুমি আদর

দ্বারে মুণ্ডিত চাঁচর কেশ সন্ন্যাসী নদের চাঁদ ভি‌ক্ষা মাগিলেন জননীরে,
হৃদয় ভাঙিল নয়ন বারিপাতে মুষ্টিভি‌ক্ষা দিয়ে সোনার বরণেরে।

কবে থেকে এ ভিজে রান্নাঘরে
তোমার পদ্মপা ফোটেনি, মা গো

অথচ, এখানেই নিজেকে খনন

একদা যে জাগ্রত দেবী ঘুমপাড়ানিয়া গান শুনিয়ে
শান্তির নিদ্রা এনে দিতেন ঘুমভাঙানিয়া

উজ্জ্বল এক আকাঙ্ক্ষা নিয়ে মানুষ হাঁটছে
নরম রোদের থেকে স্নেহ, পিপাসার জল

বৃষ্টিমুখরিত দিন খুলে খুলে পড়
লুকনো বিদ্যুৎ

অবচেতনের গন্ধ শুভেচ্ছাপাতায়…

কালো তারা কালো তরুণ গোলাপ,
দিন নেই রাত্রি নেই তার
সাদা সেমাই রং নাড়ি
অজস্র রক্তের তুলি চিৎকার

আকাশে যখন আঁধার ঘনায়, রাত্রি তমসাময়,
যখন বাতাস ভয়ংকরের নির্দেশে দিশাহীন—
কে বাজাবে বলো বিজয়ডঙ্কা, ঘটাবে সমন্বয়,

একটি প্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি,
প্রশ্নটি রাত্রির কাছে,
চন্দ্র ও স্তব্ধতার কাছে—
মানুষ কোথায় যায়?

যত মেঘ করে আসে তত ভাবি মেঘের আড়ালে
হয়তো এখনো কিছু অন্বিষ্ট যা রয়ে গেছে সারাদিন ধরে
অপে‌ক্ষায় থাকি মেঘ সরে যায় যদি

মায়ের লেজ কামড়ে বসে থাকা ছোট কুকুরছানা
তুমি আর কিছুই জান না
কেবল একখানি ছোট্ট পৃথিবী

বাতাসের আলপনা
তুমি না বোঝালে, কোনওদিন বুঝব না
আমারও মাথায় কালো কাপড়ের ছাতা

ভাল থাকব বলে রোদ খুঁজি
বৃষ্টি খুঁজি
শালবনে গিয়ে চৈত্রের চিঠি খুঁজি।
রাত পোহালে রাঙা আকাশ খুঁজি

কখনো দেখেছেন তাকে? কোথায়?
এক অর্বাচীন শহুরে নাবিক
হাতে তার দোদুল্যমান সবুজ লন্ঠন

সামনে কারোর দেখা হয়তো পাব না, পিছনেও
থাকবে না কেউ
যে পথ সরল সোজা, যার কোনো শুরু নেই, নেই
কোনো শেষ

আমার ব্রতের নাম আর কিছু নয়, শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণব্রত

এ-ব্রতের জন্য কোনও তিথি
নির্ধারিত নেই।

আমার মন আজ খুব শান্ত হয়ে গেছে।
ঘরে ঢুকছে পতিতোদ্ধারিণী গঙ্গার স্নিগ্ধ হাওয়া,
অন্ধকার থাকতে থাকতে ঠাকুর

আলগোছে অগোছালো খেলা কর তুমি,
কখনও কাছে আলো, ছুঁয়ে যাও ভূমি,
কখনও দূরে চলে যাও, ঢের দূরে,

‘অস্তিত্ব’ ছিল না তখন
‘অনস্তিত্ব’—তাও নাহি ছিল,
এ বিশ্ব আমাদের অথবা আকাশ উদার—

যে লিখেছে মা নিষাদ ক্রৌঞ্চমিথুন
যে লিখেছে পদপল্লবে মূর্ছা বিরহ মধুর
আমাকে ঘুমঘোর থেকে তুলে
দাঁড় করাও সে স্থপতির পাশে
যে ভাঙছে গড়ছে

দোমড়ানো জীবন তিরতির করে লাফিয়ে উঠে পড়ে যায়
দুঃখ তাকে চেনে।

আমাদের পরিচিত মেঘেরা
তার থেকে কিনে নিতে স্বপ্ন
খুব যদি অবেলার বৃষ্টি

বোবা পৃথিবীর থেকে দূরে
হেঁটে চলে যায় সমস্ত শহর
মাসকারা করে হাসে

বহু ফুলে ঘুরে শেষে দিনান্তের ক্লান্তি—
গানের কলিরা ফোটে ঠোঁটে।

যে-জীবন পাহাড়ের যে-জীবন কুয়াশার
তার কাছে ফুটপাত অলিগলি আর কিছু নয়
অসুখ ও অভিমানের গুল্মলতা যেন

অযুত যোজন পাহাড় পেরনো পথ,
ভাবসঞ্চারে আকুল ঊর্মিমালা—
কলুষনাশন আগুন ছোটানো রথ,
মানবতারণে আপন দহন জ্বালা—

বহতা হাওয়ায় উড়তে থাকে তারে ঝোলানো আমাদের প্রতিকৃতি।
পাতলা সুতোয় বোনা যত ইহকাল আগামী কারুকাজের ইন্তেজার করে।
অলিভ বাগানের পথে পতনশীল স্বপ্নেরা হেঁটে বেড়ায়।

বুঝি পরম্পরা, জড়িয়ে জড়িয়ে লতা
অদূরে যদিও বৃক্ষের উত্থান, স্তম্ভিত ভাবনার চারপাশে
ফুল-পাতার সমর্থনে কাঙ্ক্ষিত চৈত্র মাস

উঠোন ভর্তি ধান। ধানে ধানে
ক্রমশ রঙিন হয়ে যাচ্ছে স্বপ্নেরা
এমন হেমন্তদিনে
হাঁড়ির ভিতর থেকে

শরীরের সমস্ত পোশাক গড়িয়ে যাচ্ছে নিচের দিকে
বালিতে অাঁকা হচ্ছে জ্যামিতিক পদচিত্র।
দিক্শূন্য। ঈশানে… নৈঋতে কী দেখা যায় কোনো ভ্রু‌ক্ষেপ নেই
বাটির মাঝখানে ফাঁকা। চারপাশে বলয়ে ঘুরছে ওম।

মুড সুইঙের ভিতর ঘোরাচ্ছ
হে প্রিয় খেলা

পেতেছি প্রাণবায়ু
বাজাও বাঁশি অথবা বিষাদ

যাওয়াটুকু এরকমই হবে, মৃদু হাতে মুছে নেওয়া রোদ
ফুলে-ভরা শান্ত নিমডাল ঝুঁকে আসবে জানালার কাছে
একটা অনাথ বিষণ্ণ মাছি ঐ এককোণে চিড়-খাওয়া লাল

যেসব কোলাহল প্রাণের ভেতরে এসে পিঁড়ি পেতে বসে
আমি তাদের প্রত্যেকের সাথে কথা বলি

শুনেছি সময় গেলে বিষক্রিয়া কমে আসে ক্রমশ
হাসপাতালের লোকেরা তাই বলে।
সত্যি? নাকি সেগুলো বিষ নয়, বিষের মতো কিছু।

পাহাড়ের মাথায় এক বৃদ্ধ কুঁড়েঘরের সামনে
দাঁড়িয়ে আছে একটি ন্যগ্রোধবৃক্ষ।

দরজা বন্ধ আছে বলে
মোমবাতি দেয়নি কেউ—
ফাঁকা চৌকাঠ।

আকাশে নৌকা বাধা থাকে
বিন্দু বিন্দু ঘাম হেঁটে যায়
পথ বেয়ে

প্রতিটি আনন্দই ভেসে যায় ঈশ্বর মুখ তুলে তাকান আমাদের উঠানজুড়ে সাত সমুদ্দুরতেরো নদীর কোলাহল

প্রতিটি আনন্দই ভেসে যায় ঈশ্বর মুখ তুলে তাকান আমাদের উঠানজুড়ে সাত সমুদ্দুরতেরো নদীর কোলাহল

হেমন্তের গোধূলির আমন্ত্রণে ইছামতির বুকে
নিভন্ত আলোয় সেই কবে ভাটিয়ালি গেয়েছে মাঝি
তবুও মনের মধ্যে মাঘের শিশির জমা হলো না

যে হৃদয় ভরে আছে পবিত্রতাতে
তার আলো মেখে নাও
চোখে-মুখে-হাতে।

স্মৃতির গিঁট খুলতে গেলেই
কয়েক জোড়া চোখ টুপটাপ খসে পড়ে।
সেসব বাহারি রঙের, বাহারি চোখের তারা।
সাদা ফ্যাকাসে যে চোখজোড়াকে

শেষের দিনে হাসির খোরাকভালবাসায় পাগলা সানাই—হোঁচট শুধুই ক্লান্ত স্বভাবশুরুর হিসেব, তোমায় দিলামবাসার আবার মন্দ ভালযাযাবর সে, কেনই বা চায়?প্রিয় নদীর নাম জানা নেইগভীর আশা ‘তোমার পানে’ যায়…আবার এসো বলল যারা,তারাই বুঝি শুভাকাঙ্ক্ষী?ভিনদেশে যে ঘর বানাতপ্রিয় সফর, নামতা জানি!গল্প জুড়ে শব্দমিছিলঅন্তরে আর মিল হলো না,কাব্যে ফেরে নাব্যতা তারসফর শেষেও ঘর মেলে না।

গোপন ঊর্মিমালা ভেঙেএগিয়ে চলেছে আনন্দ সাম্পানসমস্ত অরণ্য ঝুঁকে পড়েছে তোমার দুয়ারে।

মঞ্চটা কোনো নৃত্য গীতবা অভিনয়ের নয়তুলসীমঞ্চ।এটা ওটা গাছের পাশেইদু-চারটে তুলসী চারাবেশ দৃষ্টি কেড়েছে সেখানে।

নিজের কথা নিজেই বলি নিজের কাছে একা।বলতে বলতে সাত সমুদ্দুর তেরো নদীর দেখা।।

মলয় বাতাস নয়, এলোমেলো হাওয়ায়ছিন্নভিন্ন শিরীষ ফুলের চলাচল…এইই কি জীবন?

সূর্যাস্তের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলে সফরটা যেনদীর্ঘস্থায়ী হয়। মনকে একটা নির্দিষ্ট তারে বেঁধেনিলে পথে শূর্পণখা বা দুঃশাসনের সঙ্গে দেখাহওয়ার সম্ভাবনা কমে আসে। নিজের ভেতর লালননা করলে কুম্ভকর্ণ বা বকাসুরও পথ আটকায় না।

তুমি তো আমিই জানি। দিকে দিকে বাজে তার সুরগভীর মাছের মতো কোলাহল কাহাকে থামায়ওপাশে যে পথচারী কাকে খোঁজে? কাকে ভাবে গান?

মানুষের নয়—শব্দ শোনো গাছের, পাতার…কেননা বিফল শব্দে নির্ভরতা নয়,অবিশ্বাস জাগে।

ছিপ হাতে বসে দেখি—জলের ভেতরে
দৌড়াদৌড়ি করে মাছ, আর তারও নিচে
সাঁতার কাটছে পাখি উড়ন্ত ডানায়

আমি এই বসন্তের কেউ নই গিরিধারী,
যদি জন্মান্তরের কথা বলো,
তবে আমি কদম ফুলের মতো

ক্রমে ক্রমে নিভে আসে পথ
হে তুমি অপার হয়ে এসো
এসো এই করতলে

মস্ত আকাশি রঙের বাড়িটা কেমন শান্ত
সবুজ পরদার জানলার ভেতর ব্যস্ততা, দুঃখ মুখের সারি

ছায়ার ভিতরে মুখ লুকিয়ে হাঁটছিলে এখন
তোমার জামাকাপড়ে স্মৃতি-জমানো ফুলের গন্ধ

মানুষের মন অতল গভীর, জিজ্ঞাসা-জর্জর—
কোথা পাবে সব উত্তর তার খুঁজে ফিরে অহরহ,
কোথা গিয়ে প্রাণ জুড়াবে নিভৃতে, পাবে প্রেম-নির্ঝর—
সে বাতাস কোথা, যার তীরবেগে কেটে যাবে সব মোহ!
দেবস্বরূপ অনুভবে মন কোথায় ধন্য হবে—

লীলসভায় দাঁড়াব—আমি
বাতাসকে জানি, মা!
সঙ্গ দেবে আমাকে এই
চৈত্ৰপূর্ণিমা।

লীলসভায় দাঁড়াব—আমি
বাতাসকে জানি, মা!
সঙ্গ দেবে আমাকে এই
চৈত্ৰপূর্ণিমা।

আকাশ নেমেছে মাটির বুকের কাছে
মাটির কান্না আকাশকে ছুঁতে চায়,
দিগন্ত রেখা সরে যায় দূরে দূরে
এগিয়ে গেলেই অনন্ত পাওয়া যায়।

মাতঃ প্রণমি শ্রীপদে৷৷
মঙ্গল-কারিণী শিবা, ত্রাতা শম্ভু উমাপতি,
সিদ্ধিদাতা গণেশাদি আছেন যত দেবতা,
রবি গুরু যত গ্রহ, পুরন্দরাদি দিক্‌পতি

হাওয়ার ভিতর দিয়ে যে আলো নিভৃতে আসে,

যে আলো পাথর বাঁধা শীতল বাড়ির পাশে

হাওয়ার ভিতর দিয়ে যে আলো নিভৃতে আসে,

যে আলো পাথর বাঁধা শীতল বাড়ির পাশে

পাখিটি কি তোমায় নাম ধরে ডাকে?

আরেকটা বিকেল ফুরোয়। ম্লান হয় গানের খাতা।

হাওয়া খেয়ে যায় বিবিধ বাসনার সুর।

পাখিটি কি তোমায় নাম ধরে ডাকে?

আরেকটা বিকেল ফুরোয়। ম্লান হয় গানের খাতা।

হাওয়া খেয়ে যায় বিবিধ বাসনার সুর।

হার্পসিকর্ড কনচের্তো আর ঢাকের আওয়াজ
মিশে যাচ্ছিল সেই সন্ধ্যায়,
পাঠক সরে যাচ্ছিলেন দূরে
একটি বইয়ের সন্ধানে হন্যে হয়ে

হার্পসিকর্ড কনচের্তো আর ঢাকের আওয়াজ
মিশে যাচ্ছিল সেই সন্ধ্যায়,
পাঠক সরে যাচ্ছিলেন দূরে
একটি বইয়ের সন্ধানে হন্যে হয়ে

দুপুরের রঙে

আবৃত—

ঝরাপাতা, পথ, বনরেখা, প্রান্তর—

         সুন্দরে সুন্দরে পরিস্নাত।

দুপুরের রঙে

আবৃত—

ঝরাপাতা, পথ, বনরেখা, প্রান্তর—

         সুন্দরে সুন্দরে পরিস্নাত।

সাবলীল বাঁশিসুরে নৌকোর স্মৃতি আয়ুরেখা হয়ে যায়

মুষ্টিভি‌ক্ষা থেকে জমা হয়

দু’একটি ধূসর পালক

হারানো মৃতকাল ভাঙা সেতুটির গায়ে

সাবলীল বাঁশিসুরে নৌকোর স্মৃতি আয়ুরেখা হয়ে যায়

মুষ্টিভি‌ক্ষা থেকে জমা হয়

দু’একটি ধূসর পালক

হারানো মৃতকাল ভাঙা সেতুটির গায়ে

সেকথা জেনেই, শোনো,
কাঁটাগুল্ম পায়ে দলে দেবীতটে এগোচ্ছেন রামপ্রসাদ সেন…

সেকথা জেনেই, শোনো,
কাঁটাগুল্ম পায়ে দলে দেবীতটে এগোচ্ছেন রামপ্রসাদ সেন…

“বড় ‌ক্ষতি নিয়ে যাও এই দুই মাটির পুতুল,
আধা দামে দেব”…
দু’টাকা খুচরো আমি ফিরত না নিয়ে ভাবি
আবার কখনো আমি ভ্রমণে আসব।

“বড় ‌ক্ষতি নিয়ে যাও এই দুই মাটির পুতুল,
আধা দামে দেব”…
দু’টাকা খুচরো আমি ফিরত না নিয়ে ভাবি
আবার কখনো আমি ভ্রমণে আসব।

তোমার দেহাতি আলোয় আমার মেখে নেওয়া ভোরের আজান
শীতলপাটি পাঁচালির গানে বাবুইর বাসা

তোমার দেহাতি আলোয় আমার মেখে নেওয়া ভোরের আজান
শীতলপাটি পাঁচালির গানে বাবুইর বাসা

সবুজ শস্যের মানে
গাঁ গঞ্জের ইস্টিশান জানে
আড়তদার আরও ভাল বোঝে…

সবুজ শস্যের মানে
গাঁ গঞ্জের ইস্টিশান জানে
আড়তদার আরও ভাল বোঝে…

দিন শুরু নবারুণে
ধরণি আলোকিত কিরণে
ভোর হয় নিশা অবসানে
কোলাহল বিহগের গানে

দিন শুরু নবারুণে
ধরণি আলোকিত কিরণে
ভোর হয় নিশা অবসানে
কোলাহল বিহগের গানে

যুগান্ত পেরিয়ে আজ কার কাছে দাঁড়াব এখন,
কে বা দেবে পাপমন জতুগৃহে পুণ্যের দহন?

যুগান্ত পেরিয়ে আজ কার কাছে দাঁড়াব এখন,
কে বা দেবে পাপমন জতুগৃহে পুণ্যের দহন?

কোথায় ভাবলে তাঁকে
অন্তরী‌ক্ষে, পাথরে না জলে?

কোথায় ভাবলে তাঁকে
অন্তরী‌ক্ষে, পাথরে না জলে?

ফতুয়ার পকেটে রঙিন মার্বেল গুলি,
একবার কি ফিরে যাওয়া যায়
শৈশবের খোলা মাঠে দু’হাত ছড়িয়ে?

ফতুয়ার পকেটে রঙিন মার্বেল গুলি,
একবার কি ফিরে যাওয়া যায়
শৈশবের খোলা মাঠে দু’হাত ছড়িয়ে?

শব্দহীন নির্জনতম কোনো এক মরু-সকালে
সতেজ নির্মল হিমেল হাওয়া উত্তর কোণ থেকে

শব্দহীন নির্জনতম কোনো এক মরু-সকালে
সতেজ নির্মল হিমেল হাওয়া উত্তর কোণ থেকে

জেগে আছে ধ্রুবতারাটি
অন্ধকারের গর্ভে,
সাতটি তারারা প্রশ্ন
চিরকাল তুলে ধরবে।

জেগে আছে ধ্রুবতারাটি
অন্ধকারের গর্ভে,
সাতটি তারারা প্রশ্ন
চিরকাল তুলে ধরবে।

বিক্ষুব্ধ জলের বুক থেকে
ছিনিয়ে নেওয়া তোমায়, স্বাধীনতা;
যেন এই আলোর ডিঙি থেকে
নেমে আসছে গৃহস্থ পালক।

বিক্ষুব্ধ জলের বুক থেকে
ছিনিয়ে নেওয়া তোমায়, স্বাধীনতা;
যেন এই আলোর ডিঙি থেকে
নেমে আসছে গৃহস্থ পালক।

ঐ যে বেনিয়াটোলার ট্রাম-লাইনের ধারে
বট আর অশ্বত্থের ঝুরি নেমে আসা বাড়িটাকে দেখছ,
ওখানেই বিপিন থাকত, ওর বাপ-কাকা, ঠাকুরদা,
দুই বোন, আইবুড়ো পিসি, ওর মামাতো ভাই নরেশ

ঐ যে বেনিয়াটোলার ট্রাম-লাইনের ধারে
বট আর অশ্বত্থের ঝুরি নেমে আসা বাড়িটাকে দেখছ,
ওখানেই বিপিন থাকত, ওর বাপ-কাকা, ঠাকুরদা,
দুই বোন, আইবুড়ো পিসি, ওর মামাতো ভাই নরেশ

যে-ভাবনা স্বাধীন জেনেছিল ইচ্ছাকে—তার শেষে,
স্বতন্ত্র মনে-করা সমস্ত গঠন ও সংগ্রাম পেরিয়ে
নিজের সামনে এসে দাঁড়াই।

যে-ভাবনা স্বাধীন জেনেছিল ইচ্ছাকে—তার শেষে,
স্বতন্ত্র মনে-করা সমস্ত গঠন ও সংগ্রাম পেরিয়ে
নিজের সামনে এসে দাঁড়াই।

শোনো আমি নয়নতারার পরী
আমার ফুলের রঙ হালকা বেগনি, আমি

শোনো আমি নয়নতারার পরী
আমার ফুলের রঙ হালকা বেগনি, আমি

চোখের সামনে কত দৃশ্য বদলে যায়!
পৃথিবীর একাকী দেহ…

চোখের সামনে কত দৃশ্য বদলে যায়!
পৃথিবীর একাকী দেহ…

আলোর দারিদ্রে যা ঢাকা পড়ে গেছে
খুঁজে পেতে চাই সেই সত্যের মহিমা।

আলোর দারিদ্রে যা ঢাকা পড়ে গেছে
খুঁজে পেতে চাই সেই সত্যের মহিমা।

এই মুহূর্তটি চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।
হাজার সমুদ্র কেটে নীলকান্ত মণি।

এই মুহূর্তটি চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।
হাজার সমুদ্র কেটে নীলকান্ত মণি।

যেখানেই যাই, যে কাজই করি, মনে হয়
তুমি যেন আমার ছায়াসঙ্গী, আমার পাশে পাশে আছো—

যেখানেই যাই, যে কাজই করি, মনে হয়
তুমি যেন আমার ছায়াসঙ্গী, আমার পাশে পাশে আছো—

চাপাটি-ঘ্যাঁটের দম্ভ। চা-পাউরুটির দৃপ্ত অহংকার।
দ্যাখো, দেখুন, দ্যাখ্ রে, নানা কিসিমেরই অ্যালকেমি ‘অস্মিতা’…

চাপাটি-ঘ্যাঁটের দম্ভ। চা-পাউরুটির দৃপ্ত অহংকার।
দ্যাখো, দেখুন, দ্যাখ্ রে, নানা কিসিমেরই অ্যালকেমি ‘অস্মিতা’…

তোমরা যত ক্ষতির নেশায় মেতে উঠবে
নাছোড় আমার জেদ তত দৃঢ় হবে

তোমরা যত ক্ষতির নেশায় মেতে উঠবে
নাছোড় আমার জেদ তত দৃঢ় হবে

এক আকাশ কালো তারার নিচে
জেগে আছি শুকতারার দিকে চেয়ে

এক আকাশ কালো তারার নিচে
জেগে আছি শুকতারার দিকে চেয়ে

একটা দু’টো তিনটে নয়, শ’য়ে শ’য়ে বই,
হাজার হাজার বই ল‌ক্ষ ল‌ক্ষ সাদা পৃষ্ঠা,

একটা দু’টো তিনটে নয়, শ’য়ে শ’য়ে বই,
হাজার হাজার বই ল‌ক্ষ ল‌ক্ষ সাদা পৃষ্ঠা,

সে কারও হাত ধরে হাঁটতে চায়নি
মানুষটা অশ্বারোহীও নয়, আপাদমস্তক

সে কারও হাত ধরে হাঁটতে চায়নি
মানুষটা অশ্বারোহীও নয়, আপাদমস্তক

মেঘ ও আঁধির মাঝে
আলো হয়ে বসে আছে যে নির্ণয়

মেঘ ও আঁধির মাঝে
আলো হয়ে বসে আছে যে নির্ণয়

তোমার জন্য আসন পেতেছি ভুঁয়ে
তোমার জন্য ঘণ্টা ঘড়ির সাজ

তোমার জন্য আসন পেতেছি ভুঁয়ে
তোমার জন্য ঘণ্টা ঘড়ির সাজ

আমার ভেতর থেকে উঠে আসছে একটি নিঃশ্বাস।
এখন ভীষণ কোন সত্য নেই। আশেপাশে ধ্বংসস্তূপ আছে

আমার ভেতর থেকে উঠে আসছে একটি নিঃশ্বাস।
এখন ভীষণ কোন সত্য নেই। আশেপাশে ধ্বংসস্তূপ আছে

যা নিয়ে কেউ কখনো ভাবেনি
যা নিয়ে কেউ কখনো লেখেনি

যা নিয়ে কেউ কখনো ভাবেনি
যা নিয়ে কেউ কখনো লেখেনি

মাথার উপর ছায়া মেলে যেন
প্রাচীন বট—

মাথার উপর ছায়া মেলে যেন
প্রাচীন বট—

একটা ছেলে ছোট্টবেলায়
মুসলমানের তামাক খেলো,
আমেরিকায় সহজ করে

একটা ছেলে ছোট্টবেলায়
মুসলমানের তামাক খেলো,
আমেরিকায় সহজ করে

ধর্মের নামে গোঁড়ামিগুলোকে
করে দিয়ে ছারখার

ধর্মের নামে গোঁড়ামিগুলোকে
করে দিয়ে ছারখার

প্রিয় সন্ধ্যায় লেখা হল ল‌ক্ষতারার সন্ন্যাস চিঠি
ঠিকানাসব এক, সময় ও আঁধারে একক রঞ্জন

প্রিয় সন্ধ্যায় লেখা হল ল‌ক্ষতারার সন্ন্যাস চিঠি
ঠিকানাসব এক, সময় ও আঁধারে একক রঞ্জন

একটি কবিতা নির্মাণে ব্রতী হয়েছি যা হবে সত্য ও নিত্য।
এদিকে তুমি বললে—

একটি কবিতা নির্মাণে ব্রতী হয়েছি যা হবে সত্য ও নিত্য।
এদিকে তুমি বললে—

পাখির ডানা অঢেল স্বপ্ন দেখায়, ভেঙে যায়
বৃে‌ক্ষর মজ্জায় বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে

পাখির ডানা অঢেল স্বপ্ন দেখায়, ভেঙে যায়
বৃে‌ক্ষর মজ্জায় বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে

যখন ধুতির খুঁট দিয়ে তুমি মুছে দিতে পারো
যাবতীয় কান্না আর গ্লানি আর মিথ্যে অভিযোগ

যখন ধুতির খুঁট দিয়ে তুমি মুছে দিতে পারো
যাবতীয় কান্না আর গ্লানি আর মিথ্যে অভিযোগ

রাত্রির ভিতর কিছু ফুল ফুটে আছে, ফুল নাকি তারার পেখম
এই অন্ধকার, ঘন যামিনীর; মেঘচ্ছায়া নয়।

রাত্রির ভিতর কিছু ফুল ফুটে আছে, ফুল নাকি তারার পেখম
এই অন্ধকার, ঘন যামিনীর; মেঘচ্ছায়া নয়।

আসলে ঈশ্বরের বাসনা দিয়ে আদিখণ্ডের শুরু
যেখানে দর্পণে নিজের রূপে মোহিত স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ বাসুদেব

আসলে ঈশ্বরের বাসনা দিয়ে আদিখণ্ডের শুরু
যেখানে দর্পণে নিজের রূপে মোহিত স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ বাসুদেব

আমি অন্ধকারে পথ খুঁজতে থাকি
তিনি এসে যখন দাঁড়ান

আমি অন্ধকারে পথ খুঁজতে থাকি
তিনি এসে যখন দাঁড়ান

বাঁধন মজবুত করার জন্য শক্তহাতে গিঁট বেঁধেছিলাম।
অবাক হয়ে ল‌ক্ষ্য করলাম স্বার্থ, অবিশ্বাস, ঘৃণা,

বাঁধন মজবুত করার জন্য শক্তহাতে গিঁট বেঁধেছিলাম।
অবাক হয়ে ল‌ক্ষ্য করলাম স্বার্থ, অবিশ্বাস, ঘৃণা,

নতুন হোটেল, পাশে পুরনো মন্দির—
সামনে সমুদ্র, ওপরে আকাশ
—কখনো নতুন নয়,

নতুন হোটেল, পাশে পুরনো মন্দির—
সামনে সমুদ্র, ওপরে আকাশ
—কখনো নতুন নয়,

বেলা শুরুই হয়নি
এখনই সে আনন্দ গান শোনাতে চায়
আনন্দ গান হবে শেষবেলায়,

বেলা শুরুই হয়নি
এখনই সে আনন্দ গান শোনাতে চায়
আনন্দ গান হবে শেষবেলায়,

রামকৃষ্ণ বসে আছেন
দক্ষিণেশ্বরে
সন্ধ্যারাতের একটি পাখি
ঢুকল তাঁর ঘরে
বসল পাখি হাঁটুর

রামকৃষ্ণ বসে আছেন
দক্ষিণেশ্বরে
সন্ধ্যারাতের একটি পাখি
ঢুকল তাঁর ঘরে
বসল পাখি হাঁটুর

আজ ভোরে উঁচু বেদি আলো করে বসা মা-কে দেখেছি আনন্দে
একে অপরের সঙ্গে মৃদু কথাবার্তা হল শিশুর মতন

আজ ভোরে উঁচু বেদি আলো করে বসা মা-কে দেখেছি আনন্দে
একে অপরের সঙ্গে মৃদু কথাবার্তা হল শিশুর মতন

এ-কথা সবাই জানে, শত প্রতিরোধ ভেঙে
অবশেষে বাগানে ঢুকেছি,

এ-কথা সবাই জানে, শত প্রতিরোধ ভেঙে
অবশেষে বাগানে ঢুকেছি,

মন্দিরের সব দ্বার রুদ্ধ হয়ে আছে!
কেউ নেই মন্দিরের আর ততো কাছে,

মন্দিরের সব দ্বার রুদ্ধ হয়ে আছে!
কেউ নেই মন্দিরের আর ততো কাছে,

আমি আর কিছু লিখি না।
মনে হয় না, আমার আর কিছু লেখার আছে।

আমি আর কিছু লিখি না।
মনে হয় না, আমার আর কিছু লেখার আছে।